চকরিয়ায় সংরক্ষিত ও রির্জাভ বনাঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে বসতবাড়ি ও দোকান-পাট

এম.রায়হান চৌধুরী 
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বনভুমি দখলের হিড়িক পড়েছে। প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বনবিভাগের মুল্যবান জমিতে নিত্যদিন গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা। উপজেলার মালুমঘাট এলাকায় ইতোমধ্যে বেশির ভাগ সংরক্ষিত ও রির্জাভ বনাঞ্চল দখল হয়ে পড়েছে।
বনবিভাগ সাড়াশি অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও ফের প্রভাবশালীরা ওই এলাকায় নতুন করে নির্মাণ করছে অবৈধ বসতি। অভিযোগ রয়েছে, মালুমঘাট বাজারের ভেতর বেশ কজন প্রভাবশালী  বনভুমিতে গড়ে তোলা বসতি কলোনী হিসেবে ভাড়া দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এলাকার পরিবেশ সচেতন মহল দাবি করেছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে সরকারী বিপুল পরিমাণ বনভুমি হাতছাড়া হয়ে যাবে বনবিভাগের।
স্থানীয়রা জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের অধীন চকরিয়া উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বনবিভাগের জমি দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে ইতোমধ্যে সবচে বেশি বনভুমি দখলের ঘটনা ঘটেছে রেঞ্জের ডুলাহাজারা বনবিটের সংরক্ষিত ও রির্জাভ বনাঞ্চল এলাকায়। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত চার বছরে এই বনবিটের অধীন এলাকার বনভুমি দখল করে কমপক্ষে ৭শত থেকে ১হাজার নতুন অবৈধ বসতি (বাড়িঘর ও দোকানপাট) নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সময়ে ফাসিয়াখালী রেঞ্জ ও ডুলাহাজারা বনবিটে কর্মরত বনকর্মকর্তারা নগদায়নের বিনিময়ে অবৈধ দখলদারদেরকে এসব বনভুমি দখলে অলিখিত সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। এ কারনে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ বনভুমি বেহাত হতে চলছে এই বনবিটের আওতা থেকে। 
স্থানীয়রা জানায়, মালুমঘাট খ্রীষ্টান হাসপাতালের উত্তরে ব্যাপক হারে বনভুমি দখল ও অবৈধ বসতি নির্মাণের কারনে গতবছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বনবিভাগ উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি’র সহায়তায় কমপক্ষে শতাধিক অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে এসব স্থাপনা গুড়িয়ে দেন। এরপর আরো কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন বনবিভাগ। তবে এসব অভিযানের মাস খানেক পর আবারও একই প্রভাবশালীরা উচ্ছেদকৃত ওই বনভুমি দখলে নিয়ে নতুন করে বসতি নির্মাণ করেছে। সরেজমিনে এলাকা পরিদশর্নে এসব বনভুমি ফের জবরদখল হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরদিকে মালুমঘাট বাজারের ভেতর ইতোপুর্বে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির নামে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ইসহাক ও মালেক মেম্বার গংয়ের লোকজন বনবিভাগের রির্জাভ বনভুমি দখল করে গড়ে তুলেন একাধিক অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে তারা এসব স্থাপনা তৈরী করেন রড সিমেন্ট কংক্রিট দিয়ে। পাকাঁ দালান করার কারনে এসব স্থাপনা ভাড়া ও লাগিয়ত দিয়ে মালুমঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিমাসে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। 
        স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে বাজারের ভেতর আইডিয়েল স্কুলের পিছনে বনবিভাগের জমিতে স্থায়ী অবৈধ পাঁকা দালান গড়ে তুলেছে মালুমঘাটার বাহাদুর মিয়া, তার ভবনের পাশে বাঁেশর তৈরী একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন আওয়ামীলীগ নেতা কামাল হোছাইন চেয়ারম্যান। তাদের এসব স্থাপনার পাশে নেজাম উদ্দিন, হারুনর রশিদ ও আবু ছালাম মেম্বারসহ আরো অনেকে বনবিভাগের জমিতে নির্মাণ করেছেন একাধিক অবৈধ স্থাপনা।
         ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শরাফত আলী ও ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বনভুমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যে সব এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে সেই গুলো অনেকদিন আগের। তারা এই রেঞ্জে নতুন যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যে নতুন করে কোন অবৈধ বসতি নির্মাণ হয়নি বলে দাবি করেন তারা। 
         ফুলছড়ি ও ফাসিয়াখালী রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো.আসলাম মজুমদার বলেন, ইতিপুর্বে বেশ ক’বার যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ডুলাহাজারা বনবিটের অবৈধ বিপুল বসতি উচ্ছেদ করা হয়। তবে দখলবাজরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বনবিভাগের লোকজন তাদেরকে বাঁধা দিয়েও বিফল হচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতেই বনবিভাগে লোকবল কম। তারপরও অপ্রতুল জনবল নিয়ে বনভুমি ও বনজ সম্পদ রক্ষায় টহল তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। 
         কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) শাহ-ই-আলম বলেন, ডুলাহাজারা বনবিটের বিপুল বনভুমি বেহাত হওয়ার বিষয়টি ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দখল হওয়া এসব বনভুমি উদ্ধারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন