টেকনাফে মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের হিড়িক : দালালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

কক্সবাজারবাণী ডেস্ক: টেকনাফে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের হিড়িক পড়েছে। অসংখ্য দালাল এখনো ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় প্রতিনিয়ত সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে শত শত লোক হয়রানী ও সলিল সমাধি ঘটেছে। তাছাড়া আবার অনেকেই অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে বলে পারিবারিক সুত্র অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানাযায়, এসব অবৈধ মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা দিনের পর দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক আদম পাচারে হিড়িক পড়ায় সচেতন মহলকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে। চিহ্নিত এসব মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায ক্যাম্পে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, মোচনী-লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দালালের খপ্পরে পড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত যুবক সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়া পাচার হয়ে থাকে। প্রতি বছর অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে শত শত লোকের সলিল সমাধিও ঘটেছে। এদের অধিকাংশ মালয়েশিয়া যেতে পারলেও অনেকে আবার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব দালাল চক্র এলাকার সাধারণ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে জিম্মিদশায় নির্যাতন করে নানা ভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালালদের হাতে জিম্মী ঐসব লোকেরা পরিবারের সাথে যোগযোগ পর্যন্ত করতে পারছেনা। স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এসব পরিবারে এখন নেমে এসেছে কাল ছায়া। পরিবারগুলো স্বজন হারানোর বেদনায় দু’চোখের জল ফেলে নিয়মিত কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী করে তুলেছে। দালাল চক্রের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিভিন্ন প্রকার আশ্বস্থ করেও কোন প্রকার সুরাহা দিচ্ছেনা বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে। এছাড়া অনেকে আবার বিভিন্ন দেশে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় দালালদের সাথে সেদেশের মানব পাচারকারীর সাথে সখ্যতার সুবাধে পরিবার পরিজনের কাছ থেকে কন্টাকের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা মোটা অংকের টাকা আদায় করে চলে যাওয়া বাংলাদেশী নাগরিকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার নানান প্রতারাণার অভিযোগ উঠেছে। লেদার গিয়াস উদ্দিন, কামাল, সিরাজ, নুর কবির, রশিদ, আবুল কালাম, রশিদ মিস্ত্রী, সাদ্দাম, হাছন, হোছন, মোখতার, মুফিজ সহ আরো অনেকে যারা ক্যাম্পের দালাল ডা: কবীরের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়ে ১ বছর ধরে এখনো খবর নেই। আবার অনেকের আত্মীয় স্বজনরা দালালের নির্যাতনের ভয়ে মিডিয়ার সামনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজেদের সন্তান হারার কাথা এ প্রতিবেদককে জানান। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে মানব প্রচারে জড়িতরা হলেন, মোচনী নয়াপাড়া-২ ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আমান উল্লাহ, বি ব্লকের মলই ছানা উল্লাহ, সি ব্লকের আব্দুস শুক্কুর প্রকাশ কালা শুক্কুর, মলই নুরুল হক, দাড়ি মাআচ্ছালাম, গড ফাদার আমান উল্লাহ, নাজিম উদ্দিন, গুরা মিয়া, নুরুল হাকিম কাপড় বেপারী, মাষ্টার আমির হাকিম, শাহা আলম, নুরুল বশর, মলই কামাল, ই ব্লকের মাষ্টার হাবিবুল্লাহ, এইচ ব্লকের মুহামুদুল হাসান, হাসন, বি ব্লকের আমান উল্লাহ, সি ব্লকের চেয়ারম্যান ছাবু। লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক এ ব্লকের ডাঃ কবীর, দক্ষিণ আলীখালী এলাকার গবী সোলতানের পুত্র মলই মোহাম্মদ মিয়া, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের জাহেদ, সি ব্লকের নাজির হোছন, ডি ব্লকের আব্দু করিম, ই ব্লকের মো: শফি মাঝি, ই ব্লকের নুরু, বি ব্লকের আবু ছিদ্দিক, সি ব্লকের বাইল্যা ও হামিদ হোছনের নেতৃত্বে বিশাল একটি সিন্ডিকেট মাসের পর মাস এভাবে মালয়েশিয়া আদম পাচার করে আসছে। হ্নীলার রঙ্গিখালী এলাকার মৃত আলী হোছনের পুত্র ঠান্ডু মিয়া, নাদির হোছনের পুত্র রশিদ আহমদ, মৃত আব্দুল হাকিমের পুত্র দুদু মিয়া, সাজেদার বাপের পুত্র আব্দুল্লাহ, কালা চাঁন্দের পুত্র জাফর আলম বাদিক্ক্যা, মৃত বদিউর রহমানের পুত্র নুর মোহাম্মদ, মৃত সুলেমানের পুত্র কালু। জাদীমুরা এলাকার বার্মায়া জাফর, লেং কবির, বাছা মিয়ার পুত্র ছৈয়দ হোছন, তাজর মুল্লুকের পুত্র নুরুল ইসলাম, মলই আব্দু সালাম।হ্নীলা কাষ্টমস ঘাট এলাকার আনসার হোসনের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম, বার্মাইয়্যা শামশু, পশ্চিম সিকদার পাড়া এলাকার আবু তাহের সওদাগর, গিয়াস উদ্দিন। শাহপরীরদ্বীপ ধলো হোছন, ইউনুছ, শরীফ হোছন, নুর হোসন, মো: ইসমাঈল, মো: ফিরুজ মিয়া, আবু তাহের, দেলোয়ার হোছন, আবুল কালাম, শাহাব মিয়া, হাফেজ উল্লাহ, ছৈয়দুল্লাহ, জাহেদুল্লাহ, মুজিবুল্লাহ, ফয়েজুল্লাহ মাঝি, নুর হাকিম মাঝি, মো: ইলিয়াছ মাঝি। সাবরাং এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র আব্দুল হামিদ মাঝি, ইমাম হোছন, ঝিমা কাশেম। টেকনাফ হাবিব ছড়া এলাকার মো: শফির পুত্র মো: হোছন। উত্তর লম্বরী এলাকার মো: তৈয়ব। কাটাবনিয়া এলাকার বাগু সহ আরো অসংখ্য আদম পাচারকারী।
এদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় ডজন ডজন মানব পাচার মামলা থাকলেও কোন অদৃশ্য শক্তির ইশাারায় তারা ধরাছোয়ার বাইরে থাকে এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ দিকে আদাম পাচারে জড়িত এসব গডফাদাররা আদাম পাচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করলেও একনো শত শত মা ও শিশুর চোখের পানি ঝরছে। এদিকে টেকনাফ থানার ওসি ফরহাদ ক্যাম্প কেন্দ্রীক দালাল চক্রটির বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযানের কাথা ব্যক্ত করে বলেন, দালাল যতই রাগব বোয়াল হউক না কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকবে। জানতে চাইলে ক্যাম্পের পুলিশ ইনস্পেক্টর সেলিম খাঁন বলেন, মালয়েশিয়ার দালালের ব্যাপারে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নয়াপাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ (ম্যাজিষ্ট্রেট) ডঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, প্রলোভনের মাধ্যমে নিরীহ লোকদের অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নেওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্র ক্যাম্পে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী ও থানা পুলিশের সহযোগীতায় এসব দালালদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টেকনাফ-হ্নীলার সচেতন মহল মনে করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক মালয়েশিয়ার দালালের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান জোরদার করলে অবৈধ পথে মানব পাচার ঠেকানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসন-জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের সৎ আন্তরিকতা প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন