সহিংসতায় কক্সবাজার জুড়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা : বাড়ছে প্রাণহানি

বাণী ডেস্ক: সারাদেশের সাম্প্রতিক হরতাল ও নৈরাজ্যের পরিস্থিতিতে প্রাণহানির শীর্ষে অবস্থান করছে কক্সবাজার। ২৫ অক্টোবর চকরিয়াতে ২ জন সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়াতে ৩ জনের প্রাণহানির ঘটনায় পুরো জেলার মানুষ আতঙ্কিত। অপরদিকে প্রিন্ট মিডিয়া ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশের শীর্ষে কক্সবাজারের অবস্থান হিসেবে প্রচার করছে মিডিয়া। এদিকে সাম্প্রতিক পরপর হতাহতের ঘটনায় চরম উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।

৩০ অক্টোবর দেশ মিডিয়া ও মাছরঙা মিডিয়াসহ কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ২৫ অক্টোবরের পরে দেশব্যাপী সহিংসতায় প্রাণহানির তালিকা নিয়ে আলোচনায় প্রথম ও শীর্ষে অবস্থান করছে কক্সবাজার। এ সময় টক শোতে আলোচনাকারী অনেক বক্তা কক্সবাজারকে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবেও চিহ্নিত করেছে। গত ২৫ অক্টোবর বিএনপির টানা ৩ দিনের হরতালে জেলায় প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চকরিয়াতে। ঐদিন প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল করায় পুলিশ, বিজিবি ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম প্রকাশ বাদশা (৩২) ও মিজানুর রহমান (১৯) নামের ২ যুবক মারা যায়। বিএনপি নিহতদের তাদের কর্মী বলে দাবি করছে। এরপর অবশ্য ৩ দিনের টানা হরতালের মধ্যে জেলায় কিছুটা সস্তি থাকলেও শেষ হয়েছে হত্যাকান্ড নিয়ে।
২৯ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া ঘটনায় কুতুবদিয়ায় নিহতের সংখ্যা ৩ জন। এদিকে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৫ জনের প্রাণহানিতে সারাদেশের জেলার হিসাব অনুযায়ী শীর্ষে অবস্থান করছে কক্সবাজার। দ্বিতীয়তে আছে সিলেট ২ জন। গফুরগাঁও ২জন। এদিকে কক্সবাজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে আলাপকালে সিভিল সোসাইটির নেতা এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন রাজনীতি বিপদের কাছে আমাদের সবসময় আহবান ছিল যেন কোনভাবেই কক্সবাজার অশান্ত না হয়। এতে করে পর্যটন শিল্পের বিরূপ প্রভাবসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। এতে করে কক্সবাজারে  অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে।
সুজন সভাপতি প্রফেসর এমএ বাড়ি বলেন প্রতিদিন যত মানুষের সাথে আলাপ হয় সবার মুখে একই কথা কি হবে। কি হচ্ছে। এর শেষ কি? সত্যি কথা হচ্ছে মানুষ খুবই আতঙ্কিত। আর সামনে পরীক্ষা। তারা কিভাবে পরীক্ষা দেবে? আর কিভাবে পরীক্ষা দেবে আমার বোধগম্য হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা। অবশ্যই দলীয় কর্মসূচি পালন করতে হবে। তবে সেটা কখনই ধ্বংসাÍকভাবে নয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে কর্মসূচি পালন করার জন্য আহবান জানান সুশীল সমাজ।
এদিকে উত্তপ্ত রাজনীতির এ সময়ে ঘর বন্দি হতে চলেছে অনেকে। অজানা আতংক বিরাজ করছে সবার মাঝে। ২৫ অক্টোবর চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ-পুলিশ বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২ বিএনপি কর্মী ও ২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়ায় জামায়াত পুলিশ সহিংসতায় ৩ জামায়াত কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আহবান করেছে ১৮ দলীয় জোট। অন্যদিকে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ১৪ দল ১ নভেম্বর বিকাল ৩ টায় পাবলিক লাইব্রেরী (শহীদ দৌলত ময়দানে) সমাবেশের ডাক দিয়েছে। শীর্ষ দলগুলির পাল্টা পাল্টি এমন কর্মসূচিতে আতংক বেড়ে গেছে জেলাবাসির।
ফিরোজা শপিং সেন্টারের  দোকান নূর জাহানের মালিক আতাউল্লাহ বলেন, কোরবানীর ঈদের পর থেকে সমস্ত মার্কের ক্রেতা শূন্য। ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া মহিলারা বের হচ্ছে না। গত ১ সপ্তাহ ধরে আজ পর্যন্ত কোন প্রকার বেচা-বিক্রি ছাড়া আছেন অনেকে। এছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একপক্ষ এসে বলে দোকান খোলা রাখতে। আবার অন্য পক্ষ এসে বলে হরতালে দোকান বন্ধ রাখতে। আমরা আছি বিপদে।
শহরের ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা কহিনুর আক্তার জানান, স্বামী-স্ত্রী ২ জনই চাকরিজীবী। ছেলে-মেয়ে ২ জনই স্কুল ও কলেজে পড়ছে। নিজে চাকরি করি উখিয়ায় ঘরের কর্তা করেন চকরিয়ায়। সন্তানদের পড়া লেখার সুবিধার্থে বাসা নিয়ে থাকি কক্সবাজারে। বুঝতেই পাড়ছেন কেমন উৎকন্ঠায় থাকতে হয় সারাক্ষণ। কখন কোথায় কি ঘটে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা অনার্স শেষ বর্ষের পরিক্ষার্থী সাজ্জাদ আলম বলেন, আমরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে পড়ছি, তাদের প্রত্যেকেরই ৪ বছরের অনার্স শেষ করতে সময় লাগছে ৬ থেকে ৭ বছর। হরতালের কারনে পরিক্ষা বাতিল হলে সেই পরিক্ষা কখন হয় তারও ঠিক নেই। এছাড়া আদৌ হরতালের মধ্যে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। এতে করে আমাদের পরিক্ষার প্রস্তুতি ও মনোযোগ দুটোই বিঘিœত হচ্ছে।
উৎকণ্ঠায় থাকা অভিভাবক সোমা দাশের সাথে আলাপ কালে বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খুব সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে বাচ্চারা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। ঠিকমত বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ফলে পড়া-লেখায় মারাÍক ক্ষতি হচ্ছে। স্কুলে গেলেও বাড়িতে না আসা পর্যন্ত উদ্বেগে থাকতে হচ্ছে সর্বক্ষণ।

কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী পূজা রক্ষিত জানিয়েছেন, গত ১ সপ্তাহ ধরে কলেজেই যাওয়া হয়নি তার। রাজনৈতিক অস্থীতিশীল পরিস্থিতি, মিছিল-মিটিং, নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুক তাক করা টহলে ভিতসন্ত্রস্থ হয়ে বন্ধ প্রায় কলেজ ও প্রাইভেটে যাওয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন