নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যর্থ শিক্ষা প্রশাসন : নিষিদ্ধ কোচিং বাণিজ্য চলছেই

এম.আমান উল্লাহ: নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও থেমে নেই শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য। পরীক্ষাকে সামনে রেখে আবার দলবেঁধে কোচিং সেন্টারে ছুটছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলের সিলেবাস শেষ করার পাশাপাশি বাড়তি কিছু শিখতে কোচিংবাড়ি ধরনা দিচ্ছে শিক্ষার্থী আর সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা। শিক্ষা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন অমান্য করে চলছে এসব কোচিং বাণিজ্য। এদিকে, কোচিং ব্যবসায়ী শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছে সাহিত্যিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাস্টার জালাল আহমদ ও কক্সবাজার কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট মডেল স্কুলের সহকারি শিক্ষক পলাশ, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কুতুবী।
গত বছরের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ওই বছরের ২৫ জুন নীতিমালায় একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে সব বিষয়ের জন্য স্কুলভিত্তিক কোচিং ফি সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা আছে, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রধানের অনুমতিসাপেক্ষে অন্য স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। কোনো কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়েও কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না। এদিকে অভিভাবকদের অভিযোগ, কোচিং বাণিজ্য ঠেকাতে নীতিমালা প্রণয়নের দীর্ঘদিন পার হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং নীতিমালার নামে কাগজে-কলমে কিছু সুপারিশের মাধ্যমে শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচিংবাজদের দমনে গঠন করা হয়নি বিশেষ কোনো মনিটরিং কমিটি। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে কোচিং বাণিজ্য শুধু বাড়েনি বরং বেড়েছে কোচিং ফিও। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবং জামায়াতের হরতালসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোচিং সেন্টার কিংবা শ্রেণীশিক্ষকদের বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সন্তানরাও নিয়মিত যাচ্ছে কোচিং সেন্টারে। বাড়তি যতেœর দোহাই দিয়ে কর্মকর্তাদের সন্তানদেরও কোচিং সেন্টারে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে পর¯পরকে ঘায়েল করার তৎপরতা। অনেক শিক্ষক নিজে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থেকেও অন্য শিক্ষকদের কোচিংবাজ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষা প্রশাসনও এসব অভিযোগ খতিয়ে না দেখে অভিযোগকারী শিক্ষককের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঢালাওভাবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা করা হয়েছে। অনেক শিক্ষকের এমপিও বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যেসব শিক্ষক অধিক হারে কোচিং করাতেন তারা কোচিং করানো অনেকটা বন্ধ করেছেন। সবকিছুই একদিনে সম্ভব নয়। তবে কোচিং নিয়ে মন্ত্রণালয় একটা নাড়া দিয়ে এই পর্যায়ে এনেছে। কোচিং বন্ধে অভিভাবকদেরও ভূমিকা থাকতে হবে। শিক্ষার ধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য আর থাকবে না। সেই আধুনিক ধারা তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের এডিসি (শিক্ষা)এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের কোচিং বাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাথে সাথে অভিভাবকদেরও সতর্ক করে বলেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলের পাঠদানই যথেষ্ট। বর্তমান সরকার শিক্ষা নীতিমালা নিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের জন্য সে নিয়মই যথেষ্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন