খাস নিউজ: পণ্যের গুণগত মান ঠিক না রাখায় বিভিন্ন সময় সনদ বাতিলসহ জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে প্রাণ গ্রুপ। তার পরও প্রাণকে রক্ষায় কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। কোম্পানি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দিয়ে আদালতকে সহায়তা করছে না সংস্থাটি। রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নথি কিংবা পরীক্ষাগারের ফল (রুলের জবাব) চাইলে স্ববিরোধী তথ্য দেয় বিএসটিআই।
রুলের জবাবে ২০১০ সালে পরিদর্শনের ভিত্তিতে তৈরি একটি প্রতিবেদন গত বছর আদালতে দাখিল করে বিএসটিআই। প্রাণের বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ড্রিংকসে প্রয়োজন অনুপাতে উপাদান না থাকায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরেরই আরেকটি পরীক্ষা প্রতিবেদন জবাবের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, প্রাণের কমলার ড্রিংকসে প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। বিএসটিআইয়ের স্ববিরোধী এ জবাবের পর চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি রিট আবেদনটি ফেরত পাঠান হাইকোর্ট।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী রিট আবেদনটি দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিভিন্ন ফলের জুস উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি বন্ধে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, খাদ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
প্রথমে এফিডেভিটের মাধ্যমে একবার জবাব দেয়ার পর গত বছরের ৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি সম্পূরক জবাব দেয় বিএসটিআই। আদালতে দাখিল করা সম্পূরক জবাবে বিএসটিআই জানায়, ফ্রুট ড্রিংকসের জন্য বিএসটিআই সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়। তবু প্রাণ বিএসটিআই থেকে তাদের ফ্রুট ড্রিংকসের জন্য সার্টিফিকেট গ্রহণ করে।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, রুলটি শুনানির জন্য শিগগিরই হাইকোর্টের কোনো একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে। মানহীন ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই জনস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখে বিএসটিআই। সংস্থাটির স্ববিরোধী এ কর্মকাণ্ডের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা পেতে হয়।
লাইসেন্স বাতিলের পর একই বছর করা পরীক্ষার ভিত্তিতে সব উপাদান ঠিক আছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল স্ববিরোধিতা কিনা, জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের তত্কালীন মহাপরিচালক এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘আমি এখন বিএসটিআই থেকে অবসর নিয়েছি। তাই এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’ বর্তমান মহাপরিচালক ইকরামুল হক বলেন, ‘আমি নতুন কার্যভার গ্রহণ করেছি। আমাকে জানতে হবে ঘটনাগুলো কী হয়েছে। তার আগে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
আদালতে রিট আবেদনের সঙ্গে ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রাণ ব্র্যান্ডের ফ্রুট ড্রিংকস ভেজাল প্রমাণ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে জানতে পেরে অনেক দোকান মালিক ওই সব পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখলেও এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি তাদের প্রাণ ব্র্যান্ডের ভেজাল ফ্রুট ড্রিংকস বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’
উল্লেখ্য, প্রাণ গ্রুপের রফতানি খাদ্যপণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিস ভাইরাস ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় গত বছরের জুলাইয়ে কানাডা থেকে তা ফেরত আসে। গত ২৮ মে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামে কাঁচা আমে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন মেশাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত হন প্রাণের দুই কর্মকর্তা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জেলায়ও প্রাণের জুসে ফরমালিন পাওয়া যায়। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রাণের গুঁড়ো হলুদে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি ধরা পড়লে পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরে বাংলাদেশ থেকেও প্রাণের গুঁড়ো হলুদ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা জানানো হয়। চলতি মাসে পণ্যটির লাইসেন্স বাতিল করে বিএসটিআই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন