মেয়াদ বিতর্ক> ফাইলে সই করছেন না দুদক চেয়ারম্যানআদিত্য আরাফাত



বাংলানিউজ
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম রহমানের পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদনের পর ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এ নির্বাহী। হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে রিটের পরই এ কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন তিনি।

দুদকের একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সোমবার কোনো ফাইলে সই করেন নি চেয়ারম্যান। এ রিটের কারণে সামাজিকভাবে তাকে ‘হেয়-প্রতিপন্ন’ করার অপপ্রয়াস করা হয়েছে বলেও তিনি মনে করছেন।

ফাইলে সই না করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘যেসব নথি আদালতে উপস্থাপিত হতে পারে, সেসব নথি আমি এখন দেখছি না।’’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এটা সর্বজনবিদিত যে, চাকরির সময়কাল যোগদানের সময় থেকে হয়। আমার মেয়াদ কবে শেষ হবে সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে। আমি এখন আশা করছি, এ বিষয়ে আদালত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

হাইকোর্টে রিটের পর গোলাম রহমান ফাইলে স্বাক্ষর করলে বেকায়দায় পড়তে পারেন বলে মনে করছেন দুদকের একাধিক কর্মকর্তা।

দুদকের অপর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘যেহেতু হাইকোর্টে গোলাম রহমানের বিরুদ্ধে রিট করা হয়েছে, তাই কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করলে আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন এ জন্য স্বাক্ষর করছেন না তিনি। এটা বুঝতে পেরে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন তিনি।’’

রোববার এক আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যানের পদে থাকাকে অবৈধ বলে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে উল্লেখ করা হয় চার বছর মেয়াদ শেষেও তিনি অবৈধভাবে পদে রয়েছেন।

আইনানুগ প্রক্রিয়ায় রিটের বিষয়টি দুদকের আইন অণুবিভাগ সম্পন্ন করবে বলে সোমবার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র প্রণব প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

তবে দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন অণুবিভাগ) কামরুল হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে কিছু করার সুযোগ নেই।

রিটের বিষয়ে দুদকের অবস্থান কি হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখন আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই। এটা আদালত নির্ধারণ করবেন।’’

চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম রহমানের পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাইকোর্টে রিট আবেদনের পর বিতর্কের মুখে পড়েন গোলাম রহমান। রিটে কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি ওই পদে আসীন আছেন এই মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদ শেষের পর তার গৃহীত কার্যক্রমকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং গ্রহণকৃত বেতন-ভাতা কেন ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হবে না - সেই মর্মেও রুল জারির আবেদন রয়েছে। 

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ডিভিশন বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে এ রিটের শুনানি হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, দুদক সচিব, মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। 

গত ৫ জুন দুদক চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিস দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ওই নোটিসের জবাব দেননি দুদক চেয়ারম্যান। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গোলাম রহমানকে দুদকের কমিশনার পদে নিয়োগ দেন। ওই বছরের ২ মে থেকে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। দুদক আইনের ৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনারদের নিয়োগের তারিখ থেকে চার বছর মেয়াদের জন্য স্ব-স্ব পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। সেই হিসেবে গোলাম রহমানের মেয়াদ গত ১ মে চার বছর পূর্ণ হয়েছে। এই চার বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও তিনি দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

দুদকের মুখপাত্র জানান, চেয়ারম্যান পদের দিন গণনা কিভাবে হবে তা জানতে ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট দুদকের সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আইনগত মতামত চান। পরবর্তী সময়ে ওই বছরের ২১ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক আদেশে মতামত দেওয়া হয়, ২০০৯ সালের ২৪ জুন তার দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে তার সময়কাল গণনা করা হবে। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৩ জুন। এ বিষয়ে আর বিতর্ক থাকার কথা নয় বলে মনে করেন তিনি।

তবে হাইকোর্টে রিট দায়েরকারীর দাবি, দুদক আইনেই বলা হয়েছে যে, নিয়োগ দেওয়ার দিন থেকে এ মেয়াদকাল শুরু হবে। সংসদে প্রণীত আইনের চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বা সিদ্ধান্ত বড় হতে পারে না। কিন্তু আইনকে তোয়াক্কা না করেই গোলাম রহমান দুদক চেয়ারম্যানের পদ ধরে রেখেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন