প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ছেন শেখ হাসিনা!

ডেস্ক রিপোর্ট : পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গত বৃহ¯পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব যান। ওমরাহ পালনের পর তিনি মদিনায় মহানবী (স.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। মদিনা থেকেই বিমানে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা, প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ ও সাংসদ দীপু মনি এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন।
এদিকে, পবিত্র ওমরাহ হজ পালন শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চমক দিতে পারেন বলে একাধিক নিশ্চিত করেছেন। আর ওই চমকে সবাই সত্যিকার অর্থেই চমকিত হতে পারেন। সেই রকম আভাসই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খুব ঘনিষ্ঠজনদের। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রই একথাটি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, সবাই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে চাইছেন। তার মনের মতো করে ও পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী নির্বাচন করতে চাইছেন যাতে করে ক্ষমতায় যেতে পারেন। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছেন। এই কারণে তিনি বিএনপিসহ বিভিন্ন দিক থেকে সমলোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। অন্য দিকে বিএনপির তরফ থেকে এমনভাবে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই ক্ষমতায় আসতে চাইছেন। সেইভাবে কাজ করছেন। এই জন্য তারা বিভিন্ন দিক থেকে চেষ্টা করছেন শেখ হাসিার ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য। ইতোমধ্যে মার্কিন কংগ্রেস ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টেও আগামী দিনে নির্বাচন নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। সব দলকে নির্বাচন বর্জন না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহিংসতা এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।সূত্র জানায়, হাসিনার কাছে এমনও খবর রয়েছে তাকে একা করে দেওয়ার মতো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ওই ষড়যন্ত্র করে দেশে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করার বিষয়টি অনিশ্চিত করে তোলা হতে পারে। এতে করে দেশ গভীর সংকটে পরতে পারে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার পাশাপাশি হানাহানি বাড়তে পারে। জানমালেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শেখ হাসিনা গভীরভাবে দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আর সেই কারণেই তাকেই নির্বাচন যথা সময়ে ও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই কারণে তিনি গভীরভাবে ভাবছেন শেষ পর্যন্ত কী করবেন।

ওই সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষপর্যন্ত এমন হতে পারে যে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পাওয়ার জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হবেন। এটা তিনি করলে স্বেচ্ছায়ই করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে নিদর্লীয় ব্যক্তি হিসাবে স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। সেটা করেই তিনি নির্বাচনে যেতে পারেন।

এদিকে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা সরকার প্রধানের পদ থেকে সরে গেলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি সরে গিয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দিলে হবে না, কারণ তিনি নিরপেক্ষ নন। দলীয় লোক। স্পিকার হয়েও দলের হয়ে ভোট চান তার এলাকায়। এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত তাকে যা করতে বলবেন তাই করবেন। সেই হিসাবে শিরীন শারমিনকে মেনে বিএনপি নির্বাচনে গেলে আর শেখ হসিনাকে সরকার প্রধান মেনে নির্বাচনে গেলে ফলাফল একই হবে। বিএনপিকে হারিয়ে দেওয়া হবে ইঞ্জিনিয়ারিং করে। এই জন্যই সেটা হবে না। তা ছাড়াও শিরীন শারমিনকে সরকার প্রধান করা হলে আইন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের হাতে এগুলো থাকলে তাদের কথা মতোই সব হবে। বিএনপি জয়ী হলেও পরাজিত ঘোষণা করা হবে। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেক কৌশল আছে, সেই রকম একটি কৌশল বের হবে। সেই সঙ্গে সরকার যদি এটা করতে রাজি হয় রাষ্ট্রপতিকে সরকার প্রধান করা হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে বর্তমান সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ করা হবে, সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন করা হবে, আনসার, বিজিবির প্রধানের পদেও পরিবর্তন আনা হবে, এছাড়াও প্রশাসনকে যেইভাবে সাজানো হয়েছে ওই প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। এছাড়াও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি সমঝোতা করেই নির্বাচনে যেতে চাইছে। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা নেই বলে তা হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে মানবে এমন খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছেও রয়েছে। তিনি এই মুহূর্তে নিজে সরে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার প্রধানের পদ ছাড়তে চাইছেন না। এছাড়াও এখন প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে যে যেখানে রয়েছেন নির্বাচনের আগে এর কোনো পরিবর্তন মানবেন না। যা যে অবস্থায় আছে সেটি মেনে ও বিএনপি যদি শিরীন শারমিনকে সরকার প্রধান মানেন সেই ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনা শেষপর্যন্ত ছাড় দিতে পারেন। যদিও তিনি কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে কোনো প্রকার ছাড় দিতে রাজি নন।

এদিকে ওই সূত্রের কথা ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করেই নির্বাচন করতে চাই। এই জন্য আলোচনাও করতে চাই। আলোচনা হলে এটা ঠিক হবে রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে আমরা একমত হবো কিনা। আমাদের অন্যান্য যে সব দাবি-দাওয়া আছে তা মানলে শেষপর্যন্ত গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সমঝোতা হতে পারে। তবে আলোচনাইতো হচ্ছে না। সমঝোতার কোনো অগ্রগতি ও উদ্যোগইতো নেই। এভাবেতো হয় না।

এদিকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ওই সূত্রের কাছে বিএনপির এই মনোভাবের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপিকে কি চাইছে যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার প্রধান করে দেওয়া হোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে। সেটা হলে কি তিনি রাজি হবেন নির্বাচনে যেতে। তিনি বলেন, শেষপর্যন্ত দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। বিএনপি যদি মনে করে নির্বাচন প্রতিহত করবে এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করবে সেটা সম্ভব হবে না বরং এতে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিএনপিকে সেটা না করে নির্বাচনে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বিএনপি মনে করছে তারা আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় চলে আসবেন। আওয়ামী লীগ ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সংবিধান মেনে নির্বাচন করলেও তাদেরকে উৎখাত করবেন এটা তারা যতটা সহজ ভাবছেন ততটা বোধ হয় হিসাবটা সহজ নয়।

তিনি বলেন, বিএনপি যেটাই ভাবুক না কেন আমাদের নেত্রী পবিত্র ওমরাহ হজে গেছেন, আল্লাহর ঘর থেকে তিনি কি দিক নির্দেশনা পান দেশে ফিরে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। বলা যায় না অনেক বড় চমক দিতে পারেন।

- সরেজমিন বার্তা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন