টেকনাফে বেদখল হয়ে যাচ্ছে পানি চলাচলের খাল: প্রাকৃতিক বির্পযয়ের আশংকা

টেকনাফ প্রতিনিধি:  টেকনাফে পানি চলাচলের খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, দীর্ঘ বছর ধরে খাল খননের কোন উদ্যোগ না নেওয়ার সুযোগে খালের নিকটস্থ প্রভাবশালীরা রীতিমত খাল দখলের প্রতিযোগীতায় নেমেছে। খালের উভয় পাশ বেদখলের কারণে বৃষ্টি হলেই খালের কূলবর্তী গ্রাম সমুহ প্রতিনিয়ত পানির মধ্যে ডুবে থাকে।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের থাবায় খাল গুলি নিজস্বকীয়তা হারিয়ে অনেকটা ভরাট জমিতে রুপান্তর হয়ে গেছে। খালের পানি বের হওয়ার পথ তথা সংশ্লিষ্ট স্লইচ গেইট আটকিয়ে বিশেষ ভাবে মাছ চাষ, বেদখল, ভরাট, ও গতিবিধি ঠিক না থাকায় বর্ষার বৃষ্টিতে টেকনাফের অসংখ্য গ্রাম পানিতে ডুবে থাকে। ঘোর বর্ষায় এসব এলাকা পানিতে টইটুম্বুর হয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ফসল সহ মারাত্মক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। বিগত ২০১০ সনের ১৫ জুনের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস ও পানির ঢলে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি সহ কোটি কোটি টাকার মৎস্য ঘের এবং ফসলের মারাত্মক ক্ষতি মূলত গ্রামীণ খাল বেদখল হওয়াকে সচেতন মহল দায়ী করছে। জরুরী ভিত্তিতে খাল খনন কর্মসূচী চালুর মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাতে থেকে এসব এলাকাকে রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি খাল দখলদার তথা পরিবেশ ও মানবতার শত্রুদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে এসব এলাকা সমুহকে দুর্যোগের ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক কর্মসুচী এসব খালের প্রাণ অনেকটা ফিরে পাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হ্নীলার মৌলভী বাজার, ওয়াব্রাং, হ্নীলার ১নং স্লুইস গেইট খাল, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী আমিরী খাল, আলীখালী, লেদা, মুচনী ছুরী খাল, জাদীমুরার জাদীর খাল, দমদমিয়া মগর ছরা খাল, চেকপোষ্ট খাল, কেয়ারী সিন্দাবাদের পাশের খাল। হোয়াইক্যংয়ের সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, পূর্ব সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, নয়াবাজার চাঙ্গিরী খাল, মিনা বাজার, ঝিমংখালী, নয়াপাড়া, কাঞ্জর পাড়া, উনছিপ্রাং, রইক্ষ্যং, কেয়ামুখী খাল, হোয়াইক্যং, ঘিলাতলী খাল। বাহারছড়ার রাজারছড়া, নোয়াখালী, বাগঘোনা, কচ্চপিয়া, বড় ডেইল, ডাক ছরা, মারিশ বনিয়া, মাথা ভাঙ্গা কবর স্থানের পাশের খাল, মাথা ভাঙ্গা পরিষদের উত্তর পাশের খাল, বাইন্যা পাড়া, হলবনিয়া, গর্জন বনিয়া, জাহাজপুরা বড় খাল, হাজম পাড়া, শীল খালী, বড় শীল খালী, তারের ছড়া খাল, কাদুরার ছড়া খাল, রাইল্যা ছরা খাল, মরিচ্যা ছরা খাল, রকিম্মার ছরা খাল, শামলাপুর খাল। টেকনাফের হাবির ছড়া, মিঠাপানির ছড়া, দরগার ছড়া, উত্তর লম্বরী, দক্ষিণ লম্বরী, মহেশখালীয়া পাড়া, ছোট হাবিব পাড়া, নাজির পাড়া, মৌলভী পাড়া, জাহালিয়া পাড়া, হাতিরায় ঘোনা, করাচী পাড়া, কায়ুক খালী খাল, হেচকে খাল, নাইট্যং পাড়া, কেরুণতলী, জাইল্যা খাল। সাবরাংয়ের জব্বার সিকদার খাল, বাহারছড়া খাল, উঃ নয়াপাড়া, মুন্ডার ডেইল, মন্ডল পাড়া, ও মগপাড়া খাল কোন কোন ভাবে বেদখল হয়ে গেছে। খাল সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এলাকা ভিত্তিক মাস্টার প্লানের মাধ্যমে মৃত এসব খালকে জীবন দানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সমাজের সব পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শফিক মিয়া বলেন, আসলে অধিকাংশ খালের স্বাভাবিকতা নেই। খাল খনন করা খুবই টাপ কারণ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। খাল খনন কর্মসুচী চালু করতে আপার লেভেলে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) সেলিনা কাজী বলেন, বেদখল হয়ে যাওয়া খাল দখলমুক্ত করতে শ্রীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। দখলদার যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন