কূটনৈতিক নির্ভরতা কমিয়ে রাজনৈতিক শক্তি দেখাবে বিএনপি

7004_1_1
ঢাকা: নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার চাইতে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের দিকে মনোযোগী হচ্ছে বিএনপি।
জাতিসঙ্ঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেনের ঢাকা সফরের পর বিএনপি সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন করে রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
মাঠের রাজনীতির দুর্বলতার কারণে সরকার শেষ পর্যন্ত সংলাপে আগ্রহী হয়নি বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন, চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারকে সংবিধান সংশোধনে বাধ্য করতে হবে।
এই কৌশলের অংশ হিসাবে সংবিধান সংশোধনের মতো পরিস্থিতিতে বিএনপি যাতে সংসদে ভূমিকা রাখতে পারে সে জন্য সংসদ থেকে পদত্যাগ নয় বরং সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওয়েন্ডি শারমানের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠক না হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাথে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। আগামী ২৫ জুন কেরি ঢাকা সফরে আসছেন। এই সফরে টিকফা চুক্তির ব্যাপারে ঘোষণা আসতে পারে।
কেরির সফরসূচিকে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত আছে বলে মার্কিন দূতাবাস থেকে বিএনপিকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরা হবে।
জাতিসঙ্ঘ সহকারী মহাসচিবের ঢাকা সফরের সময় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল বিরোধী দলকে দ্রুত চিঠি দিয়ে সংলাপ শুরু করা হবে। কিন্তু তিনি ঢাকা ত্যাগের পরপরই সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়ায় সরকার।
এরপর বিরোধী দলের ওপর চাপ আরো বাড়তে থাকে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শুধু কূটনৈতিক দেন-দরবারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণমূলক ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিস্থিতি কোনোভাবেই সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।

ওয়েন্ডি শারমেনের ঢাকা সফরের পর মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে বসেছিলেন বিএনপি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্যরা। সেখানে ওয়েন্ডি শারমেনের হরতাল নিয়ে মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের ঢাকা সফরের সময় আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি কেন হরতাল ডাকছে তা উপলদ্ধি করার কথা বলেন।

মার্কিন ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। বিএনপি নেতারা মার্কিন এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তারনকোর সফরের সময় সংলাপের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল যে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছিল সে অবস্থান থেকে কেন সরে আসলো বলে মনে হয়?

মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিপর্যয়ের পর শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ছাড় না দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে।

এ পরিস্থিতিতে এই বৈঠকে বিএনপি নেতারা দাবি আদায়ে আরো হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন।

বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে এখন দলটি গভীর নজর রাখছে। তারা আশা করছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সবক’টি সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

এই নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ না হয় তাহলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এসব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে যাতে বেশি সম্পৃক্ত করা যায় সে ধরনের কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।

আন্দোলনে তরুণ নের্তৃত্বকে সামনে আনা হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর দলের ছাত্র ও যুব সংগঠন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখা হচ্ছে। সঠিক দিক-নির্দেশনা দিলে ছাত্র ও যুব সংগঠন দিয়ে আগামীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

তবে বিএনপিতে বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে সাংগঠনিক নেতৃত্বের ঘাটতি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুস সালাম তালুকদার বা মান্নান ভূইয়ার মতো মহাসচিবের অভাব তীব্রভাবে অনুভব করছে দলটি।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখর্বল ইসলাম আলমগীর দলের মুখপাত্র হিসাবে সফল। তার মার্জিত বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির ইমেজ বাড়ালেও সাংগঠনিক প্রজ্ঞার ঘাটতি কোনোভাবেই পূরণ করা যাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দলের ছাত্র ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের দিক-নির্দেশনা দিতে হচ্ছে। আন্দোলনে তৃনমূল নেতাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে ঢাকা মহানগরসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সাথে বেগম খালেদা জিয়া মতবিনিময়ের পরিকল্পনা করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন