নিষিদ্ধ হলে কী করবে জামায়াত

ডেস্ক রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ে অপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হচ্ছে। দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে হাইকোর্টে। শিগগিরই এ রায় হতে পারে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ বা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে দলটি কী করবে, তা নিয়ে
জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতের কোনো নেতাই মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে দলের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, 'জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনি সুযোগ নেই। নিবন্ধন বাতিলেরও সুযোগ নেই।'

অনেকে মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতের সামনে দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত, 'অনুকূল' সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় থাকা। সরকারের সঙ্গে নতুন করে কোনো সংঘাতে না যাওয়া। দ্বিতীয়ত, নিষিদ্ধ হলে যুদ্ধাপরাধের সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে নতুন নামে দল গঠন কিংবা অন্য নিবন্ধিত দলের সঙ্গে একীভূত হওয়া।

একটি সূত্র জানা যায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে দল গঠন করবেন তরুণ জামায়াত নেতারা। ২০১১ সাল থেকেই এ প্রক্রিয়া চলছে। সাজাপ্রাপ্ত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক উদার গণতান্ত্রিক দল করার চেষ্টা রয়েছে তরুণ নেতাদের। অন্তর্র্বতী হিসেবে ধর্মভিত্তিক ছোট অন্য কোনো নিবন্ধিত দলের সঙ্গে একীভূত হতে পারে দলটি। তবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধ না হলে এ পথে যাবে না জামায়াত। 

জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন কয়েক আইনজীবী। এ মামলার যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ।

নিবন্ধন প্রশ্নে জামায়াত খুব উদ্বিগ্ন না হলেও যুদ্ধাপরাধের দায় কাঁধে চাপায় বিপাকে পড়েছে দলটি। হাইকোর্টে নিবন্ধন বাতিল হলে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আগামী নির্বাচনে নিজ নামে অংশ নিতে পারবে বলে তারা মনে করেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ হলে কখনও রাজনীতিই করতে পারবে না দলটি। 
গোলাম আযমের মামলার রায়ে বলা হয় 'জামায়াত অপরাধী দল'। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, 'স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি এখনও সক্রিয়। আর এর ফলে নতুন প্রজন্মের জামায়াত সমর্থকরাও মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় পুষ্ট। আমাদের জাতির কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, একাত্তরে জামায়াত যে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের সেই মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধার কোনো নিদর্শন তারা এখনও দেখায়নি।' আগের রায়গুলোতেও মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতকে দলীয়ভাবে দায়ী করা হয়।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলেছে, জামায়াত নিশ্চিহ্ন না হলেও ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে এর সত্যতা অস্বীকার করলেও একান্তে অনেকেই স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে জামায়াত। 
জামায়াত সূত্রগুলো বলেছে, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তারা আর সহিংস আন্দোলনে যাবে না; বরং নির্দলীয় সরকারের মতো গ্রহণযোগ্য ইস্যু নিয়ে ঈদের পর বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে রাজপথে ফিরবে জামায়াত। গত ২৮ ফেব্র“য়ারি দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ-ের রায়ের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা করে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয় জামায়াত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন