নাখোশ আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

প্রথম আলো : সাক্ষাত্কারের বদলে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় নাখোশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁরা বলছেন, সংসদীয় আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হলে প্রকৃত অবস্থা তাঁরা দলীয় সভানেত্রীকে অবহিত করতে পারতেন। এতে মনোনয়ন-বাণিজ্যও কমে আসত। সোমবার বেলা তিনটা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও দলটির সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার মতবিনিময় হচ্ছে। এতে শেখ হাসিনা মহাজোট-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সামগ্রিক একটি দিকনির্দেশনা দেবেন।
ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গণভবনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। দুপুর ১২টায় গণভবনের প্রবেশদ্বার খোলা হয়।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একটি অংশ প্রথম আলো ডটকমকে বলেছে, তাঁরা শুনেছেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দূরে সরিয়ে কোন্দল জিইয়ে রাখা এবং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নিয়ে যাঁরা এত দিন ব্যস্ত ছিলেন, তাঁদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ ছাড়া বিতর্কিত নেতাদের জায়গায় নতুন মুখ এবং দলের ত্যাগী নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন। ফলে সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠিত হলে কে, কেমন, সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারতেন শেখ হাসিনা।
কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেছেন, এর আগেও তাঁরা সভানেত্রীর সঙ্গে এমন ঢালাও মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কারের পরিবর্তে মতবিনিময় করে লাভ কী হবে, সেটি তাঁদের বোধগম্য নয়। তাঁরা বলেন, শেখ হাসিনা প্রায় সবার চেহারা ও নাম মনে রাখতে পারেন। সাক্ষাত্কার হলে অন্তত তিনি নাম ও চেহারা মনে রাখতে পারতেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মঞ্জুরুল হক প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচনে সাক্ষাত্কার ছাড়াও নিশ্চয় নেত্রীর আরও অন্য কোনো মাধ্যম আছে। তিনি নিশ্চয় সবকিছু বিবেচনা করেই দলীয় প্রার্থী বাছাই করবেন। তাঁর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।’

যশোর জেলার একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘মনে করেছিলাম দলীয় সভানেত্রী আমাদের সরাসরি সাক্ষাত্কার নেবেন। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।’ তিনি জানান, এতে কিছুটা মন খারাপ তাঁর।

আওয়ামী লীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচন খুবই সন্নিকটে। ৩০০ আসনে দুই হাজার ৬১১ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী। সবার সঙ্গে দলীয় সভানেত্রী ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা সাক্ষাত্কারের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন না, বিধায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মতবিনিময় শেষ হলে সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা বিভাগভিত্তিক আবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে জরিপ করেছেন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কাকে প্রার্থী দিলে ভালো হয়, সেটা প্রধানমন্ত্রী জানেন। আলাদাভাবে সাক্ষাত্কার গ্রহণ শুধু সময় ক্ষেপণ হবে। এ কারণে সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠিত হবে না। তা ছাড়া সাক্ষাত্কার গ্রহণই প্রার্থী বাছাইয়ের উত্তম মাধ্যম, এ কথা তাঁদের জানা নেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল মাল আবদুল মুহিত, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও দীপু মনির আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক।

এসব আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিতির কারণে এসব নেতার তৃণমূলে অবস্থান নাজুক। সাক্ষাত্কার নিলে এ বিষয়গুলো সংসদীয় বোর্ডকে নির্ভয়ে অবহিত করা যেত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দীপু মনির আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী সুজিত রায় নন্দী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এলাকায় আমরা কাজ করছি, নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর জন্য কাজ করব।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩০০ সংসদীয় আসনে দুই হাজার ৬১১ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে যুবলীগের প্রায় ৩৫ জন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৫ জন, কৃষক লীগের ২০ জন, যুব মহিলা লীগের ১০ জন, জাতীয় শ্রমিক লীগের ১০ জন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের পাঁচজন। সদ্য যুবলীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির ১৪৯ জনের সহ-সম্পাদকের মধ্যে ৯০ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদরা প্রায় সবাই মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কেউ মনোনয়ন ফরম কেনেননি বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন