নারীকে পণ্য করে উপস্থাপনে যৌন হয়রানি বাড়ছে


ডেস্ক রিপোর্ট : 
চীনে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে চলায় শিক্ষকদের পেশাদারিত্বের নৈতিকতা নিয়ে চারিদিকে উত্তপ্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। চায়না পিপলস ডেইলিতে চীনা সমাজের বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যকেই শুধু বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে চলার জন্য দায়ী করলে চলবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

ওই দৈনিকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, শুধু সমাজের বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীই নারীর ওপর যৌন হয়রানির প্রধানতম কারণ নয়। বরং নারীকে পণ্য করে বাজারে তোলার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তাও নারীর ওপর যৌন হয়রানি উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।

এতে বলা হয়, নারীর অধিকার হরণ নারীর ওপর যৌন হয়রানির মূলেই নিহিত। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে ব্যাবহারের প্রভাব, ইন্টারনেট এবং গণমাধ্যমে নারীকে যৌন আবেদনময়ী ভঙ্গিতে উপস্থাপনও নারীদের ওপর বেড়ে চলা যৌন হয়রানির পেছনে দায়ী।

চীনা সমাজ এখনো পুরুষতান্ত্রিকই রয়ে গেছে এবং এটাই প্রধানত দেশটির বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ। চীনে এখনো দম্পতিরা ছেলে শিশুর আশা করে বেশি। সেখানে নারীরা এখনো পুরুষের চেয়ে হীন হিসেবেই গণ্য হয়। তার ওপর আছে আবার জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির খড়গ।

এর ফলে বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশে নারী-পুরুষের সংখ্যা মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে চীনও তার মধ্যে একটি। এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে চীনে ৩ থেকে ৪ কোটি পুরুষ পাত্রীর অভাবে অবিবাহিতই থেকে যাবেন যা দেশটিতে মারাত্মক সামাজিক গোলযোগও সৃষ্টি করতে পারে।

চীনে ধনী, রাজনৈতিকভাবে সফল, বিখ্যাত এবং উচ্চ শিক্ষিতরাই বিয়ের বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয়। আর প্রান্তিক পর্যায়ের বিশেষত গ্রামীণ এবং অনুন্নত এলাকার পুরুষরা বিয়ের বাজারে একেবারেই পিছিয়ে। ফলে অসচ্ছল পুরুষদের জন্য একজন জীবন সঙ্গিনী পাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে যা মারাত্মক সামজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

আয়-রোজগার, শ্রমের বিভাজন, সম্পদের বন্টন এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের দিক থেকে চীনা সমাজের নারী ও পুরুষের মধ্যে এখনো ব্যাপক বৈষম্য রয়ে গেছে। বাণিজ্যিকীকরণ এবং বিজ্ঞাপন ও ইভেন্টে নারীকে ক্রমাগত একটি ভোগ্য পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের ফলে পুরুষরা নারীকে তাদের লালসা মেটানোর সবচেয়ে নমনীয় শিকার হিসেবে ভাবছে।

লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে নারীদেরকে তাদের নায্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে মানুষকে এখনো অনেক লম্বা পথই পাড়ি দিতে হবে।

অন্যদিকে রাস্তাঘাট বা যানবাহনে চলাফেরার সময় যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে নারীদের স্বল্প বসন বিশেষ করে মিনি স্কার্ট ও উত্তেজক প্যান্ট পরার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছে বেইজিং পুলিশ।

চীনে গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বেইজিং পুলিশ নারীদের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘চায়না ডেইলি’তে বলা হয়, ‘গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নারীদের মিনি স্কার্ট ও উত্তেজক প্যান্ট পরা উচিত নয়। আর যদি তারা যৌন হয়রানির শিকার হন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে জানানো উচিত।’

এতে বলা হয়, ‘মুঠোফোনে কেউ ছবি তুলে নেওয়ার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে বাসের উঁচু আসনে না বসে নারীদের নিচের ধাপের আসনে বসা উচিত। তা ছাড়া বাসের ভেতর নারীদের ব্যাগ, ম্যাগাজিন বা সংবাদপত্র দিয়ে শরীর অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখা উচিত।’

এ ধরনের ঘটনা যে কেউ ঘটাক না কেন, ধরা পড়লে তাকে ১৫ দিনের কারাদ- দেওয়া হবে বলে পুলিশের সতর্ক বার্তায় বলা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা জিং উই বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নারীদের সচেতনতা বাড়াতেই এই সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন