প্রিপ্যারাটরী স্কুলে রাজবিহারীর কলঙ্ক

এম.আমান উল্লাহ: কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারাটরী উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে খতিয়ান সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরগণ  শপথ নেওয়ার পর পৌর পরিষদ ওই শিক্ষা প্রতিষ্টানের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল শুরু করলে রাজ বিহারী চক্রের মনগড়া সম্রাজ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 
এদিকে পৌরসভার অধীনস্থ পৌর প্রিপ্যারাটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্নীতির খতিয়ান আস্তে আস্তে বেরিযে আসতে শুরু করেছে। রাজ বিহারী চক্রের প্রথম দুর্নীতি নতুন যে কয়জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন তার মধ্যে ৪ জন রাজ বিহারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। রাজবিহারী ৪/৫ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্টানে। ওই চক্রের পরামর্শে জুনিয়র শিক্ষকদের বেতন সিনিয়র শিক্ষকদের সমপর্যায়ে নিয়ে আসে। ফলে জুনিয়র শিক্ষকও ৭/৮ হাজার টাকা করে প্রতিমাসে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছে। যদিও ওই শিক্ষক সমস্ত শিক্ষকের চাকুরীতে নিয়োগের সময় স্থানীয় সরকারের বেধেঁ দেওয়া বেতনক্রম লেখা ছিল। এব্যাপারে রাজবিহারী স্থানীয় সরকারের আদেশকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে জুনিয়রদের বেতনক্রম সিনিয়রদের সমান করতে গিয়ে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পৌর তহবিল হতে চলে যাচ্ছে। যার কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে পৌরসভার। গত ২০১২ সালের জুন মাসে মাত্র ১ দিনের নোটিশে প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে, দায়িত্ব বুঁঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ বিহারীর ঘনিষ্ট শিক্ষক সিন্ডিকেট চক্রের হাতের পুতুল যিনি এস এস সি থেকে বি এড পর্যন্ত ৩য় শ্রেণি প্রাপ্ত দয়াল পালকে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে একেবার অনভিজ্ঞ একজন লোককে এ দায়িত্ব দিয়ে ওই শিক্ষক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজ বিহারী মোটা অংকের বাণিজ্য করেছে। শুধু তাই নয়, গত ২০১২ সালের ১ম সাময়িক পরীক্ষায় খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকার মত আর দয়াল পাল দায়িত্ব নেওয়ার পর ২য় সাময়িক পরীক্ষায় খরচ করেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ভাবে প্রত্যেক পরীক্ষায় ভূঁয়া ভাউচারের মাধ্যমে উক্ত সিন্ডিকেট বিদ্যালয় তহবিলের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে দেখা যায় প্রধান শিক্ষকের অবর্তমানে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যৈষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে। জ্যৈষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমপিও ভুক্তির তারিখ, যোগদানের তারিখ এবং সর্বশেষ বয়সের দিক বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এমপিও ভুক্ত এবং বয়সের দিক থেকে সিনিয়র অন্তত ৪ জন শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে রাজ বিহারী শিক্ষক সিন্ডিকেট নিয়ে অপকর্ম করার জন্য সবচেয়ে অনভিজ্ঞ এবং অকর্ম দয়াল পালকে নিয়োগদান করেছেন। আব্দুল কাদের নামের একজন কম্পিউটার শিক্ষক থাকার পরও রাজ বিহারী তথ্য গোপন করে তার নিকট আত্মীয় সুজন দাশকে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ ২ জন কম্পিউটার শিক্ষক থাকার পরও অতি সম্প্রতি স্কুলের পিয়ন জীবন মল্লিকের ছেলে পিন্টু মল্লিককে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যদিও কম্পিউটার বিষয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নেই। বিদ্যালয় হতে প্রতি মাসে তাকে বেতন দেওয়া হয়। যেহেতু বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া হয় পৌর তহবিল হতে। তাহলে কোন আইনের বলে বিদ্যালয় হতে বেতন দেওয়া হয় তা জিজ্ঞাস্য বিষয়। জীবন মল্লিকের চাকুরীর পদ বিদ্যালয়ের মালী হিসেবে। তিনি এখন  সমস্ত পিয়নদের সর্দ্দার ও সবার উপরে তিনি খবরদারী করে থাকেন। খবরদারী ও তদারকি সহ্য করতে না পেরে ইতিমধ্যে একজন পিয়ন চাকুরী ছেড়ে চলে গেছেন। জীবন মল্লিক দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ের পিছনের ভবনের এক বিরাট অংশ দখল করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ থেকে রান্নাবান্না করা হয় এবং বৈদ্যুতির বাতি ও ফ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ তিনি প্রতিমাসে বেতনের সহিত ঘরভাড়া নিচ্ছেন কিন্তু ঘরভাড়া কেটে দিচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ তার দুর্নীতির কারণে একবার তাকে বিদ্যালয়ের সীমানা থেকে স্বপরিবারে বের করে দিলেও পরে সুবিধাভোগীর সহযোগীতায় আবার এসে বসবাস শুরু করেছে। রাত্রি বেলা পাহারা দেওয়ার জন্য নৈশ প্রহরী থাকলেও ওই নৈশ প্রহরী প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পৌরসভার অফিসে ওএসডি হওয়া পৌরসভার কর্মকর্তার ফর ফরমায়েসে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে সরকার কঠোরভাবে প্রাইভেট এবং কোচিং বাণিজ্যের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করলেও ঐ সিন্ডিকেট চক্রের সার্বিক তত্বাবধানে ৮ম ও ১০ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কোচিং বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিভাবক জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দশম শ্রেণির ছাত্র বলেন, স্কুলে কোচিং করলেও টাকা দিতে হবে না করলেও টাকা দিতে হবে, এটাই হচ্ছে আমাদের স্কুলের রীতিনীতি। এসব অপর্কমের মূলহুতা সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ। এ ব্যাপারে পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি আবদুল হক সহ পৌর সচেতন নাগরিকরা এই দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, পৌরসভার বিপুল অংকের অর্থ আতœসাৎকারী পৌর পরিষদের অভিশাপ্ত ব্যক্তি কথিত কাউন্সিলর রাজবিহারী দাশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জোর দাবী জানিয়েছেন। এই অভিযোগ নিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজ বিহারী দাশের সাথে যোগাযোগ করলে  তিনি দৈনিক কক্সবাজার বাণী কে জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ন ভিত্তিহীন। তবে আমি কখন কোথায় কি করেছি তা এ মহুর্তে স্মরণ নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন