মিসেস ইউনিভার্সে তাহমিনাকে ভোট দিন


ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বনন্দিত মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ব্যারিস্টার তাহমিনা কবির। এ প্রতিযোগিতাটি মিস ওয়ার্ল্ড কিংবা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মতো নয়। মেধা এবং সৌন্দর্যের সংমিশ্রণের এ প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্যের বিষয়টি আসে সবার পরে।

মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাটি মূলত একটি ফোরাম, যেটির এ বছরের আলোচ্য বিষয় ‘নো টু ডমেসটিক ভায়োলেন্স’ (No to domestic violence)। এ প্রতিযোগিতায় যেহেতু বিবাহিত নারীরা অংশ নেন- তাই উচ্চতা, ফিগার কিংবা ওজন নয়, বরং প্রতিযোগীর বিনয়, শালীনতাবোধকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নারীই উকিল, শিক্ষক, বিজ্ঞানী কিংবা ব্যবসায়ী।

ব্যারিস্টার তাহমিনা কবির একজন আদর্শ মা, বিজ্ঞ সমাজকর্মী ও মেধাবী আইনজীবী। ‘হিউম্যান রাইট ফর দ্য ডিস্ট্রেস অ্যান্ড ভিকটিম অব ডমেস্টিক ভায়োলেন্স’ শীর্ষক কাজে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর রেখেছেন তাহমিনা। মূলত এজন্যই তিনি মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়েছেন।

দেশের বাইরে থেকেও বাংলাদেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাহমিনা। সম্প্রতি তিনি তার ব্যক্তিগত এবং এ প্রতিযোগিতা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সে বিষয়গুলো নিয়েই স্বপ্নযাত্রার এ আয়োজন।

দেশের সীমানা পেরিয়ে লন্ডন কেন গেলেন?

লন্ডন এসেছি পড়াশোনা করতে। সেটাও ২০০৩ সালের দিকে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হবো। সে স্বপ্নের টানেই চলে এসেছি। লন্ডন থেকেই ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি।

বাংলাদেশের সঙ্গে ওখানকার পড়াশোনার পার্থক্যটা কেমন ছিল?

প্রথম এসেই হিমশিম খেতে হয়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিশেষ করে বাংলামাধ্যম থেকে গিয়ে ইংলিশমাধ্যমে পড়তে একটু কষ্ট হবেই। বড় পার্থক্যটা এখানেই। আরেকটা বিষয় হলো, এখানকার পড়াশোনা পুরো ব্যবহারিক নির্ভর। হাতে কলমে শিক্ষা যাকে বলে। শুধু বই পড়লেই হয় না। কাজটাও শিখতে হয়।

বাংলাদেশও এখন ধীরে ধীরে এদিকে এগুচ্ছে। সম্প্রতি সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াশোনা শুরু হয়েছে। এটা বাংলাদেশকে অনেক বদলে দিবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতে যারা বিদেশে পড়তে আসবে তাদের বিপাকে পড়তে হবে না।

সম্প্রতি মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আপনি আলোচনায় এসেছেন। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের গল্পটি বলুন।

গল্পটা খুব মজার। আমার ছোট বোনের সঙ্গে একদিন সুস্মিতা সেনের বেশকিছু ইন্টারভিউ দেখছিলাম। তো, ওই ইন্টারভিউয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথাও বলছিল। আমি তখন দেখলাম সুস্মিতা একমাত্র সেলিব্রিটি যে আগে থেকেই শিশুদের জন্য কাজ করতো এবং এখনও করে যাচ্ছে।

যাইহোক। এ বিষয়টি আমার খুব পছন্দ হয়। আমরা সবাই শুধু একজন মানুষের সৌন্দর্য দেখি তার চেহারায়। কিন্তু একজন মানুষের মনটাও সুন্দর হতে পারে, তার কাজগুলোর ভেতরও পৃথিবীর সব সুন্দর লুকিয়ে থাকতে পারে। একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে আমরা খুব কম ভাবি। এসব নিয়েও অনেক ভাবতাম। সত্যি কথা বলতে কি, এমন সুন্দরী প্রতিযোগিতা আমার কখনও ভালো লাগতো না।

একদিন অনলাইনে মিসেস ইউনিভার্সের এ বিষয়টি চোখে পড়লো। চোখ বুলাতে গিয়ে জানতে পারলাম এ প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্য বড় বিষয় না। এখানে মেধা এবং কাজটাই বড়। এটি দেখার পর থেকে আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। ভালো মতো পড়লাম। দেখলাম, এটা একটা ফোরাম। যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নেয় এবং নারী ও শিশু বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আলোচনা করেন। শুধু আলোচনা নয়, যারা সক্রিয়ভাবে নারী-শিশু সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তাদেরও এখানে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই ফোরামের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান বের হয়ে আসে। এটিই হলো এ প্রতিযোগিতার মূল অংশ।

এই ফোরাম থেকে প্রতিবছর প্রতিযোগিতা হচ্ছে শুধুমাত্র যারা নারী-শিশুদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তাদের নিয়ে। তবে বিশেষভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় গত দুবছর ধরে আইনজীবীরা বিজয়ী হয়ে আসছে। অন্যদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সফল নারী ব্যবসায়ী। এভাবেই আগ্রহ পেয়েই আমি এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেই।

এখানে সিলেকশন প্রসেসটা কিভাবে হয়?

সাধারণত জাতীয়ভাবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এজন্য মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় আমি ব্যক্তিগতভাবেই নিবন্ধন করি। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রধান শর্ত হলো, জনসাধারণের জন্য কাজ করতে হবে। অর্থাৎ যেটাকে আমরা বলি ‘চ্যারিটেবল কাজ’। নিবন্ধন করার কয়েক দিনের মধ্যেই তারা আমার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি ইমেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।
আগস্ট মাসের ৪ তারিখ থেকে আমাদের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ১১ আগস্ট মঞ্চের ফাইনাল। কিন্তু ৪ আগস্ট প্লেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অজান্তে মার্কিং শুরু হবে। এবিষয়টি আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জের মনে হচ্ছে।

আমাদের ব্যবহার, অন্যদের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা, যে কোনো কাজকে মুহূর্তে সবার সঙ্গে মিশে করে ফেলার ক্ষমতা দেখা হবে। আমরা বুঝতেও পারবো না কিভাবে আমাদের খেয়াল করছে। আটদিন ধরে নানান আয়োজনের মধ্যেই হবে চূড়ান্ত পর্ব।

তবে এ প্রতিযোগিতার মূল অংশ হলো ফোরাম আলোচনা। যেখানে প্রতিযোগীরা নিজ নিজ দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। এবং সবশেষে সমস্যার সমাধান মিডিয়ার সামনে তুলে ধরবেন। এবারের আলোচনার বিষয় ‘নো টু ডমেস্টিক ভায়োল্যান্স’।

অংশ নেওয়ার পর থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এ বিষয়টি আপনার পরিবার কেমন দেখছে?

আসলে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর থেকেই সমালোচিত ও আলোচিত হচ্ছি। আত্মীয়-স্বজন বিষয়টিকে শুরুতে সহজভাবে নেয়নি। এটা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি। তবে আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এটা সৌন্দর্য মানে মনের, কাজের সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। বোঝাতে সফলও হয়েছি।

এরপর থেকে অনেকেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন সবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। আর আমার স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেই হয়। তিনি আমাকে অসম্ভবরকমভাবে সহযোগিতা করেই গেছেন। এখনও উৎসাহ দিচ্ছেন।

আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। এটি আমার জন্য বড় পাওয়া। আমার তিনজন সন্তান আছে। বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর, মেঝ ছেলের বয়স ৭ এবং সবার ছোট ছেলের বয়স ১৮ মাস। তিনজন সন্তান নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত একজন বাঙালি মেয়ে হিসেবে কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটা সহজ হয়ে যায় যখন পাশের মানুষটি সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন। এজন্যই আমার স্বামী আমার বন্ধুর চেয়েও বেশি।

আন্তর্জাতিক মানের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে অনেকটা পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়।এমনটা হওয়ার কারণ কি?

এমনটা হওয়ার পেছনে ধর্মীয় অনুভূতি একটা বড় বাধা। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মেয়েদের এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিতে চায় না। তবুও আমাদের দেশে অনেক প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

গোড়ামী ধারণা থেকে আস্তে আস্তে আমরা বের হয়ে আসছি। বাংলাদেশ এমন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে ঠিকই। কিন্তু থেমে নেই। একটু একটু করে আমরা এগুচ্ছি।

বাংলাদেশের মেয়েরা যদি এ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়, তবে আপনার নির্দেশনা কি হবে?

বাংলাদেশের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। এধরনের প্রতিযোগিতায় যাওয়া উচিত। তবে নাম যশের উদ্দেশ্যে নয়। মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। নারীদের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা উচিত।

আমার নির্দেশনা দেওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রগতিশীল হয়ে উঠছে। তারা দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তাদের পথ তারাই তৈরি করে নিতে পারবে। আমি শুধু বলবো- এ পৃথিবীতে কিছু মানুষ জন্মায় সমালোচনা করার জন্য। সেসব সমালোচকদের কথায় যেন থমকে না যায়। দুরন্ত গতি যেন একটুও থেমে না যায়। আমার পরামর্শ এতটুকুই।

(প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে এখন প্রয়োজন ভোট। ১১ আগষ্ট পর্যন্ত তাকে http://www.noscara.com/mrsuniverse/contest/2013/#vote এই লিংকে এক আইপি অ্যাড্রেস থেকে প্রতিদিন একটি করে ভোট দেওয়া যাবে। তাহমিনা কবিরের ছবির উপর লেখা রয়েছে মিসেস বাংলাদেশ। আর তাকে ভোট দিতে তার ছবির নিচে ভোট-এ ক্লিক করলেই হবে। আপনি চাইলে ভোট দিতে পারেন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেও।)