পদত্যাগ করছেন ট্রাইব্যুনালের কৌসুলিরা

এ কে আজাদ : অচিরেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন কৌসুলি। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেই তারা পদত্যাগ করছেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কৌসুলিদের  মধ্যে রয়েছেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্ম্দ আলী, মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সীমন, একেএম সাইফুল ইসলাম,নূরজাহান বেগম মুক্তা, আবুল কালাম ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন । তদšত্ম সংস্থার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন প্রধান তদšত্ম কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্দুর রহীম, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাইল হক।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, আপিলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- দেয়ার পর থেকে কৌসুলিরা বিচারের চেয়ে নির্বাচনের প্রতিই বেশি সময় দিচ্ছেন।
জানা গেছে, আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পর থেকে বেশীর ভাগ কৌসুলিই আগামী দশম জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট নিয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে ব্য¯ত্ম হয়ে পড়েছেন মনোনয়ন পেতে। এজন্য তারা দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর তদবীর করে মন জোগানোর চেষ্টা করছেন।
সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছেন বলে দাবি করেন তদšত্ম সংস্থার কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় সকলেই।
তারা বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষে সমসময় কাজ করার সুবাদে সংশ্লিষ্ট আসনের এমপির জনপ্রিয়তা এবং কর্মকা-ের তুলনায় তারা মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আশা করছেন।
মনোনয়ন পেতে নিজ-নিজ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ন মূলক কর্মকা-ের রা¯ত্মা-ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে দাবি সকলেরই। কেউ কেউ জোড়ালো দাবি করে বলছেন, এর আগে থেকেই তারা তৃনমূলে স্থানীয় জনগনের সথেই ছিল এখনো আছেন।
সংশ্লিষ্ট তদšত্ম কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর নির্বাচনের প্র¯ত্মুতি নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার সাথে সাথে প্রতি সপ্তাহেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন।
তবে তারা যেসব নির্বাচনী এলাকার মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন,ওইসব আসনে বর্তমানে দলের প্রভাবশালী সাংসদ সদস্য ও কোন কোন এলাকায় জাতীয় পার্টির এমপি এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদšত্ম সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা), এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।
তদšত্ম সংস্থার জেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তারাইল),বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী, এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ঢাকা-২০ (ধামরাই) মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা বেনজির আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোঃ সুলতান মাহমুদ সীমন শরিয়তপুর-২(নড়িয়া-সখিপুর)এর মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমান এ আসনের সংসদ সদস্য হলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেলম (অব.)শওকত আলী। এ আসনে সীমন ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক শামীমও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট একেএম স্ইাফুল ইসলাম প্রার্থী হতে চান নোয়াখালী-৩ (বেগম গঞ্জ)ও ৪ (নোয়াখালী সদর) এর যে কোন একটি আসন থেকে। এই দুই আসনের একটিতে সংসদ সদস্য হলেন বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু ও অপরটিতে আওয়ামীলীগ নেতা একরামুল কবীর চৌধুরী।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রার্থী হতে চান চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে। এ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম)।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চায় বলে জানা গেছে।ওই আসনের বর্তমান এমপি মাহাবুবুর রহমান তালুকদার সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন হবিগঞ্জ-৪ (চুনাড়ঘাট ও মাধবপুর) আসনে থেকে মনোনয়ন চায় বলে জানা গেছে। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান হাওলাদার মাদারীপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন নৌ- পরিবহনমন্ত্রী শাহ জাহান খান।
ট্রাইব্যুনালের সব মনোয়ন প্রত্যাশীদের দাবী বর্তমান সংসদ সদস্যেদের সাথে তৃণমূলের দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এলাকাতে যে ধরণের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল তা বর্তমান সংসদ সদস্যরা পূরণ করেত পারেনি।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাবি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ক্ষেত্রে তারা জাতীয় দাবি পূরণ করেছেন। তাই তারাই হলেন এ সব আসনের যোগ্য প্রার্থী।
জানতে চাইলে কৌসুলি নুর জাহান বেগম মুক্তা, আবুল কালাম, মোহাম্মদ আলী বলেন, মনোনয়ন পেলে ট্রাইব্যুনালের কৌসুলি পদ থেকে পদত্যাগ করবেন তারা।
তারা বলেন, দেশকে তারা অনেক দিয়েছি এখন আবার দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হলেতো তাদের একটা ত্যাগ স্বীকার করেত হবেই। এজন্যই তারা নির্বাচনের জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধাšত্ম নিয়েছেন।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন, আব্দুর রহমান এবং সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, তৃণমূল জনগণ চায় পরিবর্তন। এখন আর এলাকাতে কাজ না করলে জনগণ একজনকে দুইবার নির্বাচিত করতে চায় না। প্রত্যাশিত উন্নয়ন না হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের নির্বাচনের চাপ দিচ্ছে।
তাছাড়া কেন্দ্র থেকে কৌসুলিদেরকে মনোনয়নের ভরসা দেয়া হয়েছে বলেও তারা দাবী করেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, লাভ জনক পদের একজন ব্যক্তি অবসরের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারায় বলা আছে, 'সরকারের লাভজনক পদে থাকলে কেউ সাংসদ হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্র কিংবা সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান কিংবা এমন কোনো কোম্পানি, যাতে সরকারের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা রয়েছে, এমন কোম্পানিতে বেতন, সম্মানী কিংবা আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদ বা অবস্থানকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হবে।'
আরপিও অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অবসর নেওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন,ট্রাইব্যুনালের কৌসুলি একটি লাভজনক পদ। কারণ,তাঁরা সরকারের কাছ থেকে বেতনভাতা পেয়ে থাকেন। কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়,সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে রাখলে ভাল হয়।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন,সংবিধানে বলা আছে,রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী,স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার,মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীরা সরকারে লাভজনক পদে থাকলেও তাদের পদকে লাভজনক ধরা হবে না।
তিনি বলেন,ট্রাইব্যুনালের কৌসুলিদের পদ লাভজনক। ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিরা লাভজনক পদে থাকায় তারা আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার কোন সুযোগ নাই বলে আমি মনে করি।
'সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের(ঘঘ)- তে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নির্বাচনে যোগ্য হবেন না, যদি আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।'
'সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (ঙ)-তে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে থাকলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হবেন। তবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।'
সংবিধান ও আইনে লাভজনক পদের যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে,তা নিয়ে নির্বাচন ও আইন বিশ্লেষকদের মধ্যে দুই রকম মত রয়েছে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার মতে,কৌসুলিদের পদ লাভজনক। কারণ তার সরকারের কাছ থেকে বেতন-বাতা নিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপণ দ্বারা নিয়োগ পাচ্ছেন। আর আইন অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তরা হলেন লাভ জনক পদের কর্মকর্তা।
'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা প্রজাতন্ত্র,সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি,বেতন,সম্মানী কিংবা আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদ বা অবস্থানকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হবে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কৌসুলিরাও এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে, তাই আমি মনে করি তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।
শামছুল হুদা আরো বলেন, বিধি অনুযায়ী আগামী দশম নির্বাচন নয়, কোন লাভ জনক পদের কোন অবসর প্রাপ্ত ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন না।
আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলি অ্যাডভোকেট গোলামা আরিফ টিপুকে কৌসুলিদের নির্বাচন করতে পারা না পারার সম্ভাবনার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।
সুপিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শম রেজাউল করিম বলেন, কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনালের কৌসুলির পদ কোন লাভ জনক পদ না।
তিনি বলেন, তারা এখানে অ্যাডভোকেট হিসাবে কাজ করছেন। আর তার বিনিময়ে সরকার তাদেরকে সম্মানি ভাতা প্রদান করেন। তারা নির্বাচন করতে পারবেন বলে আমার মনে হয়। টিএনবিডিপদত্যাগ করছেন ট্রাইব্যুনালের কৌসুলিরা
এ কে আজাদ : অচিরেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন কৌসুলি। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেই তারা পদত্যাগ করছেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কৌসুলিদের  মধ্যে রয়েছেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্ম্দ আলী, মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সীমন, একেএম সাইফুল ইসলাম,নূরজাহান বেগম মুক্তা, আবুল কালাম ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন । তদšত্ম সংস্থার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন প্রধান তদšত্ম কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্দুর রহীম, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাইল হক।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, আপিলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- দেয়ার পর থেকে কৌসুলিরা বিচারের চেয়ে নির্বাচনের প্রতিই বেশি সময় দিচ্ছেন।
জানা গেছে, আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পর থেকে বেশীর ভাগ কৌসুলিই আগামী দশম জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট নিয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে ব্য¯ত্ম হয়ে পড়েছেন মনোনয়ন পেতে। এজন্য তারা দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর তদবীর করে মন জোগানোর চেষ্টা করছেন।
সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছেন বলে দাবি করেন তদšত্ম সংস্থার কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় সকলেই।
তারা বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষে সমসময় কাজ করার সুবাদে সংশ্লিষ্ট আসনের এমপির জনপ্রিয়তা এবং কর্মকা-ের তুলনায় তারা মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আশা করছেন।
মনোনয়ন পেতে নিজ-নিজ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ন মূলক কর্মকা-ের রা¯ত্মা-ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে দাবি সকলেরই। কেউ কেউ জোড়ালো দাবি করে বলছেন, এর আগে থেকেই তারা তৃনমূলে স্থানীয় জনগনের সথেই ছিল এখনো আছেন।
সংশ্লিষ্ট তদšত্ম কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর নির্বাচনের প্র¯ত্মুতি নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার সাথে সাথে প্রতি সপ্তাহেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন।
তবে তারা যেসব নির্বাচনী এলাকার মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন,ওইসব আসনে বর্তমানে দলের প্রভাবশালী সাংসদ সদস্য ও কোন কোন এলাকায় জাতীয় পার্টির এমপি এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদšত্ম সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা), এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।
তদšত্ম সংস্থার জেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তারাইল),বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী, এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ঢাকা-২০ (ধামরাই) মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা বেনজির আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোঃ সুলতান মাহমুদ সীমন শরিয়তপুর-২(নড়িয়া-সখিপুর)এর মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমান এ আসনের সংসদ সদস্য হলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেলম (অব.)শওকত আলী। এ আসনে সীমন ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক শামীমও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট একেএম স্ইাফুল ইসলাম প্রার্থী হতে চান নোয়াখালী-৩ (বেগম গঞ্জ)ও ৪ (নোয়াখালী সদর) এর যে কোন একটি আসন থেকে। এই দুই আসনের একটিতে সংসদ সদস্য হলেন বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু ও অপরটিতে আওয়ামীলীগ নেতা একরামুল কবীর চৌধুরী।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রার্থী হতে চান চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে। এ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম)।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চায় বলে জানা গেছে।ওই আসনের বর্তমান এমপি মাহাবুবুর রহমান তালুকদার সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন হবিগঞ্জ-৪ (চুনাড়ঘাট ও মাধবপুর) আসনে থেকে মনোনয়ন চায় বলে জানা গেছে। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান হাওলাদার মাদারীপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন নৌ- পরিবহনমন্ত্রী শাহ জাহান খান।
ট্রাইব্যুনালের সব মনোয়ন প্রত্যাশীদের দাবী বর্তমান সংসদ সদস্যেদের সাথে তৃণমূলের দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এলাকাতে যে ধরণের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল তা বর্তমান সংসদ সদস্যরা পূরণ করেত পারেনি।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাবি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ক্ষেত্রে তারা জাতীয় দাবি পূরণ করেছেন। তাই তারাই হলেন এ সব আসনের যোগ্য প্রার্থী।
জানতে চাইলে কৌসুলি নুর জাহান বেগম মুক্তা, আবুল কালাম, মোহাম্মদ আলী বলেন, মনোনয়ন পেলে ট্রাইব্যুনালের কৌসুলি পদ থেকে পদত্যাগ করবেন তারা।
তারা বলেন, দেশকে তারা অনেক দিয়েছি এখন আবার দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হলেতো তাদের একটা ত্যাগ স্বীকার করেত হবেই। এজন্যই তারা নির্বাচনের জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধাšত্ম নিয়েছেন।
কৌসুলি অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন, আব্দুর রহমান এবং সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, তৃণমূল জনগণ চায় পরিবর্তন। এখন আর এলাকাতে কাজ না করলে জনগণ একজনকে দুইবার নির্বাচিত করতে চায় না। প্রত্যাশিত উন্নয়ন না হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের নির্বাচনের চাপ দিচ্ছে।
তাছাড়া কেন্দ্র থেকে কৌসুলিদেরকে মনোনয়নের ভরসা দেয়া হয়েছে বলেও তারা দাবী করেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, লাভ জনক পদের একজন ব্যক্তি অবসরের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারায় বলা আছে, 'সরকারের লাভজনক পদে থাকলে কেউ সাংসদ হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্র কিংবা সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান কিংবা এমন কোনো কোম্পানি, যাতে সরকারের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা রয়েছে, এমন কোম্পানিতে বেতন, সম্মানী কিংবা আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদ বা অবস্থানকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হবে।'
আরপিও অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অবসর নেওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন,ট্রাইব্যুনালের কৌসুলি একটি লাভজনক পদ। কারণ,তাঁরা সরকারের কাছ থেকে বেতনভাতা পেয়ে থাকেন। কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়,সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে রাখলে ভাল হয়।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন,সংবিধানে বলা আছে,রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী,স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার,মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীরা সরকারে লাভজনক পদে থাকলেও তাদের পদকে লাভজনক ধরা হবে না।
তিনি বলেন,ট্রাইব্যুনালের কৌসুলিদের পদ লাভজনক। ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিরা লাভজনক পদে থাকায় তারা আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার কোন সুযোগ নাই বলে আমি মনে করি।
'সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের(ঘঘ)- তে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নির্বাচনে যোগ্য হবেন না, যদি আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।'
'সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (ঙ)-তে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে থাকলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হবেন। তবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।'
সংবিধান ও আইনে লাভজনক পদের যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে,তা নিয়ে নির্বাচন ও আইন বিশ্লেষকদের মধ্যে দুই রকম মত রয়েছে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার মতে,কৌসুলিদের পদ লাভজনক। কারণ তার সরকারের কাছ থেকে বেতন-বাতা নিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপণ দ্বারা নিয়োগ পাচ্ছেন। আর আইন অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তরা হলেন লাভ জনক পদের কর্মকর্তা।
'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা প্রজাতন্ত্র,সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি,বেতন,সম্মানী কিংবা আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদ বা অবস্থানকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হবে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কৌসুলিরাও এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে, তাই আমি মনে করি তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।
শামছুল হুদা আরো বলেন, বিধি অনুযায়ী আগামী দশম নির্বাচন নয়, কোন লাভ জনক পদের কোন অবসর প্রাপ্ত ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন না।
আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলি অ্যাডভোকেট গোলামা আরিফ টিপুকে কৌসুলিদের নির্বাচন করতে পারা না পারার সম্ভাবনার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।
সুপিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শম রেজাউল করিম বলেন, কৌসুলিরা নির্বাচন করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনালের কৌসুলির পদ কোন লাভ জনক পদ না।
তিনি বলেন, তারা এখানে অ্যাডভোকেট হিসাবে কাজ করছেন। আর তার বিনিময়ে সরকার তাদেরকে সম্মানি ভাতা প্রদান করেন। তারা নির্বাচন করতে পারবেন বলে আমার মনে হয়। টিএনবিডি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন