সৈকত দখলমুক্ত করতে প্রশাসন মাঠে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগান দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সৈকতের ডায়াবেটিক, বালিকা মাদ্রাসা ও শৈবাল পয়েন্টের ঝাউবাগানে অবৈধ শতাধিক ঝুপড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এদিকে সৈকতে পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণ ও বিড়ম্বনা এড়াতে সৈকতের ঝাউবাগানে ঝুপড়ি ঘর এবং বালিয়াড়িতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলোও উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সৈকতে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বে দেন কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবু হাসান ছিদ্দিক এবং তার সাথে ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পুলিশের একটি দল।

মোঃ আবু হাসান ছিদ্দিক জানান, সমুদ্র সৈকত কে দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিনের নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। রোববার সৈকতের ৩টি পয়েন্টে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়াও সৈকতকে দখলমুক্ত করতে সৈকতের অন্যান্য পয়েন্টগুলো অবৈধ দখল করে তৈরি করা স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে। তিনি জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগানে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে রোহিঙ্গা সহ কিছু লোক। এছাড়া বন বিভাগের এক কর্মচারীও এ অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরো জানান, সমুদ্র সৈকতে অবৈধ স্থাপনা তুলে নিতে গত বুধবার তাদের রোববারের মধ্যে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তা না মানায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।

এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে সৃজিত ঝাউবাগান দখল করে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর গড়ে উঠেছে। এতে ঝাউগাছ উজাড়ের পাশাপাশি ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা নিরাপদ ভ্রমণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। এছাড়াও শ্রীহানি ঘটছে সৈকতের।

এদিকে গতকাল বিকালে সুগন্ধা পয়েন্ট, হোটেল কক্স-টুডের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করে বসতি ও ব্যবসা করছেন বহিরাগত কিছু তরুণ। আগের দিন শনিবার রাতে এসব দোকানে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।

হোটেল কক্স-টুডের পরিচালক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন জানান, রাস্তার দু’পাশে ঝুপড়ি ঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করে মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে। এতে পর্যটকরা চলাফেরা করার সময় হয়রানির শিকার হচ্ছে। এসব প্রশাসনের নজর দেয়ার দাবি জানান তিনি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও পরিবেশ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেনÑ সৈকতে ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্টের উত্তরে সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, কলাতলী, আদর্শগ্রাম, বড়ছড়া, সোনারপাড়া, ইনানী সৈকতের ঝাউবাগান দখল করে তৈরি করা হয়েছে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর। এছাড়াও বাগানের ঝাউগাছ কেটে এসব ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে উপকূল বিলীন হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেয়ার দাবি জানান তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন জানান, সমুদ্র সৈকতের আশপাশে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র সৈকতের ডায়াবেটিক, মাদ্রাসা পয়েন্ট কিংবা শৈবাল পয়েন্ট নয় পুরো সৈকতটা পর্যটকদের কাছে নিরাপদ এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনে প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের নির্দেশে সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। কিন্তু পরবর্তীতে পুনরায় কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট এবং ঝাউবাগানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়। এব্যাপারে গত মঙ্গলবার দৈনিক কক্সবাজারে ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রশাসন তাদের সরে যাওয়ার নিদের্শ দেন। এ নিদের্শ অমান্য করায় রোববার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন