১০ ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার

বাংলানিউজ: সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে সাড়ে তিন শতাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছেন।  আর এসব দালালের নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ১০ ব্যক্তি। থাইল্যান্ডভিত্তিক যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রভাবশালী এ ১০ জনের দেওয়া সময় অনুযায়ী স্থানীয় দালালরা মালয়েশিয়াগামীদের জাহাজে পৌঁছে দিচ্ছে। আর এ কাজে
সরাসরি জড়িত রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। অনুসন্ধানে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার উপকূলের ৩৯টি পয়েন্টকে ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার অব্যাহত রেখেছেন দালালরা। এসব পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পুলিশের তালিকা মতে পয়েন্টগুলো হলো, টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, বড় ডেইল, জাহাজপুরা, রাজারছড়া, হাবিরছড়া, লেংগুরবিল, লম্বরী, মুন্ডার ডেইল, বাহারছড়া, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, শাহপরীরদ্বীপ, গোলাচর, দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিম পাড়া, সেন্টমার্টিন, উখিয়ার মনখালী, সোনাপাড়া, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, নাজিরারটেক, কস্তুরাঘাট, মহেশখালীর ঘড়িভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, পেকুয়ার মগনামা ঘাট, চকরিয়ার বদরখালী ও মাতামুহুরী।
সংশ্লিষ্ট দালালরা বলেন, জনপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া লোক পাঠানো হয়ে থাকে। একসময় ট্রলারযোগে সরাসরি থাইল্যান্ড হয়ে এসব লোক পাঠানো হলেও বর্তমানে অন্যভাবে পাঠানো হচ্ছে। সাগরে নির্ধারিত দূরত্বে বড় জাহাজ অপেক্ষা করতে থাকে। আর ওই জাহাজে ট্রলারে করে লোক পৌঁছে দিয়ে ফেরত আসে ট্রলার। তবে এজন্য পুলিশকে চাঁদা হিসেবে জনপ্রতি নির্দিষ্ট অংকের টাকা পুলিশের সোর্সের কাছে বুঝিয়ে দিতে হয়। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নুর মোহাম্মদ ও বাহারছড়ার এক আওয়ামী ওলামালীগ নেতা বিরুদ্ধে পুলিশের নামে এ টাকা সংগ্রহ করার প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, থাইল্যান্ডভিত্তিক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে টেকনাফের প্রভাবশালী ওই ১০ ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, পাচার হওয়া মানুষকে থাইল্যান্ড জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে এই ১০ জনের বিরুদ্ধে। 
আদম পাচারকারী এই ১০ স্থানীয় গডফাদার হলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগ্নে ও আবদুর রহমান দারোগার ছেলে নিপু, তার চাচাতো ভাই আকতার কামাল ও শাহেদ কামাল, সাবরাং ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ, শাহপরীর দ্বীপের বাজার পাড়ার ধুলু হোসেন, চকরিয়ার মৃত মোজাহের কো¤পানির ছেলে জাফর আলম কো¤পানি, মুন্ডার ডেইল এলাকার আক্তার ফারুক  ও আবদুর রহমান। বাকি তিনজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে আসা মানবপাচারকারীদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন প্রয়োগকারি সংস্থার কাছে প্রেরণ করে। ওই তালিকায় এসব ব্যক্তির নাম রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। 
এছাড়া ওই তালিকায় টেকনাফ, সাবরাং, শাহ পরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের দুই শতাধিক দালালের নাম রয়েছে। রয়েছে কক্সবাজার শহর, মহেশখালী ও চকরিয়া কেন্দ্রিক দালালের নামও। এর বাইরে বরগুনা, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দালালের নামও রয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আকতার জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবপাচারকারীদের কোনো তালিকা এখনো হাতে পাননি তিনি। তবে ঈদের পর বেসরকারি সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও পাচারকারীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে।
বিজিবির টেকনাফস্থ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাহিদ হাসান জানান, মানবপাচার বন্ধের ব্যাপারে বিজিবি কাজ করতে পারে না। বিজিবি সীমান্ত পাহারায় কাজ করছে। তবে যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন