ক্ষমতা বদলের জন্য আর কত রক্তপাত?

কক্সবাজারবাণী ডেস্ক: একদিকে সমঝোতার চেষ্টা, অন্যদিকে হরতাল সব মিলিয়ে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ আর আতংকের শেষ নেই। বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ হরতালের কথা বললেও এই কর্মসূচীতে মানুষ মারা যাচ্ছে। আর এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকার দায়ী করছে বিরোধী দলকে, আর বিরোধী দল বলছে, সরকারই এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। আর সমঝোতার যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তা কি থেমে গেল তা নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন।
বিশেষ করে দুই নেত্রীর ফোনালাপ নিয়ে নানা আলোচনার অবসান ঘটিয়ে যখন ফোনালাপের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ হয়ে গেল বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তখন এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আরও বেড়ে গেল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও ফোনালাপ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন, দোষারোপ করছেন একে অন্যকে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ফোনালাপের বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমালোচনা করছেন। বলছেন তিনি অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ফোনালাপ নিয়ে অবশ্য বিরোধী দলীয় নেত্রী এখনও নিশ্চুপ রয়েছেন। ফোনালাপ প্রকাশের আইনগত দিক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এবং বিষয়টি কোর্ট পর্যšত্ম গড়িয়েছে।

ফোনালাপ নিয়ে যে হারে সমালোচনা হচ্ছে তাতে সমঝোতার উদ্যোগ থেমে গেছে বলে দৃশ্যত মনে হলেও কিছু আশার আলো উঁকি দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যাই ভাবুক না কেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ কিন্তু সংঘাতের পরিবর্তে সমঝোতা চায়। চায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দিন ধরে। সেই প্রচেষ্টায় কিছুটা অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এরই মধ্যে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে দেখা করে সমঝোতা আলোচনার প্র¯ত্মাব দিয়েছেন। তারা বলছেন, শীর্ষ দুই নেত্রী না হোক অšত্মত মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে এবং এই আলোচনাই একটি চূড়াšত্ম সমাধান এনে দিতে পারে। বিএনপি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথেও বৈঠক করে তাদের প্র¯ত্মাবের কথা জানাবেন। সরকারী পক্ষও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন বলেই দেশের মানুষের প্রত্যাশা। 

তবে আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় দুই নেত্রী এর আগেও আলোচনা করেছেন। কিন্তু সব আলোচনা সূচনা পর্যšত্মই থেকেছে। এই আলোচনা আর এগোয়নি। কোন সমাধানও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনাও হয়েছে অনেক। দুই নেত্রী শুধু দুই পক্ষের সংঘাত দূর করতেই আলোচনায় বসেননি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনও তারা বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকও এক বারের বেশি আর হয়নি। তখন স্বৈরাচারী শাসক ওই বৈঠক সম্পর্কে মšত্মব্য করেছিলেন জিরো প্লাস জিরো ইজ ইকুয়াল টু জিরো। 

মহাসচিব পর্যায়েও এর আগে বৈঠক হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুইয়া এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছিল। আর এই বৈঠক নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাও ছিল অনেক। সংখ্যায় কম হলেও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তখন এ নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করেছে। বিভিন্ন টক শো-তেও এ নিয়ে সরব আলোচনা হয়েছে। সব আলোচকই আশাবাদী ছিলেন একটি সমঝোতার ব্যাপারে। কিন্তু সেই সমঝোতা আর হয়নি। জাতি উপহার পেয়েছিল ওয়ান ইলেভেন। এই ওয়ান ইলেভেন নিয়ে এখন অনেকেই নানা কথা বললেও তখন কিন্তু ওয়ান ইলেভেনকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজনীতিক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও সাধারণ মানুষের বিরাট অংশ। ‘ওয়ান ইলেভেন দেশে সুশাসন কায়েম করেছে’ এ কথা বলার জন্য বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছিলেন। 

প্রায় দু’বছর ‘সুশাসন’এর পর নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলেও রাজনৈতিক সংঘাত কিন্তু থামেনি। হরতাল অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও মানুষকে অস্ব¯িত্মতে রেখেছে। স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারছে না মানুষ। এই সময়ে দুই নেত্রীর ফোনালাপ কিংবা মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা মানুষকে আশাবাদী করে তুলছে। এই আশার পাশাপাশি মানুষ মান্নান ভুইয়া ও আব্দুল জলিলের বৈঠকের কথাও ভুলে যায়নি। কয়েক দফা বৈঠক, বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিং-এ দুই পক্ষেরই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে আশার বাণীর পরও কোন সুফল আসেনি। এবারও দফায় দফায় আলোচনার পরও কোন সুফল পাওয়া যাবে না এটা কিন্তু দেশবাসীর প্রত্যাশা নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা দলীয় স্বার্থে নয় দেশবাসীর  কল্যানের কথা বিবেচনায় রেখে দুই নেতা প্রয়োজনে শীর্ষ পর্যায়ের আরও নেতা আšত্মরিকতার সাথে কথা বলবেন, খুঁজে বের করবেন একটি সমাধানের পথ। আর এই সমাধান যেন শুধু একটি নির্বাচনের জন্য না হয়, সমাধান হতে হবে স্থায়ী। দেশের মানুষ শুধু ক্ষমতা বদলের জন্য আর রক্ত দিতে চায় না।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন