এক মহীয়ান দুঃখী মায়ের কথা........

সোহরাব হোসেন চৌধুরী
আজ ১০ জুন ১৩ ইং রোজ সেমারাব আমার মায়ের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী। আমি আমার লেখার শুরুতে সবার কাছে একটি হাত জোর করে অনুরোধ করছি সবাই আমার মা ও যাদের মা এ দুনিয়াতে নেই তাদেরসহ
সকল মরহুম পুরুষ ও নারীর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে এ দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতবাসী করে। আমি আমার বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত সকল মানুষের প্রতি আরো একটি অনুরোধ করছি এ পৃথিবী যাদের মা- বাবা বেঁচে আছে। তাদের মনে যেন কোন প্রকার আঘাত না লাগে সে দিকে একটু নজর রাখবেন, দেখবেন পৃথিবীতে আপনি সফল হয়েছেন। কারণ আপনার কাছে আপনার মা-বাবা দোয়া রয়েছে। আজ পৃথিবীর বুকে আমার মা আমার কাছে নেই। প্রতিদিন মাকে খুব মনে পড়ে কিন্তু বাস্তবে দেখার ক্ষমতা আর নেই। আমি ছিলাম আমার মায়ের এক পাগল ছোট ছেলে। মাগো আজ তোমায় দেখি না ৪টি বছর। যেখানে তোমাকে এক দিন না দেখলে খুব কষ্ট লাগত সেখানে আজ কত দিন। কত কষ্ট মনে জমে আছে তা আল্লাহ আর আমি ছাড়া কেউ জানে না। মাগো বাস্তবে যদি না আসতে পার স্বপ্নেও তো একটু আসতে পার কেন আস না। তোমার সেই ছোট ছেলে কত কষ্টে আছে তুমি জান। মাগো এই পৃথিবীতে বাঁচার প্রয়োজন তাই বেঁচে আছি। মাগো তোমার কাছে আমার অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু তোমাকে বলতে পারি না। তাই তোমার সেই ছোট ছেলেটাও অনেক কষ্টে আছে। মাগো তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি খুব মনে পড়ে। যখন কোন নিরর্ব স্থানে গিয়ে দাঁড়ায় তখন তোমার প্রতিটি স্মৃতি ছবি হয়ে মাগো চোখের সামনে ভাসে। হাত নাড়ি দিয়ে ডাকে বলে আই আমার সাথে আই। কিন্তু মাগো তোমাকে তো পাই না। আবার সেই না ফেরার পৃথিবীতে চলে যাও। মাগো তুমি মানুষকে খুব বিশ্বাস করতে। তাই তুমি মানুষের কাছে বারবার প্রতারিত হয়েছ। তাই তোমার নিরব আর্তনাদ কেউ না বুঝলেও আমি বুঝেছি। যাদের তুমি বিশ্বাস করতে, তারাই আজ আমাকে সব চেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে, কারণ তোমার আদর্শকে তো আমি বিতাড়িত করতে পারিনা। তাই আজ আমার কত কষ্ট, কাউকে বোঝাতে পারি না শুধু আল্লাহ্ জানে। মাগো আমি জানি তুমি আমাকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে এবং অনেকের কাছে বলেছও আমার ছোট ছেলেটার জন্য খুব চিন্তা হয়। তুমি আসলে মহীয়ান এক দুঃখী মা। তুমি মাগো আমাকে মাটিতে রাখোনি পিপঁড়ায় কামড়াবে, মাথায় তুলোনি উকুঁনে কামড়াবে। তুমি সে যখন মা, যখন সন্ধ্যা বেলা তুমি বাড়ির বাহিরে রান্না করতে তখন তোমার পাশে আমি গিয়ে বসলে তুমি বলতে মশা কামড় দেবে বাড়ি যাও আমি এসে নাস্তা দিচ্ছি। অথচ তুমি মশার কামড়সহ নানা যন্ত্রণা বুকে নিয়ে কাজ করতে। তোমার যন্ত্রণা কেউ না বুঝলেও আমি বুঝেছি। মাগো আমিসহ তোমার সন্তানেরা কোনদিন তোমার উপকারে এসেছে বলে আমার মনে হয় না। মাগো তুমি যখন এ পৃথিবীতে ছিলে তখন আমাদের পরিবার কত সুখী ছিল আজ তুমি পৃথিবীর আলো- বাতাস ছেড়ে না ফেরা পৃথিবীতে চলে গেলে সে থেকে সুখও চলে গেছে তোমার সাথে। ২০০৯ সালের মার্চ মাসের দিকে চরম রোগের স্বীকার হলে তুমি এবং একই সালের ১০ জুন তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে। মাগো আমি চিরদিন তোমার কাছে ঋণী। তোমার ঋণ আমি কোনদিনও সুদ করতে পারবো না। তাই বলি তুমি মহীয়ান দুঃখী এক মা। মাগো আসলে আমি বড়ই পাপী। মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। জীবনে আমি তোমার কোন কাজে বা উপকারে আসতে পারিনি। মাগো আমার যদি টাকা থাকতো,তাহলে তোমাকে দেশের বাইরে নিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতাম। মাগো তুমি চলে গেলে আমাকে একা ফেলে। শুধু আছে তোমার স্মৃতি গুলো। মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার নির্রব আর্তনাদের সময়ও আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারিনাই। মাগো তোমার একটি ডাক আমি এখনো শুনতে পাই। তুমি অসুস্থ ব্যবস্থায় আমাকে দেখলে কি যেন বলতে চাইতে এবং ‘ও বাজ্জি ও বাজ্জি’ বলে ডাকতে। তোমার পাশে গেলে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। যখন তোমার সাথে আমি কান্না করতাম, তখন তোমার আচঁল দিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিতে। মাগো তোমার নিরব আর্তনাদ আমাকে অপরাধী করে দেয়। আসলে মা পরিবারে ছোট ছেলের প্রতি আলাদা একটা মায়া থাকে , তা কি সত্যিই তুমি প্রমাণ করে দিলে। তুমি কখনো তোমার মনের কষ্ট কাউকে বুঝতে দাওনি এবং কাউকে আদর থেকে বঞ্চিত করনি ও কিছু চাওয়া থেকে কাউকে ফিরিয়ে দাওনি। যদি মাগো আমার সম্ভব হত তাহলে তোমাকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে ভাল ডাক্টার দেখাতাম, আমি মাগো তোমার কাছে চিরদিন ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি, কারণ আমার কিছু ছিল না এখনো নেই। তবে মাগো আল্লাহ্’র রহমতে আমি এই পৃথিবী যতদিন বেঁেচ থাকবো ততদিন তোমার মৃত্যু বার্ষিকীতে মানুষের মাঝে স্মরণ করিয়ে দেব এবং সবার কাছে প্রতিদিন তুমিসহ পৃথিবী মৃত ও জীবিত সকলের জন্য দোয়া চাইবো। পরিশেষে আমি আল্লাহর কাছে চাইবো হে আল্ল­াহ, আমি আমার জীবনে যদি একটি সুয়াব করে থাকি তা আপনি আমার মায়ের দরবারে পৌছে দিন এবং আমার মায়ের যদি গুনাহ থাকে সব গুনাহ আমাকে দিন। বিনিময়ে আমার মাকে জান্নাত দিন। সাবার জন্য দোয়া রইল। আল্লাহ হাফেজ।

লেখক-
মাতৃহারা এক সন্তান
সোহরাব হোসেন চৌধুরী
ফোন- ০১৯১১-০৬২০৩৯,


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন