জেএসসি’র ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পর গণিতের প্রশ্ন ফাঁস

ডেস্ক রিপোর্ট: জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের খবরে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে একদিকে প্রশ্ন না পাওয়া পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোস দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে অভিভাবকদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে শংকিত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটি কমিটিও গঠন করেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকজন অভিভাবক টেলিফোনে জানান, ইংরেজির প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর সারা দেশে ‘প্রশ্নবাণিজ্য’ শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম, রংপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, খুলনা, চাঁদপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাজেশনের নামে কোথাও ছাপানো আবার কোথাও হাতে লেখা কথিত ‘প্রশ্নপত্র’ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, কথিত প্রশ্ন বিক্রিকালে কুড়িগ্রামে তিনজনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
অভিভাবকরা জানান, দেশে বিভিন্ন স্থানে এর আগে ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্ন পেয়েছিলেন তারা। এরপর ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নের নামে (‘ক’ ও ‘খ’ সেট হিসেবে দুটি সেট) বাজারে যা পাওয়া যায়, তার সঙ্গে পরীক্ষার পর মূল প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়ায় তারা এক রকম হতভম্বই হয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে একইভাবে তাজ্জব বনে গেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও। অবশ্য শনিবারের বিজ্ঞানের পরীক্ষা শেষে আগের দু’দিন বাজারে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর অভিভাবকদের প্রশ্নের পেছনে ছোটা কিছুটা কমেছে।
এরপরও গত কয়েক দিন ধরে গণিতের নামে ‘কথিত প্রশ্ন’ দেদার বিক্রি হচ্ছে। সাজেশনের নামে এরকম দুটি সেট যুগাšত্মরেও এসেছে। আজ জেএসসির গণিত আর জেডিসির (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নেয়ার সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আšত্মঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, বিষয়টি তারা অভিযোগ আকারে নিচ্ছেন। তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের মতামত জানাবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী ঢাকায় ফিরলে বিষয়টি নিয়ে চূড়াšত্ম সিদ্ধাšত্ম নেবেন তারা। এখন পর্যšত্ম এ নিয়ে কোনো সিদ্ধাšত্ম হয়নি।’

মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মু¯ত্মাকিম বিল্লাহ ফারুকী ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু তারপরও পরীক্ষার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তখন কোনো সিদ্ধাšত্ম নেয়নি। এ ব্যাপারে মু¯ত্মাকিম বিল্লাহ ফারুকী যুগাšত্মরকে জানান, ‘আমি মোট দুটি প্রশ্নের ব্যাপারে অবহিত করি। এর একটি ইংরেজি আরেকটি বাংলা। কে আমাকে দিয়েছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। কেননা বিভিন্ন হাত ঘুরে তা আমার হাতে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার পর অবশ্য আমি তা মিলিয়ে দেখিনি যে কতটুকু মিলেছে। তবে আমাকে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সাজেশনে যতটুকু মেলে ততটুকু মিলেছে। এর বেশি কিছু মেলেনি।’ ডিসি ফারুকী আরও জানান, ‘আমি যে দুটি প্রশ্ন পাঠাই তার মধ্যে বাংলা বিষয়টি পেয়েছি পরীক্ষার পরে।’

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) এএস মাহমুদ বলেন, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ শেষে করণীয় জানানো হবে।

একই উৎস থেকে ফাঁস : নাম প্রকাশ না করে ঢাকা বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তারা মনে করছেন যে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে একই উৎস থেকে। কেননা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রিপজিশন বিষয়ক প্রশ্নটির যতটুকু লেখার পর ডট দেয়া শুরু হয়, তারা জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নেও সেভাবে পেয়েছেন। অন্যান্য প্রশ্নের ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা গেছে। এ থেকে তারা মনে করছেন যে, একটি মাত্র উৎস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপী। ওই সূত্র আরও জানায়, পর্যালোচনায় এসব বিষয় বের হওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যšত্ম মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধাšত্ম নেয়নি বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।

তিন সদস্যের কমিটি : জানা গেছে, ইংরেজিসহ অন্যান্য প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদšেত্ম ঢাকা বোর্ডের উপ-পরিচালক ফজলে এলাহীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দু’সদস্য হলেন- উপসচিব (প্রশাসন) নাজমুল হক ও উপসচিব (বৃত্তি) আবুল হোসেন মোল্লা। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

নজরদারিতে পেশাদার কোচিং ও ফটোকপি : প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কোচিং সেন্টার এবং ফটোকপির দোকানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্কুলের কোচিংবাজ এবং অসৎ শিক্ষকরাও নজরদারিতে। প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিজ নিজ কোচিংয়ে ছাত্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সাজেশনের নামে ফাঁস হওয়া কথিত প্রশ্ন বিতরণ করা হচ্ছে। যেসব কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে আজিমপুরে ভিকারুননিসা স্কুলের পাশে একটি, কবরস্থানের সামনে একটি, ‘সা’, ‘ই’ এবং ‘উ’ আদ্যাক্ষরের কোচিং সেন্টারগুলো রয়েছে।

কুড়িগ্রামে আটক তিন, পরে মুক্ত : কুড়িগ্রাম থেকে যুগাšত্মর প্রতিনিধি আহসান হাবীব নীলু জানান, জেলায় ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত বাংলা ও ইংরেজির ৪টি পরীক্ষায় সাজেশন আকারে প্রাপ্ত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যাওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্কুল ও কোচিংয়ের শিক্ষকরা ছুটছেন এসব প্রশ্নের পেছনে। বৃহস্পতিবার রাতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজার থেকে প্রশ্নপত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে কম্পিউটার দোকানের হাসান, দিলীপ ও কোচিং শিক্ষক বিশ্বজিৎ নামে তিনজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, লাখ টাকায় রফাদফার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়ার পর তা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে এখনও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।

গণিতের কথিত প্রশ্ন : শনিবার বিকালে গণিতের প্রশ্নের নামে কথিত প্রশ্নপত্র বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফটোকপি করা বা হাতে লিখে বিনিময়ে ঝুঁকির কারণে অনুশীলনী আর তার প্রশ্নের নম্বর দিয়েই সংক্ষেপে কথিত প্রশ্নপত্র চালাচালি চলছে। এরকম মোট দুটি সেটের নামেই প্রশ্নপত্র বিক্রি চলছে। যুগাšত্মরে আসা ওই দুটির মধ্যে কিছু অংশ দেয়া হল। কথিত ‘ক’ সেট প্রশ্নপত্রে রয়েছে, জ্যামিতি অংশে সম্পাদ্য : কোনো চতুর্ভুজের তিনটি বাহু ও দুটি কোণের দৈর্ঘ্য দেয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে/কোনো চতুর্ভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য ও দুটি অšত্মর্ভুক্ত কোণ দেয়া আছে।

চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে। পিথাগোরাসের উপপাদ্য : একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের সমষ্টির সমান। ‘খ’ সেট প্রশ্নে রয়েছে, পাটিগণিত অংশে (১) বার্ষিক মুনাফা শতকরা ১০ টাকা থেকে কমে ৮ টাকা হলে, ৩০০০ টাকার ৩ বছরের মুনাফা কত কম হবে? (২) একটি আয়তাকার বাগানের দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার এবং প্রস্থ ২৪ মিটার। এর ভিতরে চারদিকে ২ মিটার চওড়া একটি রা¯ত্মা আছে। রা¯ত্মাটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর। এই অধ্যায় থেকে আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে- একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার এবং প্রস্থ ৪০ মিটার। পুকুরের পাড়ের বি¯ত্মার ৩ মিটার হলে, পাড়ের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর। বরাবরের মতো এই প্রশ্নপত্রও ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যুগাšত্মর 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন