নিজস্ব প্রতিবেদক: বার বার সভা সমাবেশ ও কাউন্সিল ঘোষণার পরে অবশেষে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি অনুমোদন হয়েছে। এতে গত কমিটির সাধারন সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপিকে সভাপতি এবং কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ৭১ সদস্যের এ কমিটিতে মঙ্গলবার স্বাক্ষর করেছেন দলীয় সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।
একই সাথে সভাপতি পদপ্রার্থী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. একে আহমদ হোসেনও কমিটি অনুমোদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যদিয়ে অনেক দিনের নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দস্তখতের সামান্য কালো কালিতেই ইতি টানলো ‘কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/ সম্পাদক’ এমন কথার।
একই সাথে সভাপতি পদপ্রার্থী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. একে আহমদ হোসেনও কমিটি অনুমোদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যদিয়ে অনেক দিনের নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দস্তখতের সামান্য কালো কালিতেই ইতি টানলো ‘কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/ সম্পাদক’ এমন কথার।
নবগঠিত এ জেলা কমিটিতে অনেক নতুন নেতৃত্বের দেখা মিলেছে। পাশাপাশি স্থান পেয়েছে বেশ কিছু পুরাতন মুখও। নতুন পুরাতন মিলে জেলা আওয়ামীলীগের এবারের কমিটি অনেক শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনুমোদিত কমিটির একটি কপি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসাইন এমপি ও বীর বাহাদুর এমপি’র হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে দলের বৃহৎ স্বার্থে কমিটিতে সংযোজন বিয়োজনও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে অনিয়মসহ নানা জটিলতার অভিযোগের কারণে শেখ হাসিনা নিজেই এমন কঠিন সিদ্ধন্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এতে দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কাউন্সিলর নাখোশ হয়েছেন। তারা এটিকে গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সর্বশেষ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত নেতা একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৫ সালে একেএম মোজাম্মেল হকের মৃত্যুর পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত হন সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। পরে নানা কারনে তিনি দায়িত্ব হারালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবি একে আহমদ হোসাইনকে। সেই থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরমধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ত্যাগের পর দলীয় নেতাকর্মীরা একটু নড়েচড়ে বসে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তৃণমূল পথম সভা হয়। এরপর তিন দফায় সভা করে নির্ধারণ করা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। সঙ্গত কারণে তা পিছিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৪ অক্টোবর। সর্বশেষ নির্ধারণ করা ৯ নভেম্বর। দেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করে দলীয় হাই কমান্ড থেকে এ নিয়ে ৩ বার স্থগিত হলো কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল।
সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য প্রথমবার সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি যথাসময়ে সম্মেলন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয়বার তার পাশাপাশি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বার-বার তারিখ পিছিয়েও সম্মেলন করতে তারা ব্যর্থ হলে সর্বশেষ গতমাসে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি তার দায়িত্ব পাওয়ার পর কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। ধার্য করে ৯ নভেম্বর। কিন্তু তাও হয়ে উঠেনি। অন্ধকারেই রয়ে গেল জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল।
সুত্র জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ঘোষণা দেয়া হয় ৮ উপজেলা, ২ টি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও একটি সাংগঠনিক উপজেলা মিলে ২৯৮ জন জেলা কাউন্সিলর তালিকা। এর পরই শুরু হয়ে যায় ঘোষিত তালিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন। অভিযোগ আনা হয় তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের ক্যাড়ারদের অন্তর্ভূক্ত করার। এ নিয়ে বেশ কয়েক দিন কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি চলে।
প্রাপ্ত অভিযোগ মতে, ঘোষিত এ তালিকা থেকে প্রথমে বাদ দেয়া হয় কক্সবাজার সদর-রামু আসনের নবম জাতীয় সংসদ নির্বচনের মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইমুম সরওয়ার কমলকে। এ সংবাদে দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি হাই কমান্ড পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চমহলের নির্দেশে অবশেষে কাউন্সিলর তালিকাভূক্ত করতে হয়েছে তাকে।
একইভাবে কক্সবাজার পৌর আ.লীগের কাউন্সিলর তালিকা নিয়েও ব্যাপক অভিযোগ তুলেছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। তালিকায় দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও দায়িত্বরত সিনিয়র অনেক নেতাদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ নিয়ে দলের তৃণমূল থেকে সংবাদ মাধ্যমে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান এর নিকট জবাবও চাওয়া হয়।
গঠনতন্ত্রের বিধান মতে, প্রতি ১০ হাজারে ১ জন কাউন্সিলর করার কথা। কিন্তু তা লঙ্ঘন করে কক্সবাজার পৌরসভায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার জনসংখ্যার অনুপাতে ১৭ জনের স্থলে ২৮ জন অন্তর্র্ভূক্ত করা হয়েছে। তবে এ তালিকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামাল হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মাহবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নুরুল মাসুদ মানিক, জেলা আওয়ামীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাও: আতিকুর রহমান, এড. ফখরুল ইসলাম গুন্দু, পৌর আওয়ামীগের সিনিয়র নেতা কেরামত আলী, মোজাফফর আহমদ সওদাগর, বাবু রাজ বিহারী দাশ, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, চম্পা উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন কবির, সাইফুদ্দিন খালেদ, শহীদুল্লাহ মেম্বার, জেলা যুবলীগের সভাপতি জনপ্রিয় যুবনেতা খোরশেদ আলম ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাত এর নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চকরিয়া পৌরসভা, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও রামুতে নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে অতিরিক্ত কাউন্সিলর যোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
এরপরও চলতে থাকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এড. এ.কে আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, নজরুল ইসলাম চেীধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে জাফর আলম এমএ, মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান ও সোহেল সরওয়ার কাজল মাঠে চষে বেড়ান। এরই মাঝে সম্মেলন ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে পিছিয়ে ৪ অক্টোবর পূণঃনির্ধারণ করা হয়। এর পরে নির্ধারণ করা হয় ৯ নভেম্বর। অবশেষে দলীয় হাই কমান্ড থেকে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয় ৯ নভেম্বরের নির্ধারিত কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন