বাংলাদেশের স্বাধীনতা ১৯৭৪ সালে!

ডেস্ক রিপোর্ট
পৃথিবীর বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতির একটা অপচেষ্টা চলে আসছে। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করাই এসব অপচেষ্টার প্রধান উদ্দেশ্যে।
তবে অতীতে বিভিন্নভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাঙালিদের আÍত্যাগকে হেয় করা হলেও, স্বয়ং পাকিস্তানিরাও কখনও দাবি করেনি যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি,  এদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭৪ সালে! অথচ এমন অবাস্তব ও উদ্ভট তথ্যই ছাপা হয়েছে জাতিসংঘের সহায়তায় প্রকাশিত ‘এনসাইক্লোপেডিয়া অব হিউম্যান রাইটস’ নামের একটি গ্রন্থে। এডওয়ার্ড লওসন কর্তৃক লিখিত গ্রন্থটির মুখবন্ধ লিখেছেন জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার হোসে আইলা লাসো। বইটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক টেইলার অ্যান্ড ফ্রান্সিস। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে লিখিত অংশে সুকৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাচ্ছিল্য করা হয়েছে এদেশের মানুষের আÍত্যাগকে, হেয় করা হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্বকে।
বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে হেয় করে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভেঙে দিয়ে গৃহযুদ্ধ থেকে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মৃত্যুকে নাকচ করে নিহতের সংখ্যা মাত্র ১০ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি কোথাও মুক্তি বাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের কথা উল্লেখ না করে বলা হয়েছে ভারতীয় সেনারা এসে পাক হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে দেয়!
আরও উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অল্প সময় পরই মেহেরপুরের মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, তা ইতিহাস স্বীকৃত। পাশাপাশি ওই পৃষ্ঠায় ৭৫’র এর পট পরিবর্তনের সুবিধাভোগী খন্দকার মোশতাক আহমেদকে দেখানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে!
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত একটি বইয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য সন্নিবেশ করেন, তাহলে তাদের উচিত তথ্য সংশোধন করে প্রকৃত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা। 
অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘে এর প্রতিবাদ জানানো। যদি এই ইতিহাস বিকৃতির আশু প্রতিকার না হয়, তবে ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশের জন্য অসম্মান ও মর্যাদাহানির একটি উদাহরণ হিসেবেই কালিমালিপ্ত হয়ে থাকবে।
বি.দ্র. বিষয়টি প্রথম মিডিয়ার গোচরে আনেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক জনাব ফরিদ আহমেদ।  এজন্য অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ আন্তরিক প্রশংসার ও ধন্যবাদ প্রাপক। তার মতো দেশপ্রেমিক বাঙালিরা এখনও সচেতন  আছেন বলেই দেশের ইতিহাস বিকৃতির পর্দা উন্মোচিত হয়। ফাঁস হয়ে যায় ষড়যন্ত্রকারীদের চেহারা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন