নিজস্ব প্রতিবেদক: একই মানের শিক্ষাক্রম ও বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারের প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে সুবিধাজনক অবস্থায় চাকুরীতে বহাল থাকলেও গত ১৮বছর ধরে সহকর্মীদের চেয়ে বেতন ভাতা ও পদক্রমে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের ডিপ্লোমাধারী ১১শত কর্মকর্তা-কর্মচারী ফরেষ্টারা। ১৯৯৫সালের নতুন চাকুরী বিধি মতে, একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রাপ্ত অন্যরা গ্রেড ১০ এর আওয়তায় বেতন ভাতা পেলেও বনবিভাগের এসব ভাগ্য বঞ্চিতরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন ১৫নং গ্রেডে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে সরকারের অর্থ মন্ত্রানালয়ে অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় দুইবছর আগে। অভিযোগ উঠেছে, অর্থ মন্ত্রানালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইতোমধ্যে নানা অজুহাতে ক্ষত সৃষ্টি করে সারসংক্ষেপের সত্যতা জানতে বনবিভাগের কাছে একাধিকবার পত্র চালাচালি করেছেন। একটির যথাযথ জবাব দেয়া হলে কিছুদিন পর আরেকটি বিষয়ে জানতে চেয়ে ফের চিঠি দেন অর্থ মন্ত্রানালয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রানালয়ের এমন জবাব চাওয়া পদ্ধতির কারনে তাদের স্বপ্নের বেতন-বৈষম্য সহজে দুর হচ্ছেনা।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বনবিভাগের নতুন ফরেষ্টার নিয়োগবিধিতে বলা হয়, ফরেষ্টারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তিনবছর মেয়াদী বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী পাশ হতে হবে। তবে ওইসময় তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তন হলেও বেতন-ভাতার গ্রেড পরিবর্তন হয়নি রহস্যজনক কারণে। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিনবছর মেয়াদী ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম সব বিভাগের জন্য একই বলে গন্য করা হয়। অথচ সরকারের কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্যসহ অন্য বিভাগের ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীদের বেতন স্কেল ১৪-১০, হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ১১-১০ গ্রেডে বেতন স্কেল উন্নীত করা হয়। কিন্তু জীবনবাজি রেখে দেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রক্ষনা-বেক্ষনে জড়িত ডিপ্লোমাধারী বনকর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ মর্যাদা রহস্যজনক কারনে আগের মতই বহাল রাখা হয়। তাদেরকে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ১০ গ্রেডে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ডিপ্লোমাধারী এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তারা দেশের প্রায় এলাকায় বিট কর্মকর্তা, সুন্দরবন টহল ফাঁিড়র কর্মকর্তা, সহকারী ষ্টেশন কর্মকর্তা, সামাজিক বন বিভাগে উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন। অল্প সংখ্যক রয়েছেন বন প্রহরী, বাগানমালী অথবা নৌকা চালক পদে। তারা আরো জানান, বনাঞ্চলের চার থেকে পাঁচ হাজার একর বিশাল জায়গা রক্ষণাবেক্ষনে দিনরাত কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি চালাচ্ছেন স্থানীয় বন প্রশাসনের সকল ধরনের কার্যক্রম। কার্যক্রমে রয়েছে আসামী সনাক্ত পূর্বক বন মামলা দায়ের করা, অস্ত্র রক্ষনাবেক্ষন, হিসাব নিরীক্ষা, নার্সারী উত্তোলন করে নতুন বনায়ন সৃষ্টি। এছাড়াও তাদেরকে পালন করতে হয় বন অপরাধ দমনে গভীর অরন্যে জলপ্রবাহ দেখভাল করা। এসব র্স্পকাতর স্পটে দায়িত্ব পালনে তাদের জন্য রয়েছে ছোট টানা নৌকা, অনেক ক্ষেত্রে তারা পায়ে হাটা কিংবা মোটর সাইকেল চালিয়ে অনেকদুর অতিক্রম করে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক আবদুল মোতালেব ডিপ্লোমাধারী এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ১০ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করার জন্য একটি সার সংক্ষেপ তৈরী করে প্রস্তাব প্রেরন করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইতোপুর্বে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের অর্থ মন্ত্রানালয় ও বন মন্ত্রণালয়ে লিখিত চিঠির জবাব দিয়ে আসছেন। সুত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১২সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রানালয়ের অর্থ বিভাগ বন মন্ত্রণালয়ের কাছে সচিব স্বাক্ষরিত এব্যাপারে সার সংক্ষেপ প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেন। পরে বন মন্ত্রানালয়ের পক্ষ থেকে ওইসময় ফের সার সংক্ষেপটি পাঠানো হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে অর্থ মন্ত্রানালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এব্যাপারে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
১৮বছর ধরে বেতন-বৈষমের সত্যতা স্বীকার করে ডিপ্লোমা ফরেষ্টার এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ঢাকা সামাজিক বনায়ন বিভাগে কর্মরত ফরেষ্টার মো.আমিরুল হাসান বলেন, অর্থ মন্ত্রানালয়ের সদিচ্ছার অভাবে তাদের দাবি বেতন-ভাতা ১০নম্বর গ্রেডে উন্নীত হচ্ছেনা। এ কারনে মাঠ পর্যায়ে ডিপ্লোমাধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছে। তিনি বলেন, একই মানের শিক্ষাক্রমে নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়েও রহস্যজনক কারনে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এব্যাপারে তারা বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বন ও পরিবশে মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানালয়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বনবিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মো.ইউনুছ আলী বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে ডিপ্লোমাধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৈষম্য নিরসনে বিগত ৪বছর যাবৎ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে নানাভাবে চেষ্টা করছি। অর্থ মন্ত্রানালয়ে সার সংক্ষেপটি পাঠানোর পর ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগও করা হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রানালয় সার সংক্ষেপের বিপরীতে বারংবার জবাব চেয়ে চিঠি দিচ্ছে। জবাব দেয়া হলে ফের নতুন চিঠি দেওয়া হচ্ছে অন্য ব্যাপারে জবাব চেয়ে। মুলত এ কারনে ডিপ্লোমাধারী এসব বনকর্মীদের ব্যাপারটি দীর্ঘাক্ষিত হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন