প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে লন্ডভন্ড উপকূল পাহাড় আতঙ্কে ৫ লাখ মানুষ

ফরিদুল মোস্তফা খান
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে কক্সবাজার উপকূল। জেলার ৮ উপজেলার অনেক নিম্নাঞ্চল ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। পর্যটন শহর কক্সবাজারের অলিতে গলিতে সৃষ্টি হয়েছে জ্বলাবদ্ধতা।
শুধু তাই নয়, শনিবার ও এর আগের কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষনের কারণে জেলার চিংড়ি ঘেরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসলী জমি তলিয়ে পড়ছে পানিতে। এছাড়া মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করায় সেখানকার আশপাশের এলাকার লোকজন অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের যাতায়াত ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত। জেলাব্যাপী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এ সময়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটায় আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত।
পাহাড়ী এলাকাবাসী জানান, পাহাড় ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও তাদের যাওয়ার কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার আবদুল লতিফ বলেন, ‘বাধ্য হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে মানুষ। বিকল্প ব্যবস্থা হলে আমরা অবশ্যই চলে যাব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলাব্যাপী প্রায় ৫ লাখ মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। তার মধ্যে কক্সবাজার জেলা শহরে রয়েছে পাহাড়তলী, লাইটহাউজ, সৈকতপাড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, হাজিপাড়া, হিমছড়ি. বড়ছড়া এলাকা।
এছাড়া মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী, ঝাপুয়া, নয়াপাড়া, নোনাছড়ি, আঁধারঘোনা, মিজ্জিরপাড়া, হোয়ানক ইউনিয়নের ডেইল্যাঘোনা, পুঁইছড়া, কেরুনতলী, পানিরছড়া, বড়মহেশখালীর ইউনিয়নের শুকুরিয়াপাড়া, দেবেঙ্গাপাড়া, সিপাহীরপাড়াসহ পুরো ছোটমহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের লোকজন রয়েছে বেশি ঝুঁকিতে।
তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা সবচেয়ে বেশি আছে টেকনাফ উপজেলায়। এ উপজেলার পৌর এলাকার পুরাতন পল্লান পাড়া, ফকিরামুরা ও ওরুমজুরা, নাইট্যং পাড়া, সদরের পল্লানপাড়া, মোরাপাড়া, জাহালিয়া পাড়া, হাবিবছড়া, রাজারছড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া, জাদিমোরা, নয়াপাড়া, লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, উলুচামরী, লেচুয়াপ্রাং, পশ্চিম পানখালী, পশ্চিম সিকদারপাড়া, খন্দাকাটা, মরিচ্যাঘোনা, রোজারঘোনা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী, ঘিলাতলী, কাটাখালী, মনিরঘোনা, বালুখালী, দৈইংগ্যাকাটা, আমতলী, তেচ্ছিব্রীজ, রইক্যং, পুটিবনিয়া,  লম্বাবিল, লাতুরীখোলা, জোয়ারীখোলা,তুলাতলী, আমতলী, কুতুবদিয়া পাড়া, করাচিপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, বটতলী, নয়াপাড়া, ঝিমংখালী, মিনাবাজার, পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া, পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া, কম্বনিয়া পাড়া, ও রোজারঘোনা এবং বাহারছড়া উপকূলীয় এলাকার শাপলাপুর, চৌকিদার পাড়া, বৃহত্তর শীলখালী, বাইন্যা পাড়া, জাহাজপুরা, হাজমপাড়া, মাথাভাঙ্গা, বড়ডেইল, মারিশবনিয়া, নোয়াখালী পাড়ায় বাসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে।
অপরদিকে, উখিয়া উপজেলার উতরের বিল, টেংখালী, পালংখালী, পাতাবাড়ি, মোছারবিলসহ রামুস ও চকরিয়া উপজেলা কয়েকটি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশের মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অসংখ্য মানুষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী সব মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও সংকটময় মুহুর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে টেকনাফে ভয়াবহ পাহাড় ধে