এখন কি একদলীয় নির্বাচন!

নতুন বার্তা: সরকার কী এখন একদলীয় নির্বাচনের দিকে যাবে? এরশাদের নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার পর এ প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কেননা, মহাজোট সরকারে শরিক দলগুলোর মধ্যে এরশাদের জাতীয় পার্টিই প্রধান। আর বাকি যে দলগুলো আছে সেগুলো থেকে একজনও আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়ে আসার যোগ্যতা নেই। কাজেই ধরে নেয়া যায় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না থাকলে একদলীয় নির্বাচন হবে। এরশাদের এই ঘোষণায় আওয়ামী লীগের জন্য শুধু বিব্রতকরই নয় বড়ধরনের সংকট তৈরি করেছে। এরশাদ কী কারণে এই ঘোষণা দিলেন সেটি বড় বিষয় নয়। তিনি নির্বাচনে যাচ্ছেন না সেটিই এখন প্রধান বিষয়। বিএনপি না এলে কীভাবে নির্বাচন করা যায় সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো পরিকল্পনার ‘পরি’ উড়ে যাচ্ছে। শুধু ‘কল্পনা’ই থেকে যাচ্ছে। পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল বিএনপির কিছু নেতা বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে আসবেন। তবে বাস্তবে তেমনটি হয়নি। ৯৬ এর বিতর্কিত নির্বাচনের চেয়েও এবার প্রার্থী সংখ্যা আরো কম। ইসলামি দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মিত্রও দুটি ইসলামি দলে রয়েছে।
বিএনপির বলে পরিচিত মাত্র দুজন নির্বাচনে যাচ্ছেন। এদের একজন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মেজর অব আখতারুজ্জামান। তিনি ৯১ তে বিএনপির এমপি ছিলেন। পরে উল্টোপাল্টা বক্তব্যের কারণে তিনি আর দলে থাকতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আর বিএনপির লোক নন।

আরেকজন হলেন পিরোজপুর-৩ আসনের রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি মূলত জাতীয় পার্টির লোক হিসেবে পরিচিত। এরশাদ আমলের পুরোটা সময় ছিলেন তিনি জাতীয় পার্টিতে। ওই দলের হয়ে এমপিও হয়েছিলেন। পরে ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি হন। এ দুজনের কেউই বিএনপির কোনো হেভিওয়েট নেতা ছিলেন না। এ দুজনের অংশগ্রহণের কারণে কিছুতেই বলা যাবে না যে, বিএনপি নেতারা নির্বাচনে যাচ্ছেন।

৯৬’র চেয়েও প্রার্থী কম
এরইমধ্যে একতরফা নির্বাচনের বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ৩০০ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১০৭ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৯৭, জাপার ২৬১, জেপির ১২০, ওয়ার্কাস পার্টির ৩১ এবং অন্যান্য ৩৯৮। এরা সবাই মহাজোটের প্রার্থী। বাছাইপর্বে এসে এ প্রার্থীর সংখ্যা আরো কমবে। আর জাতীয় পার্টি চলে যাওয়াতে সংখ্যাটি এখনই ছোট হয়ে গেল।

এখন শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করলে আওয়ামী লীগ, জেপি, ওয়ার্কাস পার্টির অনেকেই আর প্রার্থী থাকবেন না। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও সরে পড়বেন। আর স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীকেই বসিয়ে দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা ৪০০তে নেমে আসতে পারে। আর তা হলে দেখা যাবে অন্তত ২০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদ নির্বাচনে এতো কম প্রার্থী আর কখনই ছিল না। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনটিকে সবচাইতে বিতর্কিত নির্বাচন বলে ধরা হয়। ওই নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন ১,৪৫০ জন। এই প্রার্থীর সংখ্যার পার্থক্যটিও এবারের নির্বাচনটিকে একতরফার তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত
আটটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এর অর্থ হলো তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল না হলে তারা নির্বাচিত হয়েই গেছেন। এ আটজন হলেন চাঁদপুর-১ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-৪ রাষ্ট্রপতির ছেলে রিজওয়ান আহমেদ তৌফিক, মানিকগঞ্জ-২ কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, মৌলভীবাজার-৪ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, নোয়াখালী-২ মোর্শেদ আলম, টাঙ্গাইল-৩ আসনে আমানুর রহমান খান।

বাংলাদেশে মূলত প্রধান দল দুটো। অবস্থানও সমানে সমান। সেখানে কেবল একতরফা নির্বাচন হলেই একটি দলের আটজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যা আরো বাড়বে। জাতীয় পার্টি চলে যাওয়ায় মনোনয়নপত্র যাছাই বাছাইয়ের পর এ সংখ্যাটা ২০০ ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রহস্যময় বক্তব্য
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একটি ইংরেজি দৈনিককে সোমবার বলেছেন, বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। যেকোনো সময় ইতিবাচক ফল আসতে পারে। মন্ত্রী দাবি করেছেন, বিএনপির অনেক নেতাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। নাম উল্লেখ না করে যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, “আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।”

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অব. তাজুল ইসলাম বলেছেন, “বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যাতে তারা নিরাপদে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন। আমরা তাদের বলেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন কী করে বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ নেতারা নির্বাচনে আসবেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন অন্য কথা। সোমবার তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী সরকার নির্বাচন করতে বাধ্য। কে এলো, কে এলো না- সেটি কোনো বিষয় না।” তিনি দাবি করেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলোও নেই
সরকার চেষ্টা করেছিল কয়েকটি ইসলামি দলকে নির্বাচনে নিতে। কিন্তু মাত্র দুটি দল ছাড়া কোনো ইসলামি দলই নির্বাচনে যায়নি। দলদুটো হলো তরিকত ফেডারেশন ও ইসলামী ফ্রন্ট। এ দুটি দল সরকার সমর্থক দল হিসেবে পরিচিত। শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নির্বাচনে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ দলটিও নির্বাচন বয়কট করেছে। জাকের পার্টিও সরকারের সমর্থক। এ দলটিও নির্বাচনে যায়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন