হামিদ আযাদ এমপির বিবৃতি : প্রস্তাবিত বাজেটে উপকুলীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী

ডেস্ক রিপোর্ট
২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উপকুলীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জলোচ্ছাস আর ঘুর্ণিঝড়ে প্রতি বছর দেশের উপকুলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনের প্রাণহানিসহ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারী সহায়তা থেকে তারা বঞ্ছিত। সুষম উন্নয়নের লক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষ আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবী জানিয়ে আসলেও সরকার এ ব্যপারে কোন উদ্দেগ গ্রহন করে নাই। উপকুলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগন আসা করছিল প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার উপকুলবাসীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় সরকার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমন্বিত উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়ার কথা বললেও বিগত অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ২৯৯ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প  এই মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ রোধ, বাঁধ নির্মাণ, মেরামত, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নির্মাণ বা মেরামত, প্রশমন ও সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারসহ  অনেক  প্রকল্পের কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। 
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মানের কোন বরাদ্দ এ বাজেটে উল্লেখ নেই। অথচ এ প্রকল্পটি ছিল সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। এতে বুঝা যাচ্ছে এ অগ্রাধিকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের পরিকল্পনা নেই। তাই জাতীয় অর্থনীতির  সার্থে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া ও অবিলম্বে বন্দরের কাজ শুরু করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। সেই সাথে জেলেদের নিরাপত্তা ও জলদস্যু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্থানে কোস্টগাড স্টেশন স্থাপন, উপকুলীয় অঞ্চলের রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সার্বক্ষণিক সী- ট্রাক বা সী-এম্বুলেন্স ও ভাসমান হাসপাতাল চালু, মহেশখালী-কুতুবদিয়া সহ উপকুলীয় অঞ্চলের হাসপাতাল আধুনিকায়ন করে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সের  অবস্থান নিশ্চিত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা, কক্সবাজারকে মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী মহেশখালীকে পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত করে এক্সক্লুসিভ জোন ও কুতুবদিয়াকে পর্যটন স্পট ঘোষনা, দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার জন্য আলাদা লবণ বোর্ড  গঠন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করে লবণ চাষীদের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করা,পানকে কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষনা করে পান চাষীদের সুদবিহীন ঋনের ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মন্দির ও প্যাগুড়া গুলোকে উপকুলীয় অঞ্চল হিসেবে বিশেষ গুরুত্বদেয়া, রাস্তা ঘাট উন্নয়নসহ গুরুত্বপুর্ণ সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং  কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ করাসহ উপকুলীয় অঞ্চলের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির করার জন্য আমি সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি । 
ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবতর্নের প্রভাব বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পরিলক্ষিত হলেও উপকূলীয় এলাকাবাসীর জন্য তা সবচেয়ে বড় হুমকি যা ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়  বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) গঠন করেছে। গত বাজেটে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প  বাস্থাবায়ন না করে  রাজনৈতিক বিবেচনায়  প্রকল্প গ্রহন করায়   উপকুলবাসী বঞ্চিত হয়েছে ফলে  এ বছর বর্ষার শুরুতেই অধিকাংশ উপকুলীয় এলাকায় জোয়ারের পানিতে  বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে শত শত গ্রাম প্লাবিত, বাড়ীঘর, সম্পদ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে । তাই জনসার্থে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি উপকুলীয় এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করার জন্য আমি সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি।  
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার এসে এক জনসভায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ২০১৩ সালের মধে সমাপ্ত করার কথাও বলেছিলেন। অথচ প্রতিশ্রুতির দুই বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু কোনো বরাদ্দ না দেয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কিছুই হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটেও এই রেলপথ নির্মাণের জন্য কোন বরাদ্দ না রাখায় কক্সবাজারবাসী চরম ক্ষুদ্ধ ও হতাশ হয়েছে । দেশী -বিদেশী পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ও কক্সবাজার জেলার লক্ষ লক্ষ জনগনের দীর্ঘদিনের প্রানের দাবী অনুযায়ী বাজেটে চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথে বরাদ্দ রাখার জন্য সরকারের নিকট আহবান জানাচ্ছি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন