ন্যান্সির ঘটনাটি শত্রুতার জের

ইমরুল শাহেদ : ‘শিল্পীরা হলো জাতীয় সম্পদ। তাদের নিজস্ব একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। তাই বলে সেই রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র তাদেরকে কোনও দলের করে ফেলা উচিত নয়। তাদেরও উচিত নয় সেভাবে কাজ করা।’ এ কথা বলেছেন, স্বনামধন্য গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক ও পরিবেশক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কোনও শিল্পীকে তৈরি করে না। তারা তৈরি হয়ে আসে এবং তাদের কর্মকা- দিয়ে একসময় তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয়। তাদের কোনও কারণে বিচ্যুত করা হলে তাতে দেশের সংস্কৃতিরই ক্ষতি হয়।’ গাজী মাজহারুল আনোয়ার আরও বলেন, ‘দল একটি পক্ষ। সংস্কৃতি আমাদের সকলের। সুতরাং শিল্পীদের বিবেচনা করা উচিত তাদের অবদান দিয়ে এবং তাদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা।’

সম্প্রতি জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ন্যান্সির একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তার বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির কারণে গোটা সঙ্গীত জগত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ন্যান্সি ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং দেখা করেছেন বিএনপির নেত্রীর সঙ্গে। তবে ন্যান্সির বিষয়টি অনেকে আবার অন্যভাবেও দেখছেন। শোনা যাচ্ছে, ন্যান্সির পারিবারিক জীবনকে কেন্দ্র করে অনেকেই তার প্রতিপক্ষ হয়ে আছে। তারা তাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সবসময় তৎপর থাকে। বর্তমান ঘটনায় তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে। অর্থাৎ এ ঘটনা ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত শত্রুতার জের। নেত্রকোনা থানার ওসিও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ন্যান্সির বাড়ি তল্লাশির ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। একটি তথ্যের ভিত্তিতে এই তল্লাশি চালানো হয়। 
গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে অনেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ আসিফ, মনির খান, বেবী নাজনীন, কনক চাঁপা, রিজিয়া পারভীন, দিলরুবা খানমসহ আরও বেশ কয়েকজন। তাদের কাউকে এ ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়নি।
উল্লিখিত এই কয়জনের মধ্যে কনক চাঁপা একটু ভিন্ন। তিনি প্রথমে অন্য একটি দল থেকে সুযোগ সুবিধা পেতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে বিমুখ হওয়ার পর জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এছাড়া কিছু শিল্পী আছেন যারা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তাতে তাদের কোনও সমস্যা হয় না। বিটিভি তাদের গান প্রচার করে। তাদের মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা ছাড়াও রয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্র– কিশোর, রফিকুল ইসলাম, আবিদা সুলতানা। 
প্রশ্ন হচ্ছে, আসিফ, মনির খান, বেবী নাজনীন, কনক চাঁপা, রিজিয়া পারভীন, দিলরুবা খানমের গান কেন বিটিভিতে প্রচার হয় না। সরকারের উপরের লেভেল থেকে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করার কোনও নির্দেশ নেই। তাহলে বিটিভিতে তাদের গান প্রচার হয় না কেন ? জানা গেছে, এক শ্রেণীর প্রযোজক আছেন যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নানা কৌশলে এসব শিল্পীদের রাজনৈতিক অভিধায় চিহ্নিত করে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এতে শ্রোতা-দর্শকের কাছে বিটিভির জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। 
আরও জানা গেছে, বিটিভির এক শ্রেণীর প্রযোজকের সঙ্গে কিছু শিল্পীর লেনদেনের হিসাব আছে। তাতে তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের গান প্রচারিত হয়ে থাকে। বিটিভিকে যতই জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বলা হোক না কেন এসব অসাধু প্রযোজকের কারণে বিটিভির চেহারা বা আদল কেবলই বদলে যাচ্ছে। সচেতন মহল মনে করছেন, অসাধু প্রযোজকদের হাত থেকে বিটিভিকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেই চেষ্টা করার সময় এসেছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন