জামায়াতের নীরবতার নেপথ্যে

বাংলানিউজ
ঢাকা: গত বছর থেকে তাণ্ডব আর সহিংস কর্মকাণ্ডের পর হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়ায় জামায়াতকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। আর এ গুঞ্জনের বাইরে নেই খোদ দলের নেতাকর্মীরা। তবে রাজনৈতিক মহলে এটাও আলোচনা হচ্ছে, জামায়াতের মতো একটি দলের হঠাৎ নীরবতা মানে বড় কিছু ঘটনা ঘটানোর আগাম সংকেত বহন করে।

দলীয় সূত্র দাবি করছে, সামনে গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলছে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল মামলার শুনানি। এসব মামলার রায় বিপক্ষে গেলে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত। শক্তি ধ্বংস না করে সে সময়টার জন্য ধরে রাখতে এবং নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করতেও এখন সহিংস কর্মসূচিতে যাচ্ছে না তারা। রায়গুলোর পর সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার আশায় এখন সাময়িকভাবে নীরব আছে- এমনটাই দাবি করছে সূত্রগুলো। 

জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষণা শুরু যখন ঘনিয়ে আসছিল, ঠিক তখনই গত বছর (নভেম্বর) দলটি তার সহযোগী সংগঠন শিবিরকে সাথে নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

নিজস্ব কর্মসূচি ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি কখনও বিএনপিতে ঢুকে, কখনও ইসলামী সমমনা ১২ দলের ব্যানারে আর সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তাণ্ডব চালায়। তাদের এ তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি কুরআন শরীফ ও ফুটপাটের সাধারণ হকাররাও। 

তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কৌশলের কারণে কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপাতত শিথিলতা আনা হয়েছে।

দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের কঠোর মনোভাবের পাশাপাশি জামায়াত ও তাদের অন্যতম সহযোগী শক্তি শিবিরের অধিকাংশ নেতা গ্রেফতার হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে দলটি। তবে এ সমস্যা শিগগিরই কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেও আশাবাদী দলটির নেতারা। 

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, “সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়াতেই পারছেন না। এ অবস্থার পরেও জামায়াতের যতোটুকু আন্দোলন হচ্ছে তা একটা সময় এসে সরকার পতনের দিকে যাবে।” 

শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এছাড়াও আমাদের প্রকাশ্যে তো দূরের কথা, গোপনেও কোনো কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না সরকার।এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা চলছে।” 


তবে শিবিরের অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার ছাড়া সংগঠনের হাল ধরার মতো কোনো নেতা নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জেলার নেতাদের ঢাকা মূল দায়িত্বে স্থলাভিষিক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ কাজটি শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে।

শিবির নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের রায়ের পরও সংগঠনটি নীরব থাকলেও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চায় তারা। সংগঠনটির অনেক নেতারা গোলাম আযমের ভক্ত। 

তাছাড়া সংগঠনের সদস্য বা কর্মী করানোর জন্য যেসব বই পড়ানো হয় তার অনেক বই গোলাম আযমের লেখা। তাই তার প্রতি শিবির নেতাদের আলাদা একটা অনুভূতি আছে। এ কারণে তার মামলার রায়ের পর একটা শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে শিবির এমন খবরও শোনা যাচ্ছে।

এছাড়াও জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রায়ও হতে পারে যে কোনো দিন। এরও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে দলটি। 

যুদ্ধপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। সেখানে রায় কাদের মোল্লার বিপক্ষে গেলে শক্ত প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। 

এজন্য শক্তি সঞ্চয়ে মূলত জোটের কর্মসূচির চালানোর পাশাপাশি দলের নিজস্ব কর্মসূচি থেকে কিছুটা দূরে থাকছে জামায়াত-শিবির- এমন খবরও জানিয়েছে দলীয় সূত্রগুলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন