হ্নীলা হাইস্কুলে শিক্ষক-কর্মচারীর সরকারী বেতন-বিলে স্বাক্ষর জালিয়াতি
জাফর আলম
হ্নীলা হাইস্কুলের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমপির নির্দেশক্রমে বিশেষ কমিটি গঠন করার পরও কোন কূল-কিনারা না হওয়ায় বিবাদমান দু‘গ্র“পের রশি টানাটানিতে
১৩ শিক্ষক/কর্মচারীর ৮ মাসের সাড়ে ৫ লাখ টাকার বেতন-বিলে জালিয়াতি করায় আবারো বেতন-ভাতা ফেরত যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে-উপজেলার হ্নীলা হাই স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলা, বহিস্কার-পাল্টা বহিস্কারের ঘটনায় সৃষ্ট জটিলতায় ওই স্কুলে কর্মরত ১৩ এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ৮ মাস ধরে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা সরকারী বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ওই শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবন-যাপন করায় তাদের বেতন-ভাতা উত্তোলনপূর্বক জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বিগত সভায় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া, ভাইস-চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুচ বাঙ্গালী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাইফুল ইসলামের সমন্বয়ে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক সাংসদ ছাড়া উপ-কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ ওই স্কুলের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিকদার, প্রধান শিক্ষক মোক্তার আহমদ, সহ-প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবদুস সালাম, শিক্ষক কাউন্সিল সচিব মোস্তফা কামালসহ অপরাপর শিক্ষকবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসে সর্বসম্মতভাবে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে প্রধান শিক্ষক ৮ মাসের বেতন বিল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে তুলে দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট হস্তান্তর করেন।এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওই বেতন-বিল তাঁর অফিসে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে মোটাঙ্কের বিনিময়ে সভাপতির সাথে যোগসাজস করে ওই বিল সহ-প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন। এই সুযোগে সহ-প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবদুস সালাম নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের প্রচলিত বিধিবিধান ও ওই বোর্ডের আপীল এন্ড আর্বিট্রেশন কমিটি এবং উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রতারণার মাধ্যমে ওই বেতন-বিলে কাটাচেঁড়া, স্বাক্ষর নকল, ওভার রাইটিং ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর-সীল মুছে নিজের স্বাক্ষর-সীল দিয়ে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এছাড়া শিক্ষক হাজিরা রেজিস্টার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হাজিরা ফরমেটে সহ-প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস ধরে অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা ফরমট থেকে অনুপস্থিতি মার্ক মুছে স্বাক্ষর দিয়ে তা ফিল-আপ করে। পরবর্তীতে বেতন উত্তোলণের জন্য তা স্থানীয় জনতা ব্যাংক ম্যানেজার শোয়েবুল ইসলামের হাতে জমা দেন। ম্যানেজার ওই বিল পেয়ে তাতে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির ঘটনা দেখে তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিগোচর করলে সর্বস্থরে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
এই ব্যাপারে জনতা ব্যাংক ম্যানেজার শোয়েবুল ইসলাম জানান- প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে আমরা বিল প্রদান করে থাকি। কিন্তু হ্নীলা হাইস্কুলের বিলে প্রধান শিক্ষকের স্থলে সাদা কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সন্দেহ হওয়ায় বিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন- প্রধান শিক্ষকের জমা দেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীর বিল আমার হাতে জমা রয়েছে। ঐ স্কুলের সভাপতি-সহকারী প্রধান শিক্ষক কোথা হতে এই বিল জমা দিয়েছে তা আমি জানিনা। এরফলে আবারো হ্নীলা হাইস্কুলের ভূক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিল ফেরত যাওয়ার আশংকা দেখা য়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন