বাংলাদেশের মেয়েদের ভালোবাসা ও জীবন!

নাসরিন লাকী: ভালবাসা যুগে যুগে অনুভবের বিষয়। কেও প্রকাশ করে, কেও করেনা। কিন্তু জীবনে ভালবাসার বড়ই প্রয়োজন। আমি মানুষের ভালবাসা, সুখ, দুঃখ, অতীত, বর্তমান, জীবন কষ্ট, ছেলে মেয়ের বিভেদ, মেয়েদের অসহায়ত্ব, মুক্তিযুদ্ধ, বয়স্কদের জীবন সব কিছু তেই বরাবর এ আগ্রহী। এইজন্য মাঝে মাঝে আমি আমার এমন কোন রুগীদের সাথে যদি কথা বলার মতো সুযোগ
হয় বা সে যদি আমাকে বলতে চায় আমি মন দিয়ে শুনি, তার জন্য একটু সময় বের করি। একটা মেয়ে তার জন্মের পরে নানা রকম প্রতিকূল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশে। ছেলে/মেয়ের বিভেদ, মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন, নিকট জনের গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে প্রতি পদে পদে সে টের পায় সে যে একজন মেয়ে! যেন মেয়ে হয়ে জন্মানো তার জন্য কিছু হলেও অপরাধ! অথচ মেয়েরা ফুলের মতো পবিত্র হয়ে জন্মায়।


ভালবাসার ক্ষেত্রে ছেলেরা এক ধাপ এগিয়ে থাকে সব সময়। তারা যখন যেভাবে পারে ভালবাসা আদায় করতে সাহসী হতে দ্বিধা করেনা। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে একটা মেয়ে কিন্তু সব দিক দিয়ে বড় হয়। শারীরিক, মানসিক, চাওয়া তার কিন্তু সমান, এমন কি কিছু ক্ষেত্রে বুদ্ধি জ্ঞান মেয়েদের একটু এগিয়ে থাকতেও দেখা যায়। মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা গুলিও মেয়েদের অনেক প্রবল থাকে। তবে বাংলাদেশের একটা মেয়ে কাওকে ভালবাসলে বাবা, মা এর কাছে লুকিয়ে রাখে কেন? ভালোবাসাটা কি অপরাধ হয়ে দেখা দেয়? কেন মুখ ফুটে বলতে পারেনা যে সে কাওকে ভালবাসে!


মেয়েদের জীবন আসলেই তালা বদ্ধ! পড়াশুনা করতে গেলে পাহারা দিতে হয় শিক্ষক কে! বাইরে গেলে চোখ রাখতে হয় ড্রাইভার এর উপর! বাসায় থাকলে বাসার কাজের ছেলে! এমন কি নিজের নিকট আত্মীয় দেরও! বিয়ের পরে স্বামীর বন্ধুদের নজর থেকেও মেয়েরা বাদ যায়না! তাহলে মেয়েরা জীবনেও কি স্বাধীনতার স্বাদ পায়না? বলতে লজ্জা নেই পড়াশুনায় অনেক মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক মেয়েই তার নিজের মা, বাবা, স্বামী, দ্বারা সুযোগ হারায় কারন একা বিদেশে যেতে তারা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যেন নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলো কে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। তোমাদের দৌড় বড়োজোর ঐ সীমানা পর্যন্ত।


কথায় বলেনা মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত! আর কেও যদি প্রতিবাদ করে তো সে তখন বেশি বুঝে! মেয়ে তো না যেন জাঁদরেল ! এইসব নানাবিধ গঞ্জনা সয়তে হয়। অসহায় হয়ে নিজেকে নিজের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর উপায় থাকেনা। আর না করাটা একটা অপরাধে পরিণত হয়। এসিড এর স্বীকার ! গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো! চুলের মুঠি ধরে শ্বশুর বাড়ি থেকে বিদায় দেয়া যেন মেয়েদের ভাগ্যে ই জুটে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন