ভোট বঞ্চিতদের কথোপকথন

ডেস্ক রিপোর্ট: শুক্রাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়ির নিচে বসে মুরগি বিক্রি করেন মো. আলী হোসেন। ফজলে নূর তাপস এলাকার উন্নয়নে যা-ই করুন না কেন, আলী তাঁর ওপর খুশি। এবারও তাপসকে ভোট দেবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু ভোটটা বাক্সে ফেলার সুযোগ পেলেন না। এ নিয়ে তিনি বেজায় নাখোশ। ভোটের প্রসঙ্গ উঠতেই রাগে গজগজ করে বললেন, ‘এইডা কোনো ভুট হইল? অ্যাডভান্স সব।’ মো. আলী হোসেনের মতো শুক্রাবাদের সব বাসিন্দা ফজলে নূর তাপসের ভক্ত নন। তাঁরা আরও বিরক্ত। রাস্তায় সিঙ্গারা-সমুচা ফেরি করেন শাহজাহান মিয়া। তিনি মো. আলী হোসেনের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন, মানছি তিনি মসজিদে এসি লাগাইছেন, দুই-চাইরটা রাস্তা বানাইছেন, আর কী কী করছেন? আমাদের জন্য কী করছেন? তার সাথে কেউ দাঁড়াইলে ভুটটা দিয়া তো জবাব দিতে পারতাম।


ক্ষুদ্র দুই ব্যবসায়ীর বাদানুবাদে একে একে যুক্ত হন অনেকে। আজ দুপুরের দিকে রাসেল স্কয়ারে অল্পসময়ের জন্য জমে ওঠে বিতর্ক। বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া চা-নাশতার দোকানের সামনে জটলা বাঁধেন আরও বেশ কজন মানুষ। এঁদের একেকজন একেক এলাকার। পিঠে রুকস্যাক নিয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা চার-পাঁচ তরুণের কেউই ভোট দেবেন না বলে জানালেন। সকালবেলা এঁদের অনেকেরই ঘুম ভেঙেছে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো খুদে বার্তায়। বার্তায় লেখা, ‘ভোট বিক্রি তো বিবেক বিক্রি, ভোট বিক্রি করবেন না, নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।’ ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে কমিশনের এমন বার্তা পেয়ে অনেকেই নিজেকে সম্মানিত ভেবেছিলেন। এবার তাঁরা ভাবছেন নির্বাচন কমিশন তাঁদের সঙ্গে ঠাট্টা করেছে। কেউ কেউ আজ পর্যন্ত জানতেনই না যে তাঁদের ভোট দিতে হবে না। এঁদের একজন গৃহকর্মী সাজেদা বেগম। তিনি রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ভোটার। জীবনে কখনো ভোট দেননি। ৫ জানুয়ারি ভোট দিতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নে বললেন, ‘আবার জিগায়! ম্যাম্বর ইলেকশনে ভোট দেই, পেত্যেকবার। ২০০-১০০ টাকা পাওয়া যায়। বড় ভুট দেই নাই। এইবার কাট করছি। এইবার দিমুই। ভোট তো দিতেই হইব।’

তবে ভোট দিতে পারছেন না এমন লোকজনের যেমন আক্ষেপের শেষ নেই, তেমনি অনেকে ভাবছেন এতে শাপে-বর হয়েছে। রাস্তার ধারে নাশতা বিক্রি করেন, এমন একজন নারী বলেন, ‘পরিবারের সব লোকজন নিয়া যে ভোটকেন্দ্রে যামু। কেন্দ্র জ্বালায়া দিলে কে দায়ী হইব? হাসিনা না খালেদা?’

চায়ের দোকানগুলোয় আজকের আলোচনা যতটা না ভোটকেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি এই নির্বাচনের ভিত্তিতে গঠিত সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে। ওয়াদুদ মিয়া নামের এক চাকরিজীবী বলছিলেন, ‘সংবিধানটা কে চেঞ্জ করতে বলেছিল। বিশ্বের কোন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটতেছে। প্রধানমন্ত্রী যত দিন খুশি থাকতেছেন। ইশতেহার ঘোষণার দিন টার্গেট দিছেন ২০৪১ সাল!’ ঈসা রুহুলুল্লাহ নামের অপর পথচারী প্রতিবার পুরো পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জে ভোট দিতে যান। এবার যাননি। বিরক্তির সঙ্গে তিনি বললেন, ‘আমাদের কথা হাসিনাও ভাবে নাই। খালেদাও ভাবে না। আমাদের হজরত ওমরের মতো একজন শাসক দরকার।’ ভোট, ভোটের গুরুত্ব, আদৌ গুরুত্ব আছে কি না, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা—এ নিয়ে বিতর্ক চলছে, শেষ কবে হবে তা কেউ জানে না। প্রথমআলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন