তেজহীন অর্থনীতিতে সর্ববৃহৎ বাজেট বৃহ¯পতিবার

ডেস্ক রিপোর্ট
মহাজোট সরকারের শেষ বছর। এ সময় এসে অর্থনীতি অনেকটা নাকাল রাজনৈতিক বাস্তবতায়। রাজনৈতিক ইস্যুতে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছুতেই দূর হচ্ছে না টানাপোড়েন। মাঝে সমঝোতা ও সংলাপের আভাস এলেও তা ভেস্তে গেছে অনেক
টা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে মাঠের রাজনীতি সামনের দিনগুলোতে আরো খারাপ হবে বলেই ধারণা করছে দেশের মানুষ।
শঙ্কিত ব্যবসায়ী মহলও। কঠিন সময় যাচ্ছে অর্থমন্ত্রীর। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে দেশবাসীর সামনে আসছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী এক বছর রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় তুলে ধরবেন তিনি বৃহ¯পতিবার। এটিই হবে মহাজোট সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট। তবে বাস্তবায়নে শেষ অর্ধেকটার দায় যাবে নতুন সরকারের কাছে।  
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বর্তমান সরকারের প্রথম তিন বছরে অর্থনীতিতে যেসব উদ্যোগ, উদ্দীপনা ও প্রবৃদ্ধির গতি ছিল, শেষ ১৮ মাসে তা স্তিমিত হয়ে গেছে। যদিও নিুপর্যায়ের স্তিমিত অর্থনীতির মধ্যেও একধরনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। তবে তা চাহিদা ও সম্ভাবনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। নেই অর্থনীতির সেই  তেজ। যেন খুঁড়িয়ে চলছে অর্থনীতি।” জানা গেছে, সিপিডির হিসাবে বলা হচ্ছে, হরতালের কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি (বাজারমূল্যে) শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কমে যায়। সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। দেবপ্রিয় বলছেন, “সাড়ে চার বছরে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে ছিল ৬ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, সরকারি ব্যয় ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, কৃষিতে ঋণ ও উপকরণ বিতরণে সাফল্য। তবে গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে সৃষ্ট সমস্যা, পুঁজিবাজারের ধস, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্র“পের ঋণ জালিয়াতি, ডেসটিনিকে স্বচ্ছভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল, ট্রানজিট মাশুলসহ নানা নেতিবাচকতা  নিয়ে বিতর্কের কারণে সরকারকে মনে রাখবে মানুষ। 
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “অর্থমন্ত্রী ৬ জুন যে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন, তাতে রাজনৈতিক বাস্তবতার কাছে অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা খুব বেশি স্থান পাবে না।” বিনিয়োগ বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ: ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারা শঙ্কিত। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করার তাগিদ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের শেষ ৬ মাসের জন্য বেসরকারি খাতে সাড়ে ১৮ শতাংশ ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও তা ১৩ শতাংশের নিচে রয়েছে। অর্থনীতিতে চাহিদা যে কমে গেছে, এটা তারই প্রমাণ। মূল্যস্ফীতি কম থাকলেও বিনিয়োগ বাড়ছে না, কারণ সুদের হার বেশি।
আবার খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংক সুদের হার কমাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিশেষ চমক দেখাতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। জিডিপি: গত এক দশকে দেশের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। গত ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হয়। আবার কমতে থাকে এর হার। গত অর্থবছরে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বর্তমান বছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ০৩। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এমন নেতিবাচক ধারা থেকে জিডিপি বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে অর্থমন্ত্রীর কাঁধে। এখন দেখার বিষয় কি চাবিকাঠি দিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা জাগাবেন তিনি। তবে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, “সার্বিক পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে জিডিপির হার বাস্তবভাবে নির্ধারণ করতে হবে।” 
পদ্মা সেতু: পদ্মাসেতু সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই সেতু নির্মাণ ভোটের রাজনীতির বড় হাতিয়ার হিসেবেই দেখছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। অর্থমন্ত্রীকে বাজেট আলোচনায় সরকার দলীয় সাংসদরা বলেছেন, পদ্মার খুঁটি না হলে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যেতে পারবো না। অর্থমন্ত্রীও বরাদ্দ রেখেছেন। তবে বাস্তবায়নের বিস্তারিত কি থাকে বাজেটে তা-ও জাতিকে ¯পষ্ট করতে হবে।  
বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতি: গত চার বছরে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা বেড়েছে। চার বছর আগে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা ছিল ৪৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার গত এপ্রিল শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯২ কিলোওয়াটে। তবে উৎপাদন সক্ষমতা যে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, সে পরিমাণ উৎপাদন বাড়েনি। ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে কাক্সিক্ষত উৎপাদন হয়নি এ খাতে। তবে বিদুৎ খাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে মহা অর্জনের এবং ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরতে যাচ্ছেন কালকের বাজেটে। 
রাজস্ব ও বৈদেশিক খাত: বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতি সত্ত্বেও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে স¤পর্কিত খাতগুলোর অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ওপরে রয়েছে। প্রবাসী আয় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা দেশের তৈরি পোশাক খাতে বিরূপ অভিঘাত ফেলতে পারে। অগ্রাধিকার বাজার-সুবিধা (জিএসপি) বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিক থেকে এই অভিঘাত আসতে পারে। তাই অভিঘাত মোকাবিলায় যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিদ্যমান বাজার ধরে রেখে দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্যে (বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ) বিশেষ গুরুত্ব দেবে দরকার।
শেয়ারবাজার: বর্তমান সরকার সব চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে ও এবং তা মোকাবেলা করেছে শেয়ার বাজারের খারাপ পরিস্থিতির কারণে। শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ-সুবিধা কার্যকর করতে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে ঘোষণা থাকছে বাজেটে।  তবে এ প্রসঙ্গে ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “পুঁজিবাজারে সুশাসনের পরিবর্তে সরকার ৯০০ কোটি টাকার তহবিল জোগান দিচ্ছে। এই প্রণোদনা রাষ্ট্রীয় অর্থে ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ।” এমন প্রেক্ষাপটে মেয়াদের শেষ বছরে দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বড় বাজেট আসছে।অর্থমন্ত্রীও বলছেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী।
২০১২ সালের জুনে ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একলাখ কোটি টাকার বেশি অংকের একটি বাজেট ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এরপর প্রতি বছরই বেড়েছে বাজেটের অংক। আর ৫ বছরের ব্যবধানে তার আকার দ্বিগুণ হয়েছে। আগে কোনো সরকারের মেয়াদেই বাজেট বৃদ্ধির এই হার দেখা যায়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন