মরণ নেশার ট্যাবলেট ইয়াবা ব্যবসা এখন টেকনাফে ওপেন সিক্রেট

বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে শ্রমিক-জেলেরা 

জাফর আলম
মরণ নেশার ট্যাবলেট ইয়াবা ব্যবসা এখন টেকনাফে ওপনে সিক্রেট হয়ে পড়েছে। অল্প সময় ও সহজে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে উপজেলার সর্বত্রে ইয়াবার চালান এক সময় স্থানীয়দের কাছে অবৈধ থাকলেও
এখন অঘোষিতভাবে যেন বৈধতা পেয়েছে। ইয়াবা প্রতিরোধ করে যারা একসময় বাহবা পেতেন এখন উল্টো তাদের ঘৃণা করা হচ্ছে। ফলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলা ইয়াবা ব্যবসায় লগ্নি করে এর বাহকদের হাতে লক্ষ-কোটি টাকার থাকার কারণে স্থানীয় হাট-বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেও ক্রেতা সাধারণ যেসব ভোগ্য পণ্য ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করতে পারতেন- এখন তা আকাশ-কুসুম কল্পনা হয়ে উঠেছে।
এদিকে টেকনাফের উত্তরাঞ্চল হ্নীলা-হোয়াইক্যং ইউনিয়নস্থ প্রায় সবক’টি নাফনদী সংলগ্ন উপকূলীয় চিংড়ীঘেরের শ্রমিক ও নাফনদীতে মাছ শিকাররত জেলেদের দিয়ে অভিনব কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা চলাচ্ছে গডফাদাররা।
কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র ও সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া, জাদিমোরা, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, চৌধুরী পাড়া, জালিয়া পাড়া, পূর্ব ফুলের ডেইল, গোদাম পাড়া, কাস্টমঘাট, স্লুইশ পাড়া, হোয়াব্রাং, মৌলভীবাজার এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ঝিমংখালী, নয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, উনচিপ্রাং, লম্বাবিল, তেচ্ছিব্রীজ, কোনাপাড়া, উলুবনিয়া ও বরইতলী উপকূলীয় পয়েন্ট সংলগ্ন নাফনদীর উপকূলে অবস্থিত চিংড়ীঘেরের শ্রমিক এবং নদীতে মাছ শিকারী জেলেদের ব্যবহার করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ইদানিং অভিনব কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে। নাফ নদী সংলগ্ন চিংড়ীঘের সমূহে নিয়োজিত শ্রমিক এবং নাফনদীতে মাছ শিকারী জেলেরা মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান এনে গোপন স্থানে রেখে দেয়। বিজিবি’র টহলদলের গতিবিধি লক্ষ্য করে সন্ধ্যা ও ভোরে ইয়াবা চালান এনে তুলে দিচ্ছে গডফাদারদের হাতে।
সূত্রমতে, এসব গডফাদাররা নগদ কাঁচা পয়সা আয় করে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুকে নিজেদের ইশারায় চালানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এক কথায় বলতে গেলে টেকনাফের সর্বত্রে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের দৌরাত্ম ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রত্যেক গ্রামের অলিগলিতে ইয়াবা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের নিশিরাত পর্যন্ত আনাগোনা। চাকুরী, পেশাজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষের চলাফেরা ব্যহত করছে। বর্তমানে টেকনাফের প্রত্যন্ত এলাকায় স্থানীয়ভাবে ইয়াবা ব্যবসা বৈধতা লাভ করায় ইয়াবা বিরোধী যাবতীয় কর্মকান্ড ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায় হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে রাস্তার বখাটে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রভাবশালী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন পর্যন্ত এ কাজে বিচরণ করতে বিবেক বাঁধছে না। টাকার লোভে এসব ইয়াবা গডফাদারদের বাহক হয়ে কত অসহায় নারী-শিশু-যুবক জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। এই ইয়াবা ব্যবসার কারণে টেকনাফের স্থানীয় বাজারে বিরূপ প্রভাব এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ও জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখে দ্রুত আইনী পদক্ষেপ জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করেন।