জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রনে বঙ্গোপসাগর, ভরা মৌসুমেও সাগরে যাচ্ছেনা উপকুলের জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উপকুলীয় দ্বীপ মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সমুদ্র চ্যানেলে ও বঙ্গোপসাগরের বেশ কয়েকটি চ্যানেল জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রন করেছে বলে জানা গেছে। ভরা মৌসুমেও সাগরে যাচ্ছেনা উপকুলের জেলেরা। হঠাৎ করে সাগরে জলদস্যুদের হামলা বেড়ে যাওয়ার কারনে সাগরে মাছ আহরণ করতে যাচ্ছে না উপকুলের হাজার হাজার জেলারা। ফলে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে জেলে পরিবার গুলোতে।
সরকারী ঘোষনা অনুযায়ি ১৩ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রেখে গত ২৫ অক্টোবর থেকে সাগরে মাছ আহরণ করতে গেলে হঠাৎ করে জলদস্যুদের হামলায় ৫০টির বেশী ফিশিং ট্রলার হামলার শিকার হয়েছে এবং ১০ জন মঝিকে মুক্তিপনের দাবীতে জলদস্যুরা অপহরণ করে। পরে তাদের হামলায় ২০ জনের অধিক জেলে আহত হয়। এরপরও থেমে নেই গভীর সাগরে জলদস্যুদের কার্যক্রম। তারা দিন ও রাতে সাগরে বিভিন্ন পয়েন্টে জেলে সেজে ফিশিং ট্রলারে হানা দেয় । সাগর থেকে উপকুলে ফিরে আসা একাধিক জেলে সুত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলদস্যুদের উৎপাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপকুলের বিভিন্ন স্থানে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় দস্যুতা চালিয়ে যাচ্ছে। সাগরে গত কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধি পেয়েছ ডাকাতি,মাঝি মাল্লাদের অপহরণ,খুন,চোরাচালান,দস্যুতা,মুক্তিপন আদায় ও টোকেনের মাধ্যমে চাদাঁবাজীর ঘটনা। সাগরে মাতামুহুরী নদীর মোহনা মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল ও কুহিলিয়া নদীর মোহনা সন্নিহিত এলাকায় নৌযান নিয়ে চলাচলকারী জেলেরা অতিষ্ট হয়ে উঠছে। এরা প্রতিনিয়ত সাগরে বিভিন্ন মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতি করে চলছে বলে সুত্রে প্রকাশ। কক্সবাজার,মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বোট মালিকরা সাগরের মাছ আহরণ করার জন্য ট্রলার পাঠিয়ে দ্বীপে ফিরে না আসা পর্যন্ত ডাকাতের কবলে পড়ার আশংকায় থাকে। জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে আসা একাধিক জেলেরা জানায়, বিশেষ করে সোনাদিয়া,ঘটিভাংগা,ধলঘাটা,মাতারবাড়ী,কালারমার ছড়া ,চকরিয়া ও কুতুবদিয়া এলাকার একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রন হয় এবং পুলিশের র্সোস পরিচয় দানকারী বেশ কয়েক জন ব্যক্তির সঙ্গে এ সিন্ডিকেটের যোগসুত্রতা রয়েছে বলে সুত্রে প্রকাশ। কুতুবজুমের ঘটিভাঙ্গা এলাকার মান্নান বহদ্দারের মালিকানাধিন এফ বি মায়ের দোয়া, রহমত আলীর মালিকাধিন এফবি নয়ন, আজিমুল হকের মালিকাধিন এফ বি মায়ের দোয়া, মান্নান বহদ্দারের মালিকাধিন এফ বি বাবুল, আজিজুল হকের মালিকানাধিন এফ বি মায়ের দোয়া , কালা মিয়া হাজ্বীর মালিকানাধিন এফ বি মায়ের দোয়া সহ ৮টি ফিশিং ট্রলার ওই ৮টি ট্রলারের ৫ মাঝিকে অপহরণ করে মুক্তি পনের দাবীতে। মুক্তিপনের জন্য সুন্দর বন এলাকার জলদস্যু প্রধান জাহাঙ্গির আলমের কাছে দাবীকৃত মুক্তিপণ পৌছে দিলে মাঝিদের কে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে।অপর দিকে সাগর থেকে মাছ আহরণ করে কুলে ফেরার ফথে ঘটিভাঙ্গা এলাকার কালা মিয়ার মালিকানাধিন এফ বি মায়ের দোয়া সহ অপর দুটি ফিশিং ট্রলার মহেশখালী চ্যানেলে পৌঁছা মাত্র জলদস্যুদের কবলে পড়ে। তাদের হামলায় ওই ট্রলারের বেশ কয়েকজন মাল্লা প্রাণের ভয়ে সাগরে ঝাপ দেয়। এতে আহত অবস্থায় কবির ৩৪, মনজুর ৪০, বাহার ২৮, রুহুল আমিন ২৮, শামসু ৫০, ওসমান ৪০ কে অন্যান্য জেলেরা উদ্ধার করলে ও এখনও পর্যন্ত ট্রলারটির কোন খোজ পাওয়া যায়নি। হামলার শিকার জেলেরা সবায় ঘটিভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জলদস্যুদের প্রতিমাসে বোট মালিক ও মাঝিরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতো। কোনো মাসে চাঁদা দিতে না পারলে নেমে আসতো নির্মম অত্যাচার। আর এ চাঁদার টাকা লেনদেন হতো মোবাইল ব্যাংক বিকাশ-এর মাধ্যমে। ফলে জলদস্যুদের হাতে জেলে পরিবার গুলো সব সময় জিম্মি থাকে। এব্যাপারে একাধিক ট্রলার মালিকরা জানান, নিয়মিত মাসোহারা না দিলে পরবর্তি এই ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া মাত্রই ওই জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা ট্রলারের ইঞ্জিন,জাল,আহরন কৃত মাছ,তেল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়। খালি ট্রলারটি ফুটো করে সাগরে ডুবিয়ে দেয় ফলে কিছু মাঝি মাল্লারা সাতাঁর কেটে তীরে ফিরে আসলেও অনেকে সাগরে প্রান হারায়। অনেক সময় জলদস্যুরা মাঝি মাল্লাদের অস্ত্রের মুখে অপহরন করে জিম্মী করে মুক্তিপন আদায় করে।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারন স¤পাদক মৌঃ ওসমান গণি বলেন, ভরা মৌসুমে জেলেরা সাগরে মাছ আহরণ করতে না পারলে অতিব কষ্ট নেমে আসছে জেলে পরিবার গুলিতে ফলে চরম তিতে পড়বে ট্রলার মালিক। দ্রুত জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রন করতে উর্ধতন কতৃপরে নিকট জোর দাবী জানান তিনি। মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে একাধিক জলদস্যুকে গ্রেফপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চলছে এবং জলদস্যুতা বন্ধে মহেশখালী চ্যানেলের আশে পাশে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ারুল নাসের বলেন, বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কোসগার্ড়কে অবহিত করা হয়েছে এবং সোনাদিয়া চ্যানেলে নৌ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন