রামুর বৌদ্ধ বিহার উৎসব মুখর

রামু প্রতিনিধি: গত ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার পর এই প্রথম রামুতে বৌদ্ধদের কোনো ধর্মীয় উৎসবে উৎসব মুখরতা ছিল,পূণ্যার্থীদের মাঝেও ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। গতকাল সোমবার বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় এখানকার  সকল বৌদ্ধ বিহারেই ছিল এরকম উৎসব মুখর পরিবেশ।

তবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এবারও বৌদ্ধদের উৎসব এবং ধর্মীয় রীতিনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ ফানুসবাতি কোথাও উড়ানো হয়নি। বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন,ক্ষতিগ্রস্থ বিহারগুলোর পূণনির্মান কাজ শতভাগ শেষ হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়ায় বিহারগুলো এখনো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তাই অনেক বিহারে জায়গায় অভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে একটু ব্যাঘাত সৃষ্ঠি হয়। তাই পূর্বের মত পুরোপুরি পরিবেশ এখনো তৈরী না হওয়ায় এবারে ফানুস উড়ানো হয়নি।
জেলার জেষ্ট্য ধর্মাচার্য্য, বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, ‘নীতি-নৈতিকতা এবং দান, শীল, ভাবনার অন্তরালে মানবিকতার ঐশ্বর্যে মহিমান্বিত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা।  রাজকুমার সিদ্ধার্থ মোহবন্ধন ছিন্ন করে এই দিনে গৃহবাস ত্যাগ করেন। এ ছাড়াও সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহন, বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবতর্ন, তাবতিংস স্বর্গে আরোহনসহ নানা ঘটনাবলী এই দিনে সংগঠিত হওয়ায় বৌদ্ধদের কাছে আষাঢ়ী পূর্ণিমা অত্যন্ত পবিত্র দিন। এই আষাঢ়ী পূর্ণিমার শিক্ষা অন্তরে ধারণ করে শান্তি ও  সম্প্রীতির উত্তরণে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা কমবেশী সবাই অষ্টশীল পালন করেন। বিহারে যান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে পূজা দেন, নিজের এবং বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, শ্রীকুল মৈত্রী বিহার, হাজারীকুল বোধিরতœ বিহার, চেরাংঘাটা বড় ক্যাং, শ্রীকুল পুরাতন বিহার, দ্বীপশ্রীকুল ধর্মরতœ বিহার, পূর্বরাজারকুল সদ্ধর্মোদ্বয় বিহার, জাদিপাড়া আর্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, উখিয়ারঘোনা জেতবন বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, বিমক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, ফারিকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহার, চাকমারকুল অজন্তা বৌদ্ধ বিহারসহ রামুর সকল বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতায় আচার অনুষ্ঠান পালন করে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল বুদ্ধের উদ্দেশ্যে পূজাদান, নৈতিক শিক্ষাপদ অষ্টশীল গ্রহণ ও পালন, আত্মশুদ্ধির লক্ষে ধর্মশ্রবণ, দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায় হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন ও সন্ধ্যায় সমবেত প্রার্থনা।
রামু সীমা বিহারের প্রজ্ঞান্দ ভিক্ষু জানান, আষাঢ়ী থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের সূচনা দিবস শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। আর প্রবারণা পূর্ণিমা হচ্ছে বর্ষাব্রতের শেষ দিন। এদিনটি উদযাপনের মধ্যদিয়ে তিনমাসব্যাপী বর্সাব্রত পালন বা উপসথ গ্রহন শেষ হয়।
তিনি বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার পর এই প্রথমবারের মত প্রায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে উৎসবমুখরভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। পূণ্যার্থীদের মাঝেও উৎসাহ-উদ্দিপনা এবং প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। সীমা বিহার, মৈত্রী বিহার উখিয়ারঘোনা জেতবন বৌদ্ধ বিহারসহ কয়েকটি বিহারে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়েছে। তবে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী না হওয়ায় এবারও কোথাও ফানুস উড়ানো হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন