ঈদ্গাঁ ঈদ্গড় সড়ক সংস্কার কাজে ঠিকাদারের ব্যাপক লুটপাট

নুরুল আমিন হেলালী
ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক পালপাড়া অংশে ফুলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থার আওতায় নির্মানাধীন স্থানীয় সরকারী প্রকৌশল দপ্তরের কাজে ঠিকাদারের চরম অনিয়ম ও জালিয়াতের অভিযোগ উঠেছে। নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী বালি, কংকর, লোহা, সিমেন্ট ব্যবহার করার ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসূমে পাহাড়ী ঢলে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের পালপাড়া অংশটি আবারো ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, বিগত বর্ষা মৌসূমে প্রচন্ড বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের স্রোতে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের পালপাড়া অংশটি ভেঙ্গে ফুলেশ্বরী নদীর পানিতে তলিয়ে যায় পালপাড়া, শিয়াপাড়া, পশ্চিম ভাদিতলা, দরগাহ পাড়া, মেহেরঘোনা, জাগির পাড়া, ঈদগাঁও বাজার, উত্তর মাইজ পাড়া ও তেলীপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্ধী হয়ে পড়ে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ভাঙ্গা অংশটি দীর্ঘদিন পর সংস্কার করা হলেও পাহাড়ী ঢল ও ফুলেশ্বরীর প্রবল স্রোত থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্পার নির্মাণ, বালির বস্তা দিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ফুলেশ্বরী নদীর পলি অপসারন ও সড়ক উন্নয়নে স্পার নির্মাণসহ চারধাপে কাজের টেন্ডার আহবান করে। চারধাপে নির্মাণাধীন ওই বন্যা ও স্রোত প্রতিরোধ এবং ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক প্রতিরক্ষা প্রকল্পে ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকার কাজটির নির্মাণ আদেশ পায় চকরিয়ার ঠিকাদার নুরুল আলমের আলম কনস্ট্রাকশন।
প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্য রয়েছে জরুরী ভিত্তিতে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের সংস্কার, দ্বিতীয় পর্যায়ে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক উন্নয়নে স্পার নির্মাণ, তৃতীয় পর্যায়ে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক প্রতিরক্ষা এবং চতুর্থ পর্যায়ে ঈদগাঁও বাজার এলাকা ও তৎসংলগ্ন ফুলেশ্বরী নদীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নিচ থেকে পলিয় অপসারণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ধাপের কাজে চরম জালিয়াতি এবং দূর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আলম কনস্ট্রাকশন দায়সারাভাবে দ্রুত কাজ শেষ করছে। এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায, এলজিইডি’র কার্যাদেশ অনুযায়ী কোন কাজই বাস্তবায়ন করছেনা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়সারা এবং জালিয়াতি কাজের রিরুদ্ধে এলাকাবাসী ইতোপূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণদার নুরুল আলম এবং প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনকে বার বার অভিযোগ করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। 
জানা যায়, ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক উন্নয়নে স্পার নির্মাণ কাজে কার্যাদেশ অনুযায়ী ৬-৮ ইঞ্চি ডায়া বেধ ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সুন্দরী বা গজারি গাছের বল্লী (বোল্লা) ব্যবহার করার কথা থাকলেও ওই ক্ষেত্রে সুন্দরী বা গজারি গাছের বল্লী ব্যবহার করা হয়েনি। স্থানীয়ভাবে সংগৃহিত জারুল, জাম ও গামারী গাছ জোড়া দিয়ে ৩০ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে বল্লী স্থাপন করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, ঠিকাদার ও স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার প্রিয় রঞ্জন পালের যোগসাজশে বল্লী সরবরাহের দায়িত্ব নেয় ওই স্থানীয় মেম্বার। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মেম্বার প্রিয় রঞ্জন পাল এর সাথে কথা বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে বল্লী সরবরাহের কথা স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিহীত ব্যবস্থা করবেন। স্থানীয় ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মহিলা মেম্বার মিনতি বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ঠিকাদারী কাজে চরম দূর্নীতি ও অনিয়ম চলছে। এমনকি নির্মাণ কাজে স্থানীয় ফুলেশ্বরী নদীর বালি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ওই মেম্বার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দফায় দফায় নালিশ করলেও ঠিকাদার অভিযোগ আমলে নেয়নি। 
জানা যায় বললে তিনি। স্থানীয় পালপাড়ার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সচেতনমহল সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় মেম্বার প্রিয় রঞ্জন পাল এর সংশ্লিষ্টতার কারণে তারা কাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও মেম্বারের যোগসাজসে লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগের কারণ হওয়া ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক উন্নয়ন কাজে এমন হরিলুট হবে ভাবতেও পারেনি। সবচেয়ে অবাক হওয়ার মত জালিয়াতি হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন কাজে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ওই অংশের কাজে ৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রি-কাস্টিং পাইল তৈরী করে ফুলেশ্বরী নদীর ভূমি থেকে গাইড ওয়াল নির্মাণ করার কথা। কার্যাদেশে প্রি-কাস্টিং পাইল এর দৈর্ঘ্য ৬ মিটার, প্রস্থ ১৫০ মি.মি, উন্নত গুণগতমানসম্পন্ন সিমেন্ট, সবচেয়ে ভালমানের সিলেটি বালি, দিনাজপুর মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করার নির্দেশ থাকলেও এক্ষেত্রে কিছুই মানা হয়নি। ৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রি-কাস্টিং পাইলের দৈর্র্ঘ্য পাওয়া গেছে শ্রেফ ৩ মিটার। সিলেটি বালির বদলে স্থানীয় বালি, দিনাজপুরী পাথরের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের স্থানীয়ভাবে তৈরী তৃতীয় শ্রেণির ইটের কংকর। নির্মাণকাজে প্রি-কাস্টিং পাইল নির্মাণে প্রকৌশল বিজ্ঞান অনুযায়ী সিমেন্ট, বালি ও কনক্রিটের অনুপাত ১ ঃ ১.৫ ঃ ৩ হলেও ওই ক্ষেত্রে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয় ১ ঃ ৩ ঃ ৪। 
কার্যাদেশে বালি ও সিমেন্টের মিশ্রণের পূর্বে ভালভাবে চালুনী দিয়ে বালি ও পাথর চেলে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে মিক্সার মেশিন দিয়ে মিশ্রিত করার কথা। ওই ক্ষেত্রে কার্যাদেশের নির্দেশ পালনতো দূরের কথা সাইট এলাকায় কোন চালুনী কিংবা মিক্সার মেশিন দেখাই যায়নি। এলাকাবাসীও মিক্সার মেশিন দেখেননি বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন যুবনেতা। ঠিকাদারী কাজে কর্মরত একজন শ্রমিক জানান, মিক্সার মেশিন শুধু নয় চালুনী দিয়ে যে চালার কথা সেথাও তিনি দেখেননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বাঁকখালীকে জানান, কাজের সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তাকে সিডিউলের সুনির্দিষ্ট কাজের ধরণ এবং ঠিকাদারের কাজের মধ্যে পার্থক্য জানালে তিনি বলেন, ওই মুহুর্তে তিনি জরুরী কাজে বাইরে আছেন এবং পরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান। সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার আলম কনষ্ট্রাকশনের সত্বাধিকারী নুরুল আলমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন ও কাজ শতভাগ সততার সাথে করা হচ্ছে বলে দাবী করে এবং কোনকারচুপি কিংবা জালিয়াতি প্রমাণ করতে পারলে তিনি ঠিকাদারী কাজ ছেড়ে দিবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তাকে কাজের সিডিউল দেখালে তিনি তার মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে নিরস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে গত সপ্তাহের ভারী বৃষ্টির ফলে ফুলেশ্বরী নদীর ঢলে পালপাড়ার ভাঙ্গা অংশ আবারো ভাঙ্গতে শুরু করেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পালপাড়ার ভাঙ্গা অংশের কারণে গত মৌসূমে ঈদগাঁও ও জালালাবাদের দু’লক্ষাধিক মানুষ দূর্ভোগে পড়ে। অথচ সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও স্থানীয় মেম্বারের যোগসাজসে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের মহাগুরুত্বপূর্ণ পালপাড়া অংশের কাজে চলছে চরম দূর্নীতি ও অনিয়ম। অবিলম্বে এ কাজ বন্ধ না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসূমে আবারো দূর্ভোগে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে। অনেকে প্রশ্ন করেন এটা কি সড়ক উন্নয়ন? নাকি হরিলুটের প্রদর্শনী ? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন