ঝিমিয়ে পড়েছে ঈদগাও’র ক্রীড়াঙ্গন, যুব সমাজ অন্ধকারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদগাওর ক্রীড়াঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছে। বিরাজ করছে শূণ্যতা। এতে করে যুবসমাজ নৈতিক অধপতনের দিকে ঝুকছে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ঈদগাওর কেন্দ্রিয় পর্যায়ে কোন প্রকার খেলাধুলা কিংবা ক্রীড়া নৈপূণ্য প্রদর্শিত হয়নি। ক্রীড়াঙ্গনকে উজ্জীবিত বা মাঠ গরম করা ক্লাবগুলোর অস্তিত্বও বিলুপ্ত হতে চলেছে। জানা যায়, এক সময় ঈদগাও হাইস্কুল মাঠ জেলা পর্যায়ে ক্রীড়াঙ্গনের এক অনন্য ভুমিকা রেখেছিল। ওই সময় জমজমাট ফুটবল খেলা চলতো। এমনকি লীগের খেলাও এ মাঠে অনুষ্টিত হতো। নুরুল আজিম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দুল আলম চৌধুরী, আলম ফরাজী, মা: মোজাম্মেল হক ফরাজী, মা: আবদুল মজিদ, জাফর আলম সহ অনেকেই খেলার মাঠকে জীবিত রাখতো। অনুশীলন হতো বিভিন্ন খেলাধুলার।

এ মাঠটি কালক্রমে মৃত হয়ে পড়েছে। মাঝামাঝি সময়ে বিগত ১ যুগে লতিফুর রহমান, মামুন সিরাজুল মজিদ, কাফি আনোয়ার, সাকলাইন মোস্তাক, মোফাচ্ছেল, আবদুল্লাহ কায়েস, রাজিবুল হক রিকু, সুমন, রুমেল সহ আরো একাধিক যুবক এগিয়ে এসে ক্রীড়াঙ্গনের চাকা সচল করে তুলে। এ সময় চলে স্বাধীনতা কাপ, মিলেনিয়াম কাপ, বিজয় দিবস কাপ ও ইউনিয়ন ভিত্তিক টুর্ণামেন্ট। এ সময়কালিন যুবকদেও মধ্যে ক্রীড়া উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়ে এক প্রকার প্রান চাঞ্চল্য ফিরে আসে এবং সৃষ্টি হয় প্রতিভাবান খেলোয়াড়। পরবর্তী ৫ বছর ধরে এ পর্যন্ত কোন প্রকার টুর্ণামেন্টের আয়োজন বা খেলোয়ার তৈরির কোন ধরনের কার্যক্রম চলেনি।

ফলে অনেকেই বেছে নিয়েছে বিপরীমূখী ভিন্ন পথ। কেউ কেউ ইয়াবা সহ মাদকাসক্ত ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। নের্তৃত্বদানকারী সংগঠনের মধ্যে মিডল কক্স, অরিয়ন, রেনেসা, প্রত্যাশা, রিলায়েন্স, সেঞ্চুরী অন্যতম। কিন্তু এসব ক্লাবের মধ্যে মাত্র ২/১ টি ছাড়া বাকীগুলোর কার্যক্রম বিলুপ্ত। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইসলামাবাদ ও পোকখালীতে প্রতি বছর টুর্ণামেণ্টের আয়োজন করা হলেও বছরের অন্যান্য সময় ক্রীড়া সংক্রান্ত কাজ চলে না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন।

বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র ট’র্ণামেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ । টুর্ণামেন্ট শেষ হওয়ার পর আর কোন প্রতিভা বিকাশে এগিয়ে আসা হয়না বলে জানা যায়। বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড় অষ্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী ডন ব্রাডসেনকে টপকিয়ে রেকর্ড ভঙ্গকারী কক্সবাজারের কৃতি সন্তান মুমিনুল হক সৌরভ ঈদগাওর প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেলেছিলেন। তিনি তার প্রতিভাকে অক্ষুন্ন রেখে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ায় আজ দেশের গৌরবে পরিনত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ঝড় তুলতে পেরেছেন।

ক্রীড়ামোদিরা জানান, সৌরভের সাথে যারা খেলেছেন তারাও যদি সঠিক পরিচর্যা পেতো তাহলে ঈদগার সম্মান বহুগুনে বৃদ্ধি করতে পারতো। এ অঞ্চলে অনেক সৌরভ এখনো রয়েছে যাদেও বিকাশে উল্লেখযোগ্য কোন নের্তৃত্বদানকারী ব্যক্তি -প্রতিষ্টান খুজে পাওয়া দুষ্কর। যার কারনে যুব সমাজ ঝুকে পড়েছে ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদকাসক্তে কিংবা ব্যবসায়। এদিকে বহুভাষী ধারাভাষ্যকার হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত সাকলাইন মোস্তাক দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্রীড়াজগতে টিকে থাকলেও মূল্যায়িত হচ্ছেনা।

সচেতন মহলের মতে, তার মতো সুমিষ্ট ও নানান ভাষায় পারদর্শী একজন ভাষ্যকার জেলায় ২য় আর আছে কিনা সন্দেহ। সাকলাইন মোস্তাক জানান, আসলেই ঈদগাওর ক্রীড়াঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছে। খেলাধুলা চর্চার কোন ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমান সময়ের যুব সমাজ বিপথে পা বাড়াচ্ছে। তাছাড়া ভালো কোন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছেনা। অচিরেই কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে ঈদগাও হতে ক্রীড়া জগত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাড়বে অপরাধ।

মিডল কক্সের কাফি আনোয়ার জানান, পৃষ্টপোষকতার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কিছু মৌসুমী সংগঠন রয়েছে যারা মৌসুমে শুধুমাত্র টুর্ণামেন্টের আয়োজন করে। এরপর থাকেনা এদেও অস্তিত্ব। এরা যদি ক্রীড়া প্রতিভা সন্ধানে কাজ চালাতো তাহলে আরো অগ্রসর হওয়া যেতো।

মামুন সিরাজুল মজিদের মতে, ঈদগাওর ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আনা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। যুব সমাজকে ক্রীড়াঙ্গনে ধরে রাখতে পারলে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবে। তাছাড়া সুষ্টু সুন্দর সমাজ বিনির্মান করা যাবে। এ জন্য প্রয়োজন ক্রীড়ামোদি পৃষ্টপোষকদের সহ সকলের এগিয়ে আসা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন