আ.লীগ সরকার গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
৭৪ সালের মতো আওয়ামী লীগ গণহত্যা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “দেশ শাসনে ব্যর্থ হয়ে ৭৪ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। আবার ঠিক একই কায়দায় আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে এবং গণহত্যা শুরু করেছে।” মির্জা ফখরুল বলেন, “গভীর রাতে সরকার দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করেছে। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করেছে। সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, একদলীয় বাকশালে ফিরে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।” তিনি বলেন, “এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে।” শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের ৩২তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তৃতা দেননি তিনি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ভিসি ড. মোস্তাহিদুর রহমান, ঢাবির শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. এম ওসমান ফারুক, সাংগঠনিক স¤পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
‘আবার এক-এগারো এলে বিরোধী দলীয় নেতাকে জেলে যেতে হবে’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনার কি মনে নেই, আপনি হাসতে হাসতে মঈন উদ্দিন, ফখরুদ্দীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন?” তিনি বলেন, “আপনি বলেছিলেন, এই সরকার আপনাদের আন্দোলনের ফসল। আপনি বিমানবন্দরে বলেছিলেন, ফখরুদ্দীন, মঈন উদ্দিন সরকারের সব কাজে বৈধতা দেবেন। তাহলে, এখন আপনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা আপনার চিরাচরিত মিথ্যাচার।” তিনি  বলেন, “নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল, জুলুম, হত্যা, গুম এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকার খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। বিএনপির এমন কোনো নেতা নেই যার নামে ২৫টির কম মামলা আছে।” নাম উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আমাদের দলের নেতা এমকে আনোয়ার, বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, মো. শাহজাহান, রিজভী আহমেদসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন কারাগারে।” দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বন্ধুগণ, আমাদের আÍতৃপ্তির কোনো কারণ নেই। সামনে জোর লড়াই অপেক্ষা করছে।” 
মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমান ৭৫ থেকে ৮১ মাত্র পাঁচবছরে বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি বটমলেস বাস্কেট থেকে দেশকে উদীয়মান ব্যাঘ্রে পরিণত করেছিলেন।” সভাপতির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা সরকারের মন্ত্রীদের ব্যাপক সমালোচনা করে বলেন, “তারেক রহমানকে সুবিধা মতো সময়ে লাখ মানুষ সম্মান জানিয়ে দেশে আনবে।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার শুভাকাঙ্খী ও সুহৃদ হিসেবে বলতে চাই, এখনো সময় আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিন।” তথ্যমন্ত্রী ইনুকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান স¤পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করেন। তা না হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ!”  স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা এমন সব কর্ম করেছেন এখন লেভেল প্লেইং ফিল্ডের মাধ্যমে নির্বাচনে যেতে ভয় পান। সারাদেশের মানুষ আজ এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য।” 
তিনি বলেন, “এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। তারা তারেক রহমানকে ভয় পায়। তারেক রহমানের একটি বক্তৃতার কারণে পুরো সরকার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে।” ড. মোশাররফ বলেন, “আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, জিয়াউর রহমান সেখানে সফল হয়েছেন। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের প্রতি তাদের এত গাত্রদাহ।” তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি সেনাবাহিনী থেকে জনগণের নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনিই সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। আর এই সরকার সংবিধান থেকে আল্লার ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছে।” ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “৬টি কারণে জিয়াউর রহমানকে এদেশের মানুষ শত শত বছর স্মরণ রাখবে। এর প্রথমটি হলো- জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুরো জাতি যখন দিশেহারা ছিল, তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার স্বঃতস্ফূর্ত বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে আভির্ভূত হয়েছিলেন। পৃথিবীর কোনো দেশের ইতিহাসে এটা খুঁজে পাওয়া যায়নি যে, একজন সেনানায়ক জনগণের নেতায় পরিণত হয়েছেন। তৃতীয়ত, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। চতুর্থত, জিয়াউর রহমান ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করেছেন। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা সংযোজন করেছিলেন। পঞ্চমত, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। ষষ্ঠত, জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ, যা সব রাজনীতিবিদের জন্য অনুকরণীয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন