আদম পাচার থামানো যাচ্ছেনা : জড়িতরা কারা?

সিবিএন: একের পর এক ট্রলার ডুবির ঘটনায় প্রাণহানির পর কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকুল থেকে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাত্রা থেমে নেই। সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী দালাল চক্র নানা কৌশলে পুরোদমে এ মানব পাচার অব্যাহত রেখেছে। জানা যায়,সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া মানব পাচারকালে গত ৮ জুলাই ২ শতাধিক যাত্রীসহ ট্রলার উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে
৪৯ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় এ মামলা ২টি দায়ের করা হয়। তম্মধ্যে রোহিঙ্গা ও অপরটি মানবপাচার। টেকনাফ থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌস জানান কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা ২টির একটিতে ৩৮ দালাল এবং অপরটিতে ১১ দালালকে আসামি করা হয়েছে। জানা যায় গত ৮ জুলাই সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওযার সময় ২২০ জন যাত্রীসহ সেন্টমার্টিনের পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে একটি ট্রলার আটক করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। সেখানে ৬ জন মিয়ানমারের দালাল ছিল। আটকযাত্রীরা ঢাকা, নরসিংদী, বরিশাল,সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, খুলনা, যশোর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারের জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। গত ৯ জুলাই এসব যাত্রীদের টেকনাফ থানায় আনা হয়। মালয়েশিয়াগামী কক্সবাজারের কুতুবদিয়াপাড়ার জালাল আহমদ বলেন, গত শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলেও পথিমধ্যে মহেশখালী, উখিয়া, বাহারছড়া, টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে আরও দেড় শতাধিক লোক বোটে তোলা হয়। গত সোমবার ভোররাতে ট্রলারের চালক ও দালালরা মিলে সাগর উত্তাল থাকায় মিয়ানমারে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা সবাই মিলে মাঝিসহ ৬ দালালকে রশি দিয়ে বেধে ফেলি এবং চলন্ত বোট নিয়ে সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি সাগরে দিকবেদিক ঘুরতে থাকি। পরে জ্বালানি তেল শেষ হয়ে যাওয়াই এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে কয়েকটি মাছ ধরার নৌকা দেখতে পেয়ে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে কোস্টগার্ড সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করে সেন্টমার্টিনের কূলে নিয়ে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৩ শতাধিক দালাল মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে ৮ জুলাই উদ্ধার করা দালাল চক্রের নেতৃত্বে দিয়েছেন মহেশখালীর ইয়াছিন, জাবের, চকরিয়ার রফিকুল ইসলাম, মাইনুল হক, সেন্টমার্টিনের কোস্টগার্ড এলাকার আবুল হাশিম অবকাশ এলাকার ফয়েজ উল্লাহ, আজিম আলী, ইউনুছ, ইসমাইল, কেফায়েত উল্লাহ মাঝি, আবু তাহের, নজির আহমদ, বাজারপাড়ার মোস্তাক, কামাল উদ্দিন, দিল মোহাম্মদ মাঝি, ইব্রাহিম, ডেইলপাড়ার হাফেজ উল্লাহ, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রিপাড়ার আবদুস সালাম, ডাংগারপাড়ার দেলোয়ার, দলিলুর রহমান, নুর আলম, হাসান, রশিদ উল্লাহ মাঝি, জাফর আহমদ, শরীফ হোছেন, আমির হোসেন, নুর হোসেন, কবির আহমদ, বাজার পাড়ার ধলু হোছন, জিয়াবুল হক ভুলাইয়া, ইসমাইল, গোলাম হোছেন, কালা মিয়া, মুহিবুল্লাহ মাঝি, হাবিবুর রহমান। এছাড়া মাঝের পাড়ার জায়েতুল্লাহ, আবদু শুক্কুর, শফি বাইন্যা, আবুল কালাম, সৈয়দ উল্লাহ, আবদুল গফুর, মৌলভী ইউনুছ, মৌলভী আবদুল্লাহ, নুর আলম, বার্মাইয়া মৌলভী কলিম উল্লাহ, আবুল হোসেন মাঝি, ফিরোজা বেগম, দিলদার বেগম, হাফেজ উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, ফিরোজ, দেলোয়ার, লালু ফকির, তাজ উদ্দিন মাঝি, পশ্চিম পাড়ার ইলিয়াছ, শাহআলম, নুরু মিয়া, কোণাপাড়ার ইয়াহিয়া, আমিন, সোনা মিয়া, মুজিবুল্লাহ. দক্ষিণপাড়ার নুর হাকিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ, আমিন উল্লাহ ভুলু, আবুল কালাম ভুলু, শফিক, জাফর আলম, গোলাপাড়ার শমশু আলম, কবির আহমদ কবিরা, হারিয়াখালীর জাকের আলী, কবির বলির ছেলে জাফর, কালা জোবাইর, হাসান, সিরাজ মিয়া, কাটা বনিয়ার মৌলভী ছালামত উল্লাহ, কোয়াইনছড়ী পাড়ার এজাহার মিয়া, মোহাম্মদ, হাদুরছড়া আবদুল গফুর, মুন্ডারডেইল এলাকার হোছন কালু, নুরুল আলম, হেলাল পুতু, রশিদ মিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের একটি পাচারকারী চক্র এক শ্রেনীর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় পাচার অব্যাহত রেখেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। শতাধিক ব্যক্তির নেতৃত্বে দালাল চক্রের মূল হোতা সাবরাং সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস, সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার নজির আহমদ, শাহপরীরদ্বীপের বাজার পাড়ার ধুলু হোসেন, চকরিয়ার মৃত মোজাহের কোম্পানির ছেলে জাফর আলম কোম্পানি, সেন্টমার্টিনের আবু তালেব, মুন্ডার ডেইল এলাকার আক্তার ফারুক মার্ডারার আবদুর রহমান। মানবপাচারে ব্যবহৃত বোটগুলোর মাঝির কাজ করেন সাধারণত ক্যাম্পে থাকা ও অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের মাঝিরা। অভিযোগ রয়েছে, মানব পাচারকারীদের সামনে প্রশাসন অসহায় রয়েছে। স্থানীয় ক্ষমতাধর নেতারা ও প্রশাসনের একটি চক্র এ পাচারে জড়িত রয়েছে। ফলে কোনো দালাল আটক হলেই অন্যান্য সুপারিশের সঙ্গে পুলিশ নিজেও সুপারিশ করে থাকে। এব্যাপারে টেকনাফ ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাহিদ হাসান জানান, বিচার কার্যক্রম যর্থাথ না হওয়া এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের কারণে মালয়েশিয়া মানবপাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, ২০১২ ও ১৩ সালে বঙ্গোপসাগরে পৃথক ৩টি ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২৭০ যাত্রীর মধ্যে ৮৬ জনকে উদ্ধার করে নৌ-বাহিনী, কোষ্টগার্ড, বিজিবি ও স্থানীয় জেলেরা। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় ৬ জনের মৃতদেহ। বাকী ১৭৮ জনের আর কোন খোঁজ মেলেনি।