কক্সবাজার পর্যটন শহরে ওরা রাতের ত্রাস,ওরা ভয়ঙ্কর!

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার পর্যটন শহরে ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়াচ্ছে নারীরা। ছিনতাই, ডাকাতি, প্রতারণার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে। সম্প্রতি মাদক, ইয়াবা পাচার,দেহ ব্যবসা, ছিনতাই, খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের সহযোগী হয়ে উঠেছে নারী অপরাধীরা। কক্সবাজার পর্যটন শহর কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক নারী অপরাধী। বিভিন্ন সময় পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের জালে আটক হওয়া একাধিক নারী অপরাধী অকপটে স্বীকার করে তাদের সেসব অপরাধের কথা। অনেক সময় বর্ণনা করেছে একজন নারী হয়ে কিভাবে আরেক জন নারীকে ফাঁদে ফেলে তুলে দেয় ধর্ষকদের হাতে।
আবার পর্যটকদের খদ্দের বানিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া গাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তা বিক্রি করে দেয়া, পাত্রী সেজে ধোঁকা দিয়ে একাধিক পুরুষকে বিয়ে করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও অফিস কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে সন্ত্রাসী লেলিয়ে টাকা আদায়, বিভিন্ন ফ্ল্যাট ,বাসাবাড়িতে নারী কর্মীদের দিয়েদেহ ব্যবসা ও নারী কর্মীদের লাগিয়ে ডাকাতি, রাস্তাঘাটে ছিনতাইসহ সব অপরাধকান্ডে দিনে দিনে বাড়ছে নারীর স¤পৃক্ততা।
কক্সবাজার শহরের ঝিলংজা ল্যান্ডিং স্টেশনের পেছনে, পাহাড়তলি, বৈদ্যঘোনা,টেকপাড়া, গোলদীঘিরপাড়, বাজারঘাটা, লালদীঘিরপাড়,শহীদ মিনার এলাকা, ডায়বেটিকস হাসপাতাল পয়েন্ট, হলিডেরমোড়,লাবণী পয়েন্ট, সীগাল হোটেল পয়েন্ট, সুগন্ধা বীচ পয়েন্ট, কলাতলি লাইট হাউসপাড়া, কলাতলি,দরিয়ানগর এলাকায় এবং শহরের আদালত পাড়ায় এসব নারী অপরাধিদের অবাদ বিচরণ। মুখেনেকাব আর মুখ ডেকে প্রধান সড়কে দাড়িয়ে থাকেন। আবার অনেকে বাসা কিংবা ফ্ল্যাট বাড়ীতে অবস্থান করে মোবাইলে খদদরের সাথে কন্ট্রাক করে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল কটেজ কিংবা বাসাবাড়ীতে চলে যান।
শহরের আদালত পাড়ায় দেহ কর্মী আলেয়া আরেক দেহ কর্মী নুর জাহানকে একদল পর্যটকের কাছে। কৌশলে তুলে দেয়া হয়। পর্যটকদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার মত ঘটনায় জড়িত ছিল আলেয়া নামের ওই নারী।
নারী অপরাধী সাবেকুন্নাহার স্বীকার করেন কেবল নুর জাহান, নুর নাহার ও রুমা নয় এদের মতো আরো অনেক নারীকে ব্যবহার করে তারাই চক্র করে পর্যটকদের ফাঁদে ফেলে প্রতিনিয়ত সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় সদস্যদের সাথেও কৌশলে খদ্দের কিংবা পর্যটকদের ব্ল্যাকমেইলিং করা কাজে জড়িত রয়েছে আরো ২৫ নারীকে। তার মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয়ে রয়েছে অনন্তত ১৫ জন নারী। শহর ও শহরতলিতেই কয়েকটি সংগঠিত অপরাধী চক্রের হয়ে কাজ করেন ওই সব নারী নেত্রীরা। তাদের স্বামীও রয়েছে একের অধিক। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের প্রলোভনে ফেলে এখানেই আনা হচ্ছে। তাদের লেলিয়ে দিয়ে নিয়ে পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের ( খদ্দের) সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে ।সাবেকুন্নাহারের অপরাধী চক্রের সদস্য জহির, রাজু ,সাজু,নাছির , আমির, আবুইয়া,খোকা সহ আরো ১০.১২ জন। এর মধ্যে রাজু নামের ব্যক্তি তার স্বামী।
কক্সবাজার শহর ও কলাতলির বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে ও কটেজে ঝাড়–দারের কাজ নিয়ে চালাচ্ছে অন্য কম ধান্ধা। ঝাড়–দারের চাকুরী নিয়ে তারা চালাচ্ছেদেহ ব্যবসা সহ যত সব জঘন্যতম অপরাধ। দেহ কর্মী সাবেকুন্নাহার ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে পিতা-মাতা, ভাইবোনের কথা চিন্তা করে বিয়ে না করে আয়ের টাকায় পিতার সংসার চালাচ্ছিলেন। 
সম্প্রতিক সময়ে রেন্ট-এ কারের মাইক্রোবাস গাড়ি ভাড়া নিয়ে সে গাড়ি নিজের বলে বিক্রি করে দেয়া এক নারী অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছিল কক্সবাজার থানা পুলিশ। ুওই নারী অপরাধীর নাম ইমা। বিভিন্ন সময় সে রেন্ট-এ কার থেকে মাসিক চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া নিয়ে পরে জাল কাগজ তৈরি করে তা বিক্রি করে দিয়েছে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছেবেশ কিছু নারীর বিরুদ্ধে।
সংগবদ্ধ নারী প্রতারক চক্র স¤পর্কে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শহরেই ১০/১২ জন নারীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ আছে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি অপরাধ কা-ে স¤পৃক্ত নারী অপরাধীদের পাকড়াও করা হলেও এখনও অনেক চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি নারীদের সব ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার অপরাধী। তারা একটি সংঘবদ্ধ গ্র“পের সদস্য। তাদের গ্র“পের সদস্য সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ জন। এরা বিভিন্ন গ্র“পে বিভক্ত হয়ে গভীর রাতে পর্যটন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে থাকে। প্রয়োজনে তারা গাড়ি চালককেও হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সিএনজি ও মোটর সাইকেল ছিনতাই করে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আজাদ মিয়া বলেন, আসলে অপরাধী অপরাধীই, আমাদের চোখে সব অপরাধীই সমান। তবে এটা ঠিক, সম্প্রতি নারী অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টির দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বলে নারী অপরাধীরাও পার পাচ্ছে না, ধরা পড়ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন