পর্যটন শিল্পে চরম ধস ।। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ

ফরিদুল মোস্তফা খান
কক্সবাজার পর্যটন এলাকার শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২ বছর ধরে পর্যটন শিল্পে মন্দাবস্থা দেখা দেওয়ায় উপর্যুপরি লোকসানের মুখে মালিকপক্ষ সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আরও বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধের মুখে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে উপর্যুপরি লোকসানের কবল থেকে বাঁচতে অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া অবিশ্বাস্যভাবে কমানো হয়েছে। এরপরও কাক্সিক্ষত পর্যটকের দেখা মিলছে না। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, গত এক যুগে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি ঘটেছে। একযুগ আগে কোনো ফাইভ স্টার বা ফোর স্টার হোটেল ছিল না কক্সবাজারে। থ্রি-স্টার মানের ৩-৪টি হোটেল ছিল মাত্র। সবগুলো মিলে ২২-২৩টি আবাসিক হোটেল এবং ৫০টির মতো রেস্তোরাঁ ছিল। সেখানে বর্তমানে চারটি ফাইভ স্টার মানের, দুটি ফোর স্টার মানের এবং অর্ধ শতাধিক থ্রি-স্টার মানের আবাসিক হোটেল ছাড়াও ৩ শতাধিক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার শহর ছাড়াও উখিয়া-টেকনাফে পর্যটন ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মানসম্মত রেস্ট হাউসও গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারে ৩ শতাধিক আবাসিক হোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। যেগুলোতে বছরে প্রায় আড়াই কোটি পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা লক্ষ্যণীয়ভাবে উন্নতি করায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারী কক্সবাজারে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে মারাত্মক ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। এর ফলে একদিকে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকেই নিজেদের হোটেল বিক্রি করে ভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। আবার মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে যারা হোটেল ব্যবসা করেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। এনিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে ভাড়াটিয়া পক্ষের নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
কক্সবাজার মোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার ঘটনার কথা স্বীকার করে জানানÑ শেয়ার বাজারে ধস, রাস্তাঘাটের অবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের হক গেস্ট ইন এর সত্ত্বাধিকারী সিরাজুল হক জানান, গত ৪ মাস ধরে অন্য ব্যবসার টাকা দিয়ে হোটেল চালাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে হোটেল বন্ধ করে দিতে অথবা বিক্রি করে দিতে তিনি বাধ্য হবেন।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, গত ২ বছর ধরে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। আগে যেখানে বছরে অন্তত ৫০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসত, সেখানে তা এক পঞ্চমাংশ বা ১০ লাখের নিচে নেমে এসেছে।
এদিকে উপর্যুপরি লোকসানের মুখে হোটেল মালিকরা চলতি অফ সিজনের জন্য তাদের কক্ষ ভাড়া নজিরবিহীনভাবে কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সাগরপাড়ের জনপ্রিয় ৫ তারকা হোটেল সী-গালসহ প্রায় সকল হোটেল কক্ষ ভাড়ার উপর শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ এবং গেস্ট হাউস মালিক সমিতির বেশির ভাগ হোটেল শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন