নেতাদের ব্যর্থতায় মাঠে নামছেন খালেদা!


ঢাকা: রাজধানীতে নেতারা রাজপথে না থাকায় দাবি আদায়ে নিজেই ‘মাঠে’ নামছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়া নেতারা আত্মগোপনে থাকায় আন্দোলন সংগ্রামের সিদ্ধান্ত একাই গ্রহণ করবেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছে চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বার বার নির্দেশ সত্ত্বেও দলের নেতাকর্মীরা বিশেষ করে সিনিয়র নেতারা রাজপথে নিখোঁজ। বিশেষ করে রাজধানীতে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচিতে কোনো নেতাকেই রাজপথে দেখা যায়নি। সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে হয়নি কোনো মিছিল বা পিকেটং।
এজন্য ঢাকা কেন্দ্রীক নেতাদের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না খালেদা জিয়া। সিনিয়র নেতাদের উপর অনেকটাই হতাশ তিনি। তবে হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এজন্য নিজেই রাজপথে থেকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলামেইলকে জানান, আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে সারাদেশের নেতাকর্মীরা রাজপথ দখলে রেখেছে। কিন্তু রাজধানীতে রাজপথ দখল তো দূরের কথা নেতাদের চেহারা দেখা মেলা ভার। ফলে আন্দোলন বেগবান করা সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য নগরের নেতারাই দায়ী।

চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা বলেন এবং রাজপথে থাকার ঘোষণাও দেন। অথচ কর্মসূচির দিন থাকেন আত্মগোপনে। তাদের মোবাইলও বন্ধ থাকে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দুই দফায় পালিত ১২০ ঘণ্টা ও সর্বশেষ ৮৪ ঘণ্টার হরতালে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামসহ সিনিয়র নেতাদের রাজপথে পাওয়া যায়নি। এজন্য ঢাকা মহানগর বিএনপি কেন্দ্রীক সিনিয়র এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ বেগম জিয়া। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়া ক্ষুদ্ধ অভিমত ব্যক্ত করেন।

সূত্র জানিয়েছে, নির্দেশ সত্ত্বেও রাজপথে না থাকায় বৃহস্পতিবার দলের পাঁচ নেতাকে শোকজ করেছেন বিএনপি প্রধান। তারা হলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব ও স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু। শোকজ করার পর প্রকাশ্যে বেরিয়েই সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারি বাবু বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তার হন। এছাড়া মহানগরের অনেক নেতাকে শোকজ লিস্টে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

গত ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে সবস্তরের নেতাকর্মীসহ জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারাও সেদিন রাজপথ দখল করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার কথা বলেন। অথচ দুই দফা ১২০ ঘণ্টার হরতালে তাদের মাঠে দেখা যায়নি। এরপর আবার হরতাল ঘোষণার পর দলের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে আটকের খবরে রাজধানীর সব নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। অঘোষিত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। তবে ৮৪ হরতাল শেষে খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে গেলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। হরতালে মাঠে দেখা না গেলেও অনেক নেতাকর্মীরাই গুলশান কার্যালয়ে ভীড় জমান। এদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, আ স ম হান্নান শাহ, আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নেতারা মাঠে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। আন্দোলন-সংগ্রামে এখন থেকে নিজেই ‘রাজপথ’-এ থাকার অভিমতও ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া অনুপস্থিত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশসহ তাদের নাম তালিকাবদ্ধ করারও নির্দেশ দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বাসা থেকে বের হয়ে বুধবার রাতে নিজ কার্যালয়ে যান। সেখানে আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরদিন হঠাৎ করেই জাতীয় প্রেসক্লাবে আসার ঘোষণা দেন বেগম জিয়া। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মেম্বারস লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় করেন তিনি। সিনিয়র সাংবাদিকদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন বিষয়ে মতামত শোনার পর মাত্র তিন মিনিট কথা বলেন খালেদা জিয়া।

সেখানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দাবি আদায়ে কোনোরকমভাবে আপোস করার সুযোগ নেই। আপোস করা মানে অন্যায় মেনে নেয়া।’

প্রথমেই খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আজ এখানে কোনো বক্তব্য দিতে আসিনি। আমি আপনাদের কাছ থেকে মতামত শুনতে এসেছি। সম্পূর্ণ অনির্ধারিত এই অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের কথা শুনলাম, অনেক কিছু জানলাম।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই দেশকে ভালোবাসেন। আপনারা সবসময় দেশের জন্য মানুষের জন্য আমাকে পাশে পাবেন। পদ-পদবী বড় নয়। যখন প্রথম শুরু করি তখন পদবী বড় ছিল না। আমি গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছি।’

এদিকে সূত্রে জানা গেছে, যখন আন্দোলনকে একটি চূড়ান্তপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, ঠিক তখনই দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের পালিয়ে থাকা নিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাই রাজধানীতে আন্দোলন জোরদার করতে শুধু দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ভরসা না রেখে মহানগর ও ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েরও অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। এই পাঁচ নেতাকে শোকজ করা একটা উদাহরণ। আগামী কর্মসূচিতে রাজধানীতে আন্দোলনে নির্দেশকৃত ভূমিকা পালন না করলে তাদেরও চিহ্নিত করার মাধ্যমে অধিষ্ঠিত পদ থেকে ‘বহিষ্কার’ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি মনে করি, চেয়ারপারসন রাজপথে নেমে এলে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তার উপস্থিতিতে রাজপথে জনতার ঢল নামবে। সময় হলে তিনি নিশ্চই রাজপথের আন্দোলনে শরিক হবেন।’ যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে আন্দোলন কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপি নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন তো বলেই দিয়েছেন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে কেউ না আসলেও তিনি একাই রাজপথে থাকবেন। চেয়ারপারসনের রাজপথে নেমে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক। রাজধানীর এসব বাকপটু অথচ ভীতু নেতাদের দিয়ে কিছু হবে না। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ম্যাডামকে রাজপথে থাকা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন