প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল চেষ্টার অভিযোগ বাদির বিরুদ্ধে
মোঃ মিজানুর রহমান আজাদ
কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলা নিয়ে রশি টানাটানির অভিযোগ উঠেছে খোদ নিহত শিশুর পিতা বাদীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়।
উল্লেখ্য, বিগত বছরের ১৬ মার্চ চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ঘোনা পাড়া গ্রামের ফরিদুল আলমের শিশু পুত্র আরিফ(৩) খেলতে গিয়ে নিখোজ হয়ে যায়। পরে শিশুটিকে জখম অবস্থায় মৃত উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনায় নিহতের পিতা ফরিদ বাদী হয়ে সন্দেহভাজন ৮ জনকে বিবাদী করে কক্সবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। যার জিআর মামলা নং ২০৬/১২। এ মামলায় এজাহারভূক্ত আটক ও বাইরে থাকা কয়েকজন আসামী পরে জামিনে মুক্ত হয়। এদিকে উক্ত চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তভার তৎকালীন ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জকে দেয়া হলেও মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় পরবর্তীতে দায়িত্ব দেয়া হয় বর্তমান তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে। পরে তিনি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে এলাকার লোকজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বেরিয়ে আসতে শুরু করে শিশু হত্যার চাঞ্চল্যকর রহস্য। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত এজাহার বহির্ভূত রবিউল আলম প্রফুল্য নামের এক ব্যক্তিকে গত ১৫ ফেব্র“য়ারী আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। উক্ত রবিউলকে আটকের পর শিশুর পিতা বাদীর আতে ঘা লাগে। সে তাকে রক্ষা করতে নানা অপচেষ্টা শুরু করে। এমনকি আটক ব্যক্তি তার পুত্র হত্যায় জড়িত নয় বলে কোর্টে নারাজী দিলেও সাক্ষ্য প্রমাণের আলোকে কোর্ট তা গ্রহণ করেনি। এদিকে উক্ত বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনজুর কাদের ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে জানান, তার উপর তদন্তভার অর্পিত হওয়ার পর সরেজমিনে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ঘটনার গোপন রহস্য। দীর্ঘদিন ধরে মামলার এজাহারভূক্ত অন্যতম আসামী ডা ঃ স্বপন গংয়ের সাথে রবিউলের জায়গা সংক্রান্ত বিরুধ চলে আসছিল। অন্যদিকে শিশুর পিতা ফরিদ রবিউলের আত্মীয়। ঘটনার দিন লোকজন রবিউলকে শিশুটি নিয়ে যেতে দেখেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে তদন্ত কর্মকর্তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাবরে প্রতিবেদনটি দাখিল করলে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশক্রমে রবিউলকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করলে আরো চাঞ্চল্যকর গোপন তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নিহত শিশুর পিতা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, আটক ব্যক্তি তার আত্মীয়, সে উক্ত ঘটনায় জড়িত নন এবং ঘটনার পর থেকে নিরপত্তার স্বার্থে রবিউলের দেয়া টাকা পয়সায় কক্সবাজার শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে সে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছিল। তাই তাকে এ মামলায় জড়ালে জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এতেও তদন্ত কর্মকর্তা ফোনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তার অবস্থানের উপর অটল থাকলে বাদী ফরিদ নিজে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কে আসামী হবে না হবে তা উল্লেখপূর্বক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে প্রতিবেদনটি নিয়ে পুলিশ সুপার মহোদয় অফিসে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রতিবেদনের সাক্ষর দেখে তার সন্দেহ জাগলে ফোনে বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তাকে অবগত করে। তৎক্ষনাত সংবাদ পেয়ে অফিসে পৌঁছার পূর্ব মুহুর্তেই বাদী কৌশলে সটকে পড়ে। পরে তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে বাদী পক্ষ আরো মরিয়া হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে মামলার আসামী ডাঃ স্বপনসহ যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদেরকে তদন্ত কর্মকর্তার আত্মীয় বলে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে মামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চালাতে থাকে। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা বলেন যদি কেউ আত্মীয় বলে প্রমাণ করতে পারে প্রচলিত আইনে যে কোন ব্যবস্থা মাথা পেতে নেবেন। অপর দিকে এজাহারভূক্ত আসামী ডা. স্বপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, উক্ত শিশু হত্যার সাথে তারা কোন ভাবেই জড়িত নয়। শুধু মাত্র রবিউলের সাথে জায়গা জমি এবং ফরিদের সাথে সীমানা বিরুধের জেরকে পুজি করে রবিউল কৌশলে শিশুটিকে হত্যা করে তার পরিবারের উপর চাপিয়ে দিয়ে হয়রানীপূর্বক জায়গা দখলে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। বর্তমানে স্থানীয় লোকজনের স্বাক্ষ্যের ভিত্তিতে নিজেরাই ফেঁসে গিয়ে জেলে আটক আছে। এ নিয়ে তারা কোন ভাবেই মামলাকে প্রভাবিত করতে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আতাত করেনি। তারপরও উক্ত ঘটনা সুষ্ট তদন্তপূর্বক প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি দাবী করেছেন হয়রানির শিকার স্বপন গং। অন্যদিকে বাদী পক্ষের লোকজনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া না যাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন