পেকুয়া-মগনামা সড়কে যানবাহন আটকিয়ে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী

পেকুয়া-কুতুবদিয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া-মগনামা সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে যানবাহন আটকিয়ে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী চলছে। পেকুয়া থানা পুলিশের ক্যাশিয়ার পরিচয়ে এক কনষ্টেবলসহ অপর দুই ব্যক্তি ওই সড়কে যানবাহন আটকিয়ে এ চাঁদাবাজী চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। আর তাদের লাগামহীন চাঁদাবাজীতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পেকুয়ায় সড়কে চাঁদাবাজী বন্ধে পেকুয়ার কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা সম্প্রতি পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) এর নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়া থানায় সদ্য যোগদানকারী করষ্টেবল পাশ্ববর্তী বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা মো: আবদু রহিম পেকুয়া থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে এ চাঁদাবাজীর নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। কনষ্টেবল রহিম প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পেকুয়া সদরের চৌমুহুনী ষ্টেশনে জনৈক জসিম ও পেকুয়া বাজারে কাসেম নামের দুই ব্যক্তিকে দৈনিক ৬‘শ টাকা বেতনে পেকুয়া-মগনামা বানিয়ারছড়া সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা উঠানোর জন্য নিয়োগ করেন। খোদ থানা পুলিশের কনষ্টেবল ওই কাসেম ও জমিসকে নিয়োগ করায় তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় কোন ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। আর যারা পুলিশের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার ও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে পেকুয়া চৌমুহুনী ও পেকুয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে চৌমুহুনী মোড়ে থানার ক্যাশিয়ার রহিমের নিয়োগকৃত জসিম নামের এক ব্যক্তি চকরিয়া, লামা, আলিকদম ও বান্দরবান থেকে জিপ ও ট্রাকযোগে আসা অসংখ্য গাছ ও লাকড়ীবাহীসহ অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহন আটকিয়ে ২‘শ থেকে ৫‘শ টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। জসিমে কাছে সড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুলিশের নির্দেশে ওই সব যানবাহন থেকে চাঁদা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে পেকুয়া বাজারে থানার লোক পরিচয় দিয়ে ক্যাশিয়ারের নিয়োগকৃত কাসেম নামের এক ব্যক্তি মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া সড়ক পথে আসা অসংখ্য লবণবাহী ট্রাক আটকিয়ে প্রতিটি ট্রাকের কাছ থেকে ২‘শ থেকে ৩‘শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশের কনষ্টেবলসহ এ তিন ব্যক্তির বেপরোয়া ও লাগামহীন চাঁদাবাজীতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। চকরিয়া থেকে গতকাল শনিবার সকালে ট্রাকে গাছ ভর্তি করে পেকুয়ার আরব শাহ বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন আবুল কালাম নামের এক ড্রাইভার। তিনি এ প্রতিনিধিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, তার ট্রাকটি পেকুয়া চৌমুহুনী ক্রস করার সময় জসিম নামের এক ব্যক্তি থানা ক্যাশিয়ার রহিমের লোক পরিচয় দিয়ে ২‘শ টাকা হাতিয়ে নেন। তার মত অসংখ্য যানবাহনের চালক থেকে এ ভাবেই প্রতিনিয়ত পেকুয়া চৌমুহুনীতে আটকিয়ে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে দেদারসে চাঁদাবাজী করা হচ্ছে। 
        এদিকে পেকুয়া বাজারে কাসেম নামের ওই ব্যক্তি বিভিন্ন স‘মিল, ফার্নিচারের দোকান, গাছের দোকান ও ৭ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজী চালিয়ে যাচ্ছে। পেকুয়ার চৌমুহুনী ও পেকুয়া বাজারে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত বেপয়োরাভাবে চাঁদাবাজী অব্যাহকভাবে চালিয়ে গেলেও ওই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পেকুয়া থানা পুলিশের ওসি ও উর্দ্ধতন পুলিশ বিভাগ কোন ধরণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।  পুলিশের এহেন ভূমিকা নিয়ে জনমনেও ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। পেকুয়ার সচেতন মহল অবিলম্বে পেকুয়ার বিভিন্ন সড়কে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী বন্ধে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  
      এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: খালেদ উজ্জামান এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, শিগগিরই পেকুয়ার বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজী বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর তিনি পেকুয়া থানা পুলিশের ক্যাশিয়ার পরিচয়ধারী রহিমসহ চাঁদাবাজ কাসেম ও জসিমের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

পেকুয়া-চকরিয়ায় পাহাড়ে ৩০ হাজার মানুষের ঝুকিপূর্ণ বসবাস
মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন,পেকুয়া-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া-চকরিয়া উপজেলার ২৩ ইউনিয়নের মধ্যে পাহাড় বেষ্টিত ১৩ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩০হাজার পরিবার জীবনের ঝুঁিক নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে অবৈধভাবে বসবাস করছে। বিগত কয়েক যুগ ধরে এসব পরিবার পাহাড়ি এলাকার বিপুল পরিমাণ বনভূমি অবৈধ দখলে নিয়ে বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে পাহাড়ের পাদদেশে লোকজন বসবাস করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে বনবিভাগ পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে না করে উল্টো এসব দখলদারদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 
       কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো: আসলাম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, ইতোপুর্বে বন বিভাগের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা এসব বসতি উচ্ছেদ করা হলেও তারা কিছুদিন নীরব থাকার পর একই জায়গায় আবারো এসব অবৈধ বসতি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। তাদের কাছ থেকে বন বিভাগ উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি তিনি সরাসরি অস্বীকার করে আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব অবৈধ বসতি নির্মাণের পেছনের জড়িত থাকার কারনে তাদেরকে (বসবাসকারী) উচ্ছেদ করা হলেও পরে তারা একইস্থানে বসতি নির্মাণ করে বসবাস করার সাহস পাচ্ছে।
       জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। একইভাবে পাহাড় ধসের ঘটনায় গতবছর চকরিয়া উপজেলার হারবাং ও খুটাখালী ইউনিয়নে একদিনে পাহাড় ধসের ঘটনায় মহিলা, শিশুসহ ৫জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে চকরিয়ার নিকটস্থ লামার ফাইতং ইউনিয়নে গতবছর পাহাড় ধসে পড়ে নারী, শিশুসহ ২৩জন মারা যায়। এসব ঘটনা পুনারাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন লিখিত নোটিশ জারী করে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের কঠোরভারে নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: আল আমিন এই নির্দেশ দেন।
     অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার পাহাড়ী ইউনিয়ন শীলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মছন্যাকাটা, বানিয়ারছড়া, মাহমুদ নগর, পাহাড়তলী, ভিলেজার পাড়া, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া, নয়াপাড়া, হারবাং ইউনিয়নের মুসলিম পাড়া, শান্তি নগর, ফইজ্যার ডেবা, লম্বা ঘোনা, কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়া নগর, শাহওমর নগর, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ছগিরশাহ কাটা, ছায়রা খালী, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন ও বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় কমপক্ষে ২০হাজার পরিবার পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন বিগত কয়েকযুগ ধরে।
চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নে পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থানরত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনামূলক উপজেলা প্রশাসনের লিখিত নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  ইউপি চেয়ারম্যানরা এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।    
     চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পাহাড় থেকে ঝুকিপূর্ণ অবস্থা সরিয়ে নিতে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সিদ্বান্ত মোতাবেক ইউনিয়নে পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থানরত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার গুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তারপর এসব পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে।
       চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও‘র দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, উপজেলার আটার ইউনিয়নের মধ্যে ১০ ইউনিয়নে পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। তারমধ্যে ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বরইতলী, কাকারা, কৈয়ারবিল, সুরাজপুর-মানিকপুর ও হারবাংসহ অন্যান্য ইউনিয়নে বেশির ভাগ লোক পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। তিনি বলেন, গত বর্ষায় পাহাড় ধ্বসে এখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। একারনে চলতি বছর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এসব ইউনিয়নকে চিহিৃত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন