মিতা নূরের মৃত্যুর কারণ স্বামীর পরকীয়া!

ডেস্ক রিপোর্ট
স্বামীর পরকীয়াকে মেনে না নিতে পেরেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূর আÍহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, দীর্ঘ ২৪ বছরের সংসার করার পর যখন স্বামীর দিক থেকে এ ধরনের আচরণ পেয়েছেন,
তখন তা মেনে নিতে না পারার কারণেই আÍহত্যার পথ বেছে নেন এ অভিনেত্রী।
এদিকে, মিতা নূরের বাবা ফজলুর রহমান অভিযোগ করেছেন, মিতার স্বামী শাহানূর রানা তার মেয়েকে মানসিক এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এ সবের কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিতা নূরের স্বামী শাহানূর রহমান রানা। 
অন্যদিকে, পুলিশ বলছে, তারাও এই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করছে। পাশাপাশি ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে মিতা নূরের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা পরিস্কার হয়ে যাবে। পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ বিষয়ে তদন্ত চলবে। 
জানা যায়, স্বামী রানার সঙ্গে পরকীয়া বিষয় নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই মিতা নূরের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সর্বশেষ গত শনিবার মিতা নূর দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে তার মায়ের বাড়ি বাসাবোতে যান। 
এরপর সেখান থেকে নিকেতনে তার স্বামীর অফিসে আসেন। সেখানে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ভাঙচুর করেন মিতা নূর। পরে সেখানে পুলিশও যায়। পুলিশ দুজনকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। 
এরপর রোববার মিতা আর বাসা থেকে বের হননি। দুপুর ৩টার দিকে রানা বাসায় আসলে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন তারা। পরে রাত ১০টার দিকে রানা বাসায় এসে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে এক সঙ্গে ঘুমাতে যান। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমের দিকে তাকালে সেখানে মিতার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান শাহনূর। পরে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।  স্বামী শাহানূর, দুই ছেলে শেহজাদ নূর ও সাদমান নূরকে নিয়ে মিতা নূর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডের ১৬ প্রাসাদ লেকভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টের ছয়তলায় থাকতেন। 
এদিকে, ঘটনার পর পরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ দুপুরে মিতা নূরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আরো জানা যায়, পরকীয়াকে কেন্দ্র করে ইদানীং স্বামী রানার সঙ্গে মিতা নূরের স¤পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। সর্বশেষ শনিবার নিকেতন অফিসে এ নিয়ে কথা বলার পর দুজনার মধ্যেই বিরূপ পরিবেশ তৈরি হয়। একপর্যায়ে মিতা নূর অফিসে ভাঙচুরও করেন। পরে তিনি পুলিশে খবর দেন। 
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আলী আজমের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় মিতা নূর তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চান। কিন্তু, তাকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। এরপর রোববার আর বাড়ি থেকেই বের হননি মিতা নূর। মিতা নূর এই রকম কোনো অঘটন ঘটাতে পারেন, তা আঁচ করতে পেরেই ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তার স্বামী রানা বাসায় ফিরে আসেন। 
বাসায় এসে মিতা নূরকে খাইয়ে আবারও বাসা থেকে বের হয়ে যান। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার বড় ছেলেকে মায়ের দিকে লক্ষ রাখতে বলেন। পরে রাত ১০টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। বাসায় এসে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে মিতা নূর ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে ঘুমাতে যান রানা। 
সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ রানার ঘুম ভেঙে গেলে ড্রয়িংরুমের দিকে তাকালে তার স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।  মিতা নূরের পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে রানার বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মিতা নূরের বাবা ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “রানা মিতা নূরের ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো; যার কারণে এ সব মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই মিতা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।” তিনি মৃত্যুর জন্য রানাকেই দায়ী করেন। 
মিতা নূরের গাড়িচালক সবুজ বলেন, “কিছুদিন ধরে ম্যাডাম (মিতা নূর) ও স্যারের (রানা) মধ্যে স¤পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ম্যাডাম যখন মোবাইল ফোনে কথা বলতেন, তখন খুব উচ্চ স্বরে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতেন।” তিনি বলেন, “শনিবার দুপুরে ম্যাডামকে নিয়ে আমি বাসাবো যাই। এ সময় মোবাইল ফোনে স্যারের সঙ্গে ম্যাডাম খুব জোরে জোরে কথা বলেছেন। এতে করে ম্যাডামের মন খারাপ হয়। এ অবস্থায় ম্যাডাম আমার সঙ্গেও জোরে জোরে কথা বলেন।”
সবুজ বলেন, “বাসাবো থেকে ম্যাডামকে নিয়ে আমি নিকেতনে স্যারের অফিসে আসি। সেখানে স্যারের সঙ্গে ঝগড়া হয়। সেখানে পুলিশও আসে। রাতে সবাই এক সঙ্গে খাবার খেয়ে আমি ম্যাডামকে নিয়ে বাসায় আসি।” তিনি বলেন, “রোববার ম্যাডাম বাসা থেকে বের হননি। আমি স্যারের ছোট ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় আসি। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ডিউটি শেষ করে চলে আসি।” মিতা নূরের পরিবারসহ তাদের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরকীয়ার বিষয়টি মেনে নিতে না পারার কারণেই মিতা নূর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
অন্যদিকে, ২৪ বছরের বিয়ের সংসারে মিতা নূরের দুই সন্তান সাদমান নূর ও শেহজাদ নূর। এর মধ্যে শেহজাদ নূর এবার ও লেভেল পাস করেছে। আর সাদমান সিভিস ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। লিয়ান ফ্যাশন নামের বায়িং হাউজ রয়েছে রানার। গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডের প্রাসাদ লেকভ্যালি নামে অ্যাপার্টমেন্টের ছয়তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটেই তারা সবাই একসঙ্গে থাকতেন।
এদিকে, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আলী আজম বলেন, “কী কারণে মিতা নূরের মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না তদন্ত শেষে জানা যাবে। আমরা এখন তদন্ত করছি।” 
এদিকে, ঘটনার পর সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশ মিতা নূরের  স্বামী শাহনূর রহমান রানাকে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মিতা নূরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর লাশ সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।