শহরে ২৫ ভূঁয়া চিকিৎসক

ভ্রাম্যমান আদালতের হুমকি দিয়ে মাসোহারায় তুষ্ট সিভিল সার্জন অফিসের বিতর্কিত ডাঃ আব্দুস ছালাম!

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম সাক্ষাৎ ৩০০ টাকা, দ্বিতীয সাক্ষাৎ ২০০ (১৫ দিনের মধ্যে) টাকা, হোম কল এক হাজার টাকা। এমবিবিএস পাস না করেও এভাবেই নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে কক্সবাজার শহরের বিভিন্নস্থানে চেম্বার খুলে বসেছেন অন্তত অর্ধশত চিকিৎসক। তারা নামের সাইনবোর্ডে লিখেন এমএআইএপিএসএম (ইন্ডিয়া), ডিএএমএস (মাদ্রাজ, ভেলর), এমডিবিপিটি (ইন্ডিয়া), সিপিটি (ঢাকা) সহ বিচিত্র ধরনের ডিগ্রী লাগিয়ে চিকিৎসার নামে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা। তারা চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
তাদের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে বহু রোগী। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২৫ জন ভুঁয়া চিকিৎসকের নাম তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য চিঠি দেয়া দীর্ঘদিনেও সংশ্লিষ্ট অপচিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, ওই তালিকাটি ফটোকপি করে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের প্রসিকিউটর ২২ মামলার আাসামী বিতর্কিত ডাঃ আব্দুস ছালাম সংশ্লিষ্ট অপচিকিৎসকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে নগদ চুক্তিতে একটা দফারফা করেছেন। শুধু তাই নয়, ডাঃ আব্দুস ছালাম নাকি তাকে চাঁদা দেওয়া বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে জানিয়েও দিয়েছেন, সিস্টেম ঠিক থাকলে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত যাবে না এবং নির্বিঘেœ তারা ডাক্তারি করতে পারবেন।
কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে দেখা গেছে, শহরে ২৫ জন ভুয়া চিকিৎসক অবৈধ ও ভুয়া পদবী ব্যবহার কোন প্রকার ডাক্তারী সনদপত্র ছাড়া এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়া চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে তারা সাধারণ রোগীদের ফুসলাইয়া টাকা আত্মসাতের ঘটনাও ঘটিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে চক্রটি শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন ফার্মের্সি ও ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখেন। শুধু তাই নয়, তারা প্রচারপত্র, বিলবোর্ড এবং ভিজিটিং কার্ডে ওইসব ডাক্তারের নামের আগে পরে নানা পদবি উল্লেখ করে হরদম রোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকা ফিঃ আদায় করে ছাড়ছেন। শুধু তা নয়, নানান প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আবুল-তাবুল ঔষুধ লিখে দিয়ে মানব স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
জানা গেছে, এসব ভূঁয়া চিকিৎসকরা প্রয়োজন হোক আর নাই হোক প্রথমেই রোগীকে পরামর্শ দেন ৭-৮টি পরীক্ষা। ভয়-আতংকে বাধ্য হয়েই পরীক্ষাগুলো করতে হয় রোগীদের। এসব পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আবার বাধ্য বাধকতা থাকে। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক ছাড়া অন্য কোথাও পরীক্ষা করানো যাবে না। এখানকার অনেক চিকিৎসকই অর্থ বানিজ্যে লিপ্ত। এছাড়া অদক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়।
বিভিন্ন লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিভাগ গত ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে যে অভিযোগটি পাঠিয়ে তা আবার পরবর্তীতে ফটোকপি করে সংশ্লিষ্টদের হাতে হাতে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলা গেইটে এসএ মেডিকোতে ডাঃ গিয়াস উদ্দিন, পাওয়ার হাউস এলাকার তাশফী মেকাতে ডাঃ এসএম কুতুবী,ডাঃ সদর উপজেলা বাজারে ডাঃ এসকে মল্লিক, একই স্থানে তাশফী মেডিকোতে ডাঃ আরএস সেন গুপ্ত, কক্সবাজার বাস টার্মিনালে আরোগ্য নিকেতনে ডাঃ সুমন বড়–য়া, এসআরবি মেডিকোতে ডাঃ দীপংকর বড়–য়া, সমিতিপাড়ার রাণী ফার্মেসীতে ডাঃ প্রদীপপাল, শ্রাবন্ত্রী ফার্মেসীতে ডাঃ তাপসপাল, মা-মনি ফার্মেসীতে ডাঃ রাজীব পাল, সুর্বণা ফার্মেসীতে ডাঃ তুষার দাশ, খুরুস্কুলের গ্রামীণ ফার্মেসীতে ডাঃ মোর্শেদ আলম,রামু কলঘর বাজারে এসএ ফার্মেসীতে ডাঃ সাধন কৃষন সুশীল, লিংকরো শিল্পী মেডিকোতে ডাঃ হিরণ শর্মা, বাংলাবাজার ফারুক মেডিকোতে ডাঃ আবদুর রহমান, বাংলাবাজারে ডাঃ সুব্রত কুমার বিশ্বাস, রামু চেরাংঘাটা বাজারে হক মেডিকোতে ডাঃ শহীদ উল্লাহ, শহরের আলীর জাহাল সিকদার মেডিকোতে ডাঃ শাফায়েত উল্লাহ,একই এলাকায় প্রিয়াংকা মেডিকোতে ডাঃ পীযুষ, পিএমখালীর আল মদিনা মেডিকোতে ডাঃ হারুনুর রশিদ, বিমান বন্দর রোডের পশ্চিম নতুন বাহারছড়ায় ডাঃ সাবেরা বেগম, শহরের কালুর দোকান নিরাময় হারবালে ডাঃ আবদু সালাম, শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠে ডাঃ ফাতেমা আনকিস ডেইজী প্রকাশ ডেইজি সোলতানা, শহরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনস্থ কস্তুরী দাওয়া খানার ডাঃ সোলাইমান ও কক্সবাজার ওষুধ ঘর নিয়মিত চেম্বার করে আসছে।
এদিকে, গত ৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের মোঃ মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবদুচ সালাম ও ওষুধ তত্ত্বাবধায় হোসেন মোঃ ইমরান, ভ্রাম্যমান আদালত সহকারী সুমন দে ও পুলিশ এ অভিযান চালালেও অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুস ছালাম এসব ভূঁয়া চিকিৎসকদের দ্বারে কাছেও যাননি। জানা গেছে, ওইদিন তিনি চিকিৎসার নামে প্রতারণার দায়ে কস্তুরি দাওয়াখানা ও নিরাময় ইউনানী হার্বালের দুই কবিরাজকে লোক দেখানো শাস্তি দিয়ে দায় এড়িয়ে যান। 
সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে ডাঃ আব্দুস ছালাম উল্লেখিত ২৫ ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সহায়তা চেয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করলেও পরবর্তীতে নাকি বিতর্কিত উক্ত ডাঃ আব্দুস ছালাম তালিকাভূক্ত এসব ডাক্তারদের ডিসি অফিসের সিল মারা চিঠির কপি সরবরাহ করে হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার মাসিক-সাপ্তাহিক ও দৈনিক হিসেবে নাকি এসব ডাক্তারদের কাছ থেকে মাসোহারা তুলেন। তাই বছরের পর বছর ধরে এরা দাপটের সাথে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের আশপাশে নিজেদের নামে বিরাট বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে সহজ-সরল রোগিদের সাথে প্রতারণা করে চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন