মুক্ত ছালাউলের পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গা জঙ্গিবাদ বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট: ভয়ঙ্কর রুপ লাভ করছে রোহিঙ্গাদের জঙ্গীবাদ। আর, রোহিঙ্গা জঙ্গীবাদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই, বাংলাদেশের একাধিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও পাকিস্তানের একাধিক চরমপন্থী সংগঠন রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রোহিঙ্গাদেরকে সহিংসতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারির আড়ালেই চলছে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ব্যবহার।

চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশের আইন শৃংখলা বাহিনী জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষকতার দায়ে আটক করে রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতা হাফেজ সালাউল ইসলামকে। সালাউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই গত ২৮ জুলাই রোহিঙ্গা জঙ্গি সালাউল ইসলাম আবারো কার্যক্রম শুরু করেছেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ ও টাকা বিতরণ করেন এই নেতা। এ সময় তার সাথে ছিলো সৌদি আরবের কয়েকজন নাগরিক। এর আগেও জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে দেশ ব্যাপী সহিংসতায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও আরো অনেক সহিংসতায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ব্যবহার করা হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি মুসলিম দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। বিশাল এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে অপরাধ জগতের সাথে। এর বাইরে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীও সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে সতর্ক থাকার আহব্বান জানান। তার মতে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে না পারলে, মুসলিম এই সম্প্রদায়টি বেছে নিতে পারে জঙ্গিবাদের পথ। মালয়েশিয়াসহ ইসলামিক দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা খুব সহজেই বিভিন্ন ইসলামী চরমপন্থী দলের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারে বলেই তার অভিমত।


রোহিঙ্গারা খুব সহজেই চরমপন্থীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। তাদের অত্যাচারিত ইতিহাস খুব সহজেই রোহিঙ্গাদের এই পথে টেনে আনবে। আর এই ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আঁতুড় ঘর হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় শরনার্থী শিবির বাংলাদেশে অবস্থিত। রোহিঙ্গাদের অনেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধের সাথে। এছাড়া কক্সবাজার ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায় রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত।


অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর এই কাজে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হাফেজ সালাউল ইসলামসহ অন্যান্য রোহিঙ্গা নেতারা।


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের কার্যক্রম জোরদার করছে বলেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো দেশে নাশকতা তৈরির জন্য ব্যবহার করছে রোহিঙ্গাদের। হেফাজতের লংমার্চে রোহিঙ্গারা নাশকতা করতে পারে এমন সন্দেহ ছিল আইন-শৃঙখলা বাহিনীর। যে কারণে লংমার্চে অংশ নিয়ে যাওয়ার পথে ৫ শত রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ ছিল, এরা লংমার্চের সময় ঢাকায় নাশকতা সৃষ্টি করবে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বুদ্ধগয়ায় রোহিঙ্গা জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে বলেই মনে করছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত বৌদ্ধ ও সরকার বাহিনীর নির্যাতন শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। নির্যাতিত এই রোহিঙ্গারা নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বেছে নিতে পারে জঙ্গিবাদের মত চরম পথ। আর বিপথগামী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য করতে পারে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী। যারা মুসলিম বিশ্বের অধিকার আদায়ের নামে দেশে দেশে চালাচ্ছে সন্ত্রাস ও বোমাবাজি। আর জঙ্গিদের প্রধান টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের ক্রমেই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার ফলে এটা বলাই যায়, বাংলাদেশ ক্রমেই রোহিঙ্গা জঙ্গিদের জন্য আঁতুড় ঘর হতে চলেছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন