উখিয়া-টেকনাফের উপকূলে আদম পাচার থামছে না

উখিয়া প্রতিনিধি: মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ধর-পাকড়ের পরও থামছেনা মালয়েশিয়া আদম পাচার। একটি সিন্ডিকেট হরদম চালিয়েছে যাচ্ছে পাচার কার্যক্রম। আর ওই পাচারকারী সিন্ডিকেট উখিয়া-টেকনাফের উপকুলীয় সাগর পথকে আদম পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করছে। আদম পাচারকারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে ট্রলার যোগে মালয়েশিয়ায় প্রতিনিয়ত আদম পাচার অব্যাহত রেখেছে। তাদের নেটওয়ার্ক টেকনাফ-তেতুলীয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। দালালেরা মুঠোফোনের মাধ্যমে মালয়েশিয়াগামীদের উপকূলীয় এলাকায় জড়ো করে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে রওনা করে দেয়। কিছু অসাধু ব্যক্তি মালয়েশিয়ায় আদম পাচার অব্যাহত রাখলেও পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাচারকারীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাচারকারীরা টেকনাফ ও উখিয়ার ১৫/২০টি পয়েন্ট দিয়ে আদম পাচারের মতো অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ উপেজেলার শাহ্পরীর দ্বীপের বাজার পাড়া, মিস্ত্রি পাড়া, ভোলার মুখ, দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া, পশ্চিম পাড়া, ডাঙ্গা পাড়া, সাবরাংর এর কাটা বনিয়া, খুরমার মুখ, টেকনাফ সদরের মহেশখালী পাড়া, লম্বরী পাড়া, মিঠা ছড়ি পাড়া, বাহার ছড়া, শীল খালী ও জাহাজ পুরা, উখিয়ার চোয়াংখালী, মনখালী, চেপটখালী, নিদানিয়া পাটুয়ার টেক, রেজুর ব্রীজ, হিমছড়ি এলাকা দিয়ে পাচারকারীরা প্রতিনিয়ত সিন্ডিকেট করে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে ফিশিং ট্রলারের মাঝি মাল্লা সাজিয়ে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় আদম পাচার করে যাচ্ছে। যার ফলে এক সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষ যাত্রা করলেও তা আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী অগোচরেই থেকে যায়।

সম্প্রতি উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা ও চোরাচালান সভায় ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের যোগসাজসে মালয়েশিয়ায় আদম পাচার হয় বলে অভিযোগ করেন, জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী।

তিনি বলেন, পুলিশ যদি আদম পাচারকারীদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে তাহলেও আদম পাচার রুখঁবে কে। পুলিশি সহযোগিতা পাওয়ার কারনে সাধারণ মানুষ দালালের খপ্পড়ে পড়ে সমুদ্র পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সোনার হরিণ ধরার জন্য মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের শামশুল আলম জিহাদী, হেলাল, হিরু, মোহাম্মদ হোছন, জিয়াবুল হক, ছৈয়দ কুলু, সাহাব মিয়া, নজির আহাম্মদ, মোক্তার মাঝি, আব্দু শুক্কুর, উখিয়ার মাদার বনিয়া গ্রামের আব্দু জলিল, চোয়াংখালী গ্রামের সলিমুল্লাহ, জাহেদ মেম্বার, মোজাম্মেল হক, নুরুল আবছার, তাবাইয়া, শামশুল আলম, কালা জমির, এরশাদুল্লাহসহ শতাধিক দালাল মালেশিয়ায় আদাম পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফরহাদ জানান, ৮০ জনের বেশি চিহ্নিত দালালের বিরুদ্ধে থানায় অর্ধশতাধিক মানব পাচারের মামলা রয়েছে। আসামীরা আত্মগোপনে থাকায় তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উখিয়ার ইনানীর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদ মিয়া জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া অবস্থায় উপকূলীয় এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৫শতাধিক লোকজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী পাড়া গ্রামের মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ইউসুফ আলীর ছেলে আবু ছিদ্দিক (২০) জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ শ্রমিকদের ধরপাকড় শুরু করায় শত শত বাঙ্গালি শ্রমিকরা বাসা বাড়ীতে থাকতে না পেরে বন-জঙ্গলে গিয়ে অবস্থান করছে। কিন্তু তবুও প্রতিনিয়ত সাগর পথে লোকজন মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে বলে সে জানিয়েছে।

উখিয়া উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব দীনেশ বড়ুয়া জানান, পশ্চিম রতœা গ্রামের মহেন্দ্র বড়–য়ার ছেলে সুগত বড়–য়া ও রাজাপালং কাশিয়ারবিল গ্রামের শাবুল দে’র ছেলে রামধন দে সপ্তাহ খানেক আগে মালয়েশিয়ায় মারা গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন