রমজানের প্রস্তুতি ও কিছু আলোচনা


ঢাকা: রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। রমজানের কল্যাণ লাভের প্রত্যাশায় মুমিনরা ১১টি মাস অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। রমজানের আগমনে মুসলিম উম্মাহ আনন্দিত হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়া। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম।’ (সূরা ইউনুস : ৫৮)।


মাহে রমজান আগমনের ২ মাস আগ থেকেই রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতেন। পার্থিব কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হতো তখন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন; তার সাহাবাদের বলতেন, তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত, যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। (নাসাঈ)।


আমাদের কর্তব্য : আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া এবং ইবাদত-বন্দেগিসহ সব কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজবের শুরুতেই নিজে এবং সাহাবায়ে কিরামকে এ দোয়া করার জন্য বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান’, (হে আল্লাহ! রজব এবং শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজানের পুণ্যময় মাস অর্জনের সৌভাগ্য দান করুন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বের মুসলমানরা রমজান আসার আগে থেকেই এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সাহাবায়ে কেরামের পর তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, মুহাদ্দিসিন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ সব সার্কেলের মুসলমানরা নিজ নিজ পরিসরে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।


উপমহাদেশসহ বাংলাদেশেও রমজান আসার আগেই রমজানের ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ করা যায়। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও রমজানের জন্য ব্যাপক পরিলক্ষিত হয়। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন না হয় সেজন্য আনুষ্ঠানিক হলেও সরকার বিভিন্ন ঘোষণা ও বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানির কথা জানিয়ে দেয়। ইফতারি, তারাবি এবং সেহরির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ, গ্যাস-পানির সমস্যা নিরসনের এবং যানজটমুক্ত রাস্তাঘাট রাখার একটি কসরত সরকারের পক্ষ থেকেও পরিলক্ষিত হয়। বৈষয়িক এসব প্রস্তুতি ছাড়াও ইবাদত কেন্দ্রিক প্রস্তুতিও শুরু হয় বেশ জোরেশোরেই। মসজিদগুলোর সংস্কার ও চুনকাম ইত্যাদি করে মসজিদের দায়িত্বশীলরা মসজিদকে রমজানের ইবাদতযোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। যেসব মসজিদে খতমে তারাবির হাফেজ নির্ধারিত না থাকে সেসব মসজিদে নতুনভাবে হাফেজ নিয়োগ দেয়।


শাবানের মাঝে এসব কাজ শেষ করেই তারা লেগে যান কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের এবং মুখস্থ কার্যক্রমের ঝালাই কাজে। রমজানের আগ পর্যন্ত তারা কোরআন তেলাওয়াতেই ব্যস্ত থাকেন। ওদিকে রমজানের আগেই খতমে তারাবির জন্য সাধারণ মুসল্লিরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কোথায় কিভাবে তারাবি পড়বেন এবং নিজের অন্য কাজগুলো কিভাবে সম্পন্ন করবেন এসবই তারা রমজানের আগেই ঠিক করে রাখেন।


রমজানের প্রস্ততির বিষয়টি যেমনিভাবে একশ্রেণীর মুসলমান বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে, আবার একটি শ্রেণী এমনও রয়েছে যারা এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। মুসলমান হিসেবে সবার জন্যই উচিত যথাযথভাবে রমজানের ইবাদত-বন্দেগিতে লেগে যাওয়া। কারণ এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে কমপক্ষে ৭০ গুণ বেশি। সুতরাং আসুন এখনই আমরা রমজানের পুণ্যময় ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিজের বিগত দিনের পাপ মাফের এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করি
- See more at: http://www.bengalinews24.com/citizen-journilism,-new-media-journalism/2013/07/05/9683#sthash.UXjra5D5.dpuf