হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থেকে গেলে আপনারা কক্সবাজার অচল করে দেবেন : সালাহ উদ্দিন আহমদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘২৪ অক্টোবরের পর বর্তমান সংসদের কোন বৈধতা নেই। এই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, এটা জনগণের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘যদি শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে আন্দোলন চলতেই থাকবে! জনগণের আন্দোলন চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে!’ 

তিনি মনে করেন, ‘শেখ মুজিবের পরিনতির জন্য আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব নিজেই দায়ি। শেখ হাসিনাও সেই পথে হাঁটছে।’ 
তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূণর্বহালের আহবান জানিয়ে আরো  বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলে হয়তো জনগণ শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করলেও করতে পারেন!’ 
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এক ফটিকছড়িতেই শেখ হাসিনা ভয় পেয়ে গেছেন। তাঁর ভয়, যদি ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাহলে গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে কোথাও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ 
তিনি মনে করেন, ‘যেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়বেন হয়তো সেদিন হাজার হাজার “ফটিকছড়ি” সৃষ্টি হবে।’ 
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সঠিক নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে কিনা, আওয়ামী লীগ নামে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে পারবেন কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে!’ 
তিনি শনিবার বিকালে কক্সবাজারে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল জেলা শাখার এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 
‘স্বৈরাচারি সরকার’ পতনে আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত হতে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি নির্দেশ দিতে না-ও পারি, যদি জানতে পারেন আমাদের কারাগারে নেয়া হয়েছে তাহলে আপনারা কক্সবাজারকে অচল করে দেবেন। হরতালের ডাক দেবেন। স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার জেলাকে ঢাকার সাথে বিচ্ছিন্ন করে রাখবেন।’ 
সালাহউদ্দিন আহমদ নেতা-কর্মীদের যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারিকে তাড়াতে চাই। আর মহাস্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে পূণর্বার দেশ স্বাধীন করার মতো প্রসব বেদনা সইতে হবে।’ 
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এই কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 
দুপুর না গড়াতেই একের পর এক মিছিল এসে শত শত শ্রমিক দল নেতা-কর্মী এসে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তন পরিপূর্ণ করে তুলেন। এক সময় নেতা-কর্মীদের এই বহর বাড়তে বাড়তে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পুরো প্রাঙ্গন ভরে যায়। বিকেল গড়াতেই নেতা-কর্মীদের ঢল প্রধান সড়ক পর্যন্ত পৌছে যায়। মিলনায়তনের বাইরে আটকে পড়া এসকল নেতা-কর্মীদের যাতে কর্মী সম্মেলনের আমেজ বঞ্চিত হতে না হয় তার জন্য মাঠেই বড় পর্দার আয়োজন করা হয়। শত শত নেতা-কর্মী মিলনায়তনে ঠাঁই না পেয়ে বড় পর্দায় অতিথিদের বক্তব্য শুনে উজ্জীবিত হন। 
কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রাঙ্গন ও বাইরে সরকার বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান এবং বিএনপির প্রতিষ্টানা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেষ্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়। 
প্রধান অতিথি সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের অবস্থান সংখ্যালঘু। শতকরা ৫ থেকে ১০ জন মানুষ আওয়ামী লীগ করে। 
তিনি বলেন, ‘শতকরা ৯০ জন মানুষ যেখানে বিএনপির উপর আস্থা রাখে সেই মানুষদের মন ভরানোর মতোই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বিএনপিকে।’ 
সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে ‘বাকশালের নতুন সংস্করণ’ দাবি করে বলেন, ‘শেখ মুজিবের মতোই শেখ হাসিনাও সংবিধানে বাকশালী ধারা সংযোজন করেছেন। নির্বাচন না হলে শেখ হাসিনাই কিয়ামত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন! কিন্তু জনগণ ২৪ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনাকে এক মুহুর্তের জন্যও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’ 
তাঁর মতে, ‘শেখ হাসিনা ও তাঁর পিতার গণতন্ত্র হলো “ধরে নেয়া হইল”, “মনে করা হইল” গণতন্ত্র! আমরা এই গণতন্ত্র মানি না।’ 
তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা টেকনাফ বন্দর করলাম। সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পেল। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হলো। আর এখন শুনি, টেকনাফ বন্দর দিয়ে ইয়াবা আসে। টেকনাফের একজন নাজায়েয সন্তানই এই কাজ করছে।’ 
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে পত্রিকায় দেখছি, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে! আওয়ামী লীগের এই আন্তর্জাতিকীকরণ পত্রিকাতেই।’ 
জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না। 
বিশেষ অতিথি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার রসগোল্লা খাওয়ার স্বপ্নকে ধুলিস্যাত করতে হবে।’ 
তিনি বলেন, ‘আমরা কি মানুষ নই, আমাদের কী রক্ত মাংস নেই। আমরা কতদিন এই নির্যাতন সহ্য করবো!’ 
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের এই সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবু সিদ্দিক ওসমানী, জেলা প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, জেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সভাপতি হামিদ উদ্দিন ইউসুফ গুন্নু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম. মোকতার আহমদ, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক আলী, জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, কক্সবাজার জীপ-কার-মাইক্রো মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। 
জেলা শ্রমিক দল সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ও কক্সবাজার পৌর শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উপজেলা, পৌরসভা শাখা সংগঠন থেকে আরও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার পৌর সভাপতি এস্তাক আহমদ, সদর উপজেলা সভাপতি নুর সুলতান, চকরিয়া উপজেলা সভাপতি এম এ জয়নাল আবেদীন, টেকনাফ উপজেলা সভাপতি মোকতার আহমদ, টেকনাফ পৌর শাখার আহবায়ক ফরিদুল আলম, উখিয়া উপজেলা সভাপতি নুরুল আলম কনট্রাক্টর, পেকুয়া উপজেলা সভাপতি মুজিবুল হক চৌধুরী, কুতুবদিয়া উপজেলা সভাপতি শাহাদত হোসেন ভূট্টো, চকরিয়া পৌর সভাপতি আবুল হোসেন মনু, কক্সবাজার শিল্পাঞ্চল শাখা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম ছোটন, রামু উপজেলা সভাপতি জাহেদুল আলম, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা সভাপতি রেজাউল করিম, মহেশখালী উপজেলা আহবায়ক একরামুল হক, মহেশখালী পৌর আহবায়ক মোহাম্মদ বাঁশি, কক্সবাজার পৌর শাখার সম্পাদক আহমদ হোসেন গুরা মিয়া, কক্সবাজার শিল্পাঞ্চল শাখা সম্পাদক খোরশেদ আলম, চকরিয়া উপজেলা সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন মোস্তাক, টেকনাফ উপজেলা সম্পাদক নুর উদ্দিন, টেকনাফ পৌর শাখার যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম বল্ল্যা, উখিয়া উপজেলা সম্পাদক জালাল আহমদ, কুতুবদিয়া শাখা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পেকুয়া উপজেলা সম্পাদক শাহিদ ইকবাল, চকরিয়া পৌর সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, রামু উপজেলা সম্পাদক জালাল উদ্দিন, মহেশখালী পৌর শাখার যুগ্ম আহবায়ক মকসুদ আহমদ ও মহেশখালী উপজেলা সম্পাদক খাইরুল হোসেন ভূট্টো, চকরিয়া পৌর শাখা সিনিয়র সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন প্রমূখ। 
অনুষ্টানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। হাফেজ মোহাম্মদ ইউনুছের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সূচনা করা হয়। বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে প্রধান অতিথি সালাহউদ্দিন আহমদ অনুষ্টানে আসেন। বিকাল ৪টা ৪৮ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। সন্ধ্যা ৫টা ১৯ মিনিটে তাঁর ৩১ মিনিটের সাংগঠনিক প্রেরণাসৃষ্টিকারি বক্তব্য শেষ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন